ট্রাম্পের নির্দেশের আরেকটি ক্যারিবীয় জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলা, নিহত ৩
ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সামরিক বাহিনী আরেকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিষয়ক সচিব পিটার ব্রায়ান হেগসেথ জানান, মার্কিন সাউদার্ন কমান্ড একটি 'মাদক-চোরাচালান জাহাজে' প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।
হেগসেথ বলেন, “অন্যান্য সব জাহাজের মতোই এই জাহাজটিও আমাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী অবৈধ মাদক পাচারে জড়িত ছিল, পরিচিত মাদক-পাচার রুট ধরে চলাচল করছিল এবং মাদক বহন করছিল।” তবে তিনি এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
পিটার ব্রায়ান হেগসেথ আরও জানান, 'আন্তর্জাতিক জলসীমায়' এই অভিযানটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে পরিচালিত হয়েছে।
সাউদার্ন কমান্ড সেপ্টেম্বরের শুরুর পর থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে অন্তত ১৫টি এমন হামলা চালিয়েছে, যাতে মোট অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন।
সম্প্রতি এসব হামলার হার দ্রুত বেড়েছে। কয়েক সপ্তাহে একবারের বদলে এখন মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দুইবার জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে।
গত আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে প্রায় ৬,০০০ সেনা, কয়েকটি ডেস্ট্রয়ার, অ্যান্টি-সাবমেরিন বিমান, যুদ্ধজাহাজ, পারমাণবিক সাবমেরিন ও এ-৩৫ স্কোয়াড্রন মোতায়েন করলে ক্যারিবীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
অক্টোবরের ২৪ তারিখে পেন্টাগন ঘোষণা করে যে, ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ টুয়েলভ (CSG-12)-কে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাউদার্ন কমান্ডের অধীনে পাঠানো হয়েছে। তারা দাবি করে, এই গ্রুপ মোতায়েনের উদ্দেশ্য কেবল “অবৈধ কার্যকলাপ শনাক্ত, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিহত করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড-এর নেতৃত্বে থাকা এই নৌবহর মোতায়েনের ফলে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক সদস্যের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০,০০০ জনে দাঁড়াবে।
অক্টোবরের ১৫ তারিখে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএ অপারেশন অনুমোদন করেছেন এবং সেখানে স্থল অভিযানের সম্ভাবনা বিবেচনা করছেন।
তিনি বলেন, “আমরা সমুদ্রপথে এটি প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ করেছি। এবার আমরা স্থলপথেও থামাবো।” যা দিয়ে তিনি তথাকথিত মাদক-পাচারকেই বোঝান।
এই বাড়তি সামরিক উপস্থিতি ওয়াশিংটনের সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র ও 'ভেনেজুয়েলায় আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি' নিয়ে উদ্বেগ আরও তীব্র করেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, ভেনেজুয়েলা সরকার দেশে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছে, সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করেছে এবং ওয়াশিংটনের "অপ্রত্যাশিত সামরিক আগ্রাসন" এর মোকাবিলায় জাতীয় মিলিশিয়া মোতায়েন করেছে।
২৪ অক্টোবর তারিখে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এক জাতীয় সম্প্রচারে বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন একটি নতুন চিরস্থায়ী যুদ্ধ তৈরি করছে।”
তিনি যোগ করেন, “তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আর কখনও কোনো যুদ্ধে জড়াবে না, অথচ এখন নিজেরাই এক যুদ্ধ তৈরি করছে, যা আমরা প্রতিহত করব।”
মাদুরো বলেন, “তারা একটি অদ্ভুত, নোংরা, অপরাধমূলক এবং সম্পূর্ণ ভুয়া কাহিনি তৈরি করছে। ভেনেজুয়েলা এমন একটি দেশ, যেখানে কোকেন উৎপাদন হয় না।”
প্রমাণ ছাড়াই মাদক পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি ট্রাম্প একই রকম অভিযোগ করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো'র বিরুদ্ধেও।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ায় USAID তহবিল স্থগিত করেছে, যুক্তি দেখিয়ে যে, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা মাদকের প্রধান কেন্দ্র।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা, বিশেষত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ওয়াশিংটন তার সামরিক অভিযান ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে কলম্বিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে পারে।
শুক্রবার (অক্টোবর ২৫) এক্স-এ প্রকাশিত পোস্টে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো জানিয়েছেন, তার সরকার জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব উত্থাপনের কথা বিবেচনা করছে, যাতে ক্যারিবীয় অঞ্চলে তথাকথিত মাদক পাচারবিরোধী মার্কিন বিমান হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো হবে।
তিনি এই অভিযানের 'অবৈধ' প্রকৃতি তুলে ধরে প্রশ্ন তোলেন, “ক্যারিবীয় দেশগুলো এবং তাদের নাগরিকরা এই আগ্রাসনকে কীভাবে দেখছে?”
পেত্রো বলেন, “কলম্বিয়াকে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব দাখিল করতে হবে, যাতে ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।”#
পার্সটুডে/এমএআর/২
