তেহরানে ইরান–বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সেমিনার: নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত
-
(বাঁ থেকে) ড. শরীফুল আলম, হোসেইন ইব্রাহিমি ও ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব অধ্যয়ন অনুষদে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বুধবার অনুষ্ঠিত এই বিশেষজ্ঞ বৈঠকের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ অধ্যয়ন বিভাগ’। এতে দুই দেশের শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক ও গবেষকরা অংশ নেন।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও শিল্প উন্নয়নে ইরান গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে। পেট্রোকেমিক্যাল, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্যশিল্প খাতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। একইসঙ্গে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ড. ইসলাম রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের পাশাপাশি একটি কৌশলগত অক্ষ হিসেবে বৈজ্ঞানিক ও একাডেমিক কূটনীতিকে শক্তিশালী করার কথা বলেন। এই সেমিনারকে দুই দেশের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কূটনীতিকে শক্তিশালী করার সূচনা হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
সেমিনারে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সাবেক সচিব ড. শরিফুল আলম দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে তার বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। তিনি তার বক্তব্য শুরু করেন ফারসি কবি হাফিজ শিরাজীর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে এবং ইরানকে ‘জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার কেন্দ্র’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ড. আলম বলেন, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের সময় থেকেই বাংলাদেশের জনগণ ইরানের পাশে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের হামলার নিন্দায় বাংলাদেশের অবস্থানকে দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. আলম জানান, বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার, যেখানে পারস্পরিক সম্ভাবনা অনেক বেশি। তিনি জ্বালানি, ইস্পাত, হালাল খাদ্যশিল্প ও শিল্পযন্ত্র খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরেন।
সেমিনারে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী উদ্যোক্তা জুনাইদ মসরুর খান বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট এবং দেশটি এখন পরিষ্কার জ্বালানির দিকে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইরানের জলবিদ্যুৎ ও বাঁধ নির্মাণ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হতে পারে—বিশেষত ভারতের সঙ্গে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা ও ব্রহ্মপুত্র নদসংক্রান্ত জলবিরোধের প্রেক্ষিতে।
এছাড়াও তিনি পেট্রোকেমিক্যাল, স্বাস্থ্যসেবা (বিশেষ করে ক্যান্সার চিকিৎসা ও যৌথ প্রকল্প) এবং পোশাক শিল্পে সহযোগিতার সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক স্থানান্তরের প্রতিবন্ধকতা থাকলেও, বাস্তবসম্মত উপায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ খুঁজে বের করা সম্ভব।
সেমিনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় উপমহাদেশ অধ্যয়ন বিভাগকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। দুই দেশের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক যৌথ গবেষণা ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ বাড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
সেমিনারের শুরুতে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক হোসেইন ইব্রাহিমি বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অনলাইন দর্শকদের স্বাগত জানান। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন।#
পার্সটুডে/এমএআর/৮