পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থকে গ্রেফতার করল ‘ইডি’, রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা ‘এসএসসি’ মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের মহাসচিব, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আজ (শনিবার) ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রাজ্যের পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তার নাকতলার বাড়িতে যায় ইডির একটি টিম। সারা দিনের পাশাপাশি রাতভর মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অবশেষে আজ (শনিবার) সকাল ১০টা নাগাদ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ইডির দাবি, দক্ষিণ কোলকাতায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২১ কোটি টাকার বেশি নগদ পাওয়া গেছে। ওই বাড়ি থেকে ২০টি মোবাইল ফোনও পাওয়া গেছে বলে ইডির দাবি। এ ছাড়াও ৫৪ লাখ টাকার বিদেশি মুদ্রাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাওয়া গেছে ৭৯ লাখ টাকার গয়নাও। ইডি সূত্রের খবর, ওই টাকা স্কুলে বেআইনি নিয়োগে নেওয়া ঘুষের অংশ বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে তারা।
এ ব্যাপারে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘একজন মহিলার খোঁজ পাওয়া গেছে, যার তিনটে ফ্ল্যাট এবং তার বাড়িতে ২১ কোটি টাকা ইত্যাদি পাওয়া গেছে। এবং আরও একজন মহিলার খোঁজ পাওয়া গেছে, যার সঙ্গে সম্পর্ক মোনালিসা তার নাম, একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়ান, শান্তিনিকেতনে থাকেন। তার নামে ১০টা ফ্ল্যাট আছে। তার বাংলাদেশের কানেকশন আছে। বাংলাদেশে যাওয়া আসার অনেক তথ্য, বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ছবি, তার ব্যাগ আছে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ইত্যাদি আছে। এ ধরণের একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি!’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বাঙালি একদিন মাথা উঁচু করে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই বাঙালিকে আজকে চোর বলা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের গোটা সমাজ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। মন্ত্রী-নেতা-এমএলএ-এমপি সবাই দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের তদন্তে আছে। এই অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চাচ্ছে। বেশীরভাগ নেতা-মন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। যথা সময়ে সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসবে। এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আমরা আশা করব দোষীরা সাজা পাবে।’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম বলেছেন, আরও আগে তল্লাশি অভিযান চালানো হলে আরও বেশি টাকা উদ্ধার হতো। অনেক টাকা ইতোমধ্যে বিদেশে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল চাকরিকে নিয়ে দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সেজন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ময়দানের আন্দোলন, সংগ্রামও জারি থাকবে।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির অনুপ্রেরণায়, উন্নয়নের জোয়ারে শুধুই লুট, দূর্নীতি আর তোলাবাজি। সবে ২০ কোটি। বাকিটা উদ্ধার কবে? কড়ায় গন্ডায় হিসাব চাই। ‘নবান্ন’ (রাজ্য সচিবালয়) জুড়ে কুলাঙ্গারের দল। ঝেটিয়ে বিদায় করার বিকল্প কি?’
অন্যদিকে, তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল বলেছেন, ইডি যে টাকা উদ্ধার করেছে, তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এই তদন্তে যাদের নাম আসছে, এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব তাদের বা তাদের আইনজীবীদের। কেন দলের নাম জড়িয়ে প্রচার চলছে, দল নজর রাখছে। যথাসময়ে বক্তব্য জানাবে#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।