আগস্ট ২৩, ২০২৩ ২০:২৯ Asia/Dhaka
  • ভারতের পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্ক, আরব বিশ্বে সমস্যা বৃদ্ধি

ভারতের কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার পেঁয়াজ রফতানির উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আরব বিশ্বের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

খুচরা মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আসন্ন উৎসব মরসুমে দেশীয় সরবরাহ বাড়াতে গত ১৯ আগস্ট ভারত পেঁয়াজ রফতানির উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানির ওপর শুল্ক প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো  ব্যবসায়ী অন্য দেশে পেঁয়াজ রফতানি করলে সরকারকে ৪০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ভারতের পদক্ষেপের প্রভাব শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নেই। জানা গেছে, ভারতের এই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করা আরব বিশ্বের দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যা মূলত আমদানি নির্ভর। ভারতের এই পদক্ষেপের পর উপসাগরীয় দেশগুলোর স্থানীয় বাজারগুলোকে পেঁয়াজের দামের সম্ভাব্য ওঠানামার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

পাবলিক পলিসি রিসার্চের অর্থনীতিবিদ অনুপম মনুরকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু রান্নায় পেঁয়াজ একটি মৌলিক খাদ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই গম ও চালের সরবরাহে ঘাটতির কারণে বাজারে ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের রফতানি শুল্ক উপসাগরীয় দেশগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে।

অবজারভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটির মতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৯ সালে ভারত থেকে ২৭.৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পেঁয়াজ কিনেছে। ২০২০ সালে দেশটি ৩৪.৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পেঁয়াজ কিনেছিল। ২০২১ সালে তারা ভারত থেকে ৪১.৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পেঁয়াজ  আমদানি করেছে। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতীয় পেঁয়াজের চতুর্থ বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ ছিল।

হর্টিকালচার প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অজিত শাহের মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে, ভারত থেকে সর্বাধিক পেঁয়াজ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধির কারণ হল, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতীয় পেঁয়াজের কম দাম। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা আরব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে  সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত, ইরাক, সৌদি আরব এবং বাহরাইন।

 জানা গেছে, ভারত পেঁয়াজের ওপর রফতানি শুল্ক আরোপ করায় আরব দেশগুলোতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে। এবং এসব দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ভোক্তা এবং ব্যবসা উভয়কেই প্রভাবিত করবে।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মুদাসির কামারের মতে, উচ্চ রফতানি শুল্কের কারণে আরব দেশগুলোর আমদানি বিল অল্প সময়ের জন্য বাড়লেও ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে না। কারণ, খাদ্য আমদানি ওঠানামা করে এবং এটি বিভিন্ন দেশের কৃষি উৎপাদন ও বাজার-নিয়ন্ত্রণ নীতির উপর নির্ভর করে। ভারত সরকার যে ভারী রফতানি শুল্ক আরোপ করেছে তা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০২২ সালেও ভারত দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গমের উপর রফতানি শুল্ক আরোপ করেছিল। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারত বাসমতি নয় এমন চাল রফতানি নিষিদ্ধ করেছিল। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৩  

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ