অসমে মুসলিম ইস্যুতে বদরউদ্দিন আজমলের মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া
-
মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এবং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
বিজেপিশাসিত অসমে এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল মুসলিম ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন অভিযোগে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল (শুক্রবার)এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল বলেন, ‘তিনদিন মিয়াঁরা না থাকলে গুয়াহাটি কবরস্থান হয়ে যায় এটা সবাই জানেন। মিয়াঁরা না থাকলে গুয়াহাটির মানুষ মাছ, শাক-সব্জি খেতে পারেন না। মিয়াঁ ছেলেমেয়েরা রাজমিস্ত্রির কাজ না করলে মানুষ ঘরবাড়ি বানাতে হিমশিম খাবেন।’
মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে টার্গেট করে আরও বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী দশ বছর মিয়াঁদের কাছে ভোট চাইবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। আসলে মিয়াঁরা তাকে আগামী একশো বছর ভোট দেবেন না। এরপরই মাওলানা আজমল বলেন, ‘ইসলামকে এত সহজে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীতে কারও সেই শক্তি নেই। ফেরাউন, আবু জাহেল পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী তো কোন ছার। ভারতে রাজত্ব করতে হলে মুসলমানদের হাত-পা ধুয়ে পানি খেতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, আজমল যে ‘বিজেপির এজেন্ট’ সেটা অনেক আগেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিজেপির সুবিধা করে দিতেই তিনি সাম্প্রদায়িকতায় ইন্ধন জোগান।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রিপুন বরা মাওলানা আজমল এবং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তের নাম না করে তাদেরকে চাচা-ভাতিজা উল্লেখ করে বলেন, চাচা-ভাতিজা মিলেমিশে রাজনীতির খেলা খেলছেন। একজন হিন্দুদের ঠিকা নিয়েছেন, অন্যজন মুসলিমদের। কৌশলটা স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী মিয়াঁদের বিরুদ্ধে বলে হিন্দু ভোট সংগঠিত করবেন। অন্যদিকে, আজমল মুসলিমদের তাতাবেন যাতে শেষ পর্যন্ত লাভ হয় বিজেপির। এটাই চাচা-ভাতিজার বোঝাপড়ার অঙ্ক বলেও মন্তব্য করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রিপুন বরা।
রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি ভবেশ কালিতার মতে’- লাখ লাখ অসমিয়া যুবক-যুবতীর আজমলের মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে দেখিয়ে দিতে হবে, মিয়াঁরা না থাকলে গুয়াহাটি কিংবা অসম অচল হয়ে পড়বে না। ‘মিয়াঁরা যা খুশি করুক। শুধু আমাদের জমি দখল বা মেয়ে-বউদের টেনে নিয়ে ধর্মান্তরিত না করলেই হল’ মন্তব্য করেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি ভবেশ কালিতা।
কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার অভিযোগ- ‘মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এবং বদরউদ্দিন আজমল নির্বাচনের আগে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী এ ধরণের কথা বলেন হিন্দু ভোট মেরুকরণের জন্য।’

এ প্রসঙ্গে আজ (শনিবার) অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। কিন্তু রাজনৈতিক বক্তব্যের সময়ে যে শব্দ চয়ন করা হয়, সেই শব্দ চয়নে যাতে অন্যের গায়ে আঘাত না লাগে, ধর্মে আঘাত না লাগে, বিশ্বাসে আঘাত না লাগে, সামাজিক অবস্থানের ওপর আঘাত না লাগে সেটা মুখ্যমন্ত্রীর যেমন চিন্তা করা উচিত বিরোধী দলের নেতা বিশেষ করে বদরউদ্দিন আজমলেরও সেরকম ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল সাহেবের বক্তব্যের ধারায় মনে হচ্ছে সেটা তিনি মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এরকম মন্তব্য করা উচিত নয়। একজন মানুষের পক্ষে উচিত নয়, একজন ধর্মীয় নেতার জন্য উচিত নয়, একজন রাজনীতিবিদের জন্যও উচিত নয়। কেননা আমরা বিভিন্ন ভাষা, গোত্র, ধর্মের মানুষ পারস্পারিক ভাবে বসবাস করছি হাজার বছর থেকে। সেজন্য সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয়, চক্রান্তকারীরা, এবং সমাজবিরোধী উপদান যাতে সেখান থেকে ফায়দা না নিতে পারে, আমাদের সকলের সেদিকে নজর রেখে বক্তব্য দেওয়া উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।