স্বেচ্ছায় পঞ্চগড়ে গিয়ে নিজেই নিজের পায়ে শেকল জড়ান
খতিব মোহেববুল্লাহ নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন: পুলিশ
-
মুফতি মোহেববুল্লাহ মিয়াজী অপহরনের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ
বাংলাদেশের গাজীপুরের টঙ্গীর আলোচিত খতিব মুফতি মোহেববুল্লাহ মিয়াজী অপহৃত হননি বরং তিনি নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। গাজীপুর থেকে নিজ ইচ্ছায় বাসে চড়ে পঞ্চগড় গিয়ে নিজের পায়েই শিকল জড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি।
আজ (মঙ্গলবার) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান। সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকা থেকে হাঁটতে বেরিয়ে খতিব মোহেববুল্লাহ (৬০) অপহৃত হন বলে অভিযোগ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, একটি অ্যাম্বুলেন্সে ৪-৫ জন লোক তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় একদিন ও একরাত নির্যাতনের পর তার দাড়ি কেটে দেওয়া হয় এবং কাঁচের বোতল দিয়ে শরীরে আঘাত করা হয়। শেষে পঞ্চগড়ে একটি গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে পা বেঁধে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। তার মোবাইল ফোন ও সিম কার্ডও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে স্থানীয়রা '৯৯৯'-এ ফোন দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
গত ২৪ অক্টোবর মুফতি মোহেববুল্লাহ নিজেই টঙ্গী পূর্ব থানায় এই এজাহার দায়ের করেন।
তবে মামলাটির তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান জানান, তদন্তে দেখা যায়, ভুক্তভোগী তার বাসা থেকে একা হেঁটে বের হন এবং কোথাও কোনো অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল দেখা যায়নি। বাদী তার এজাহারে ৪-৫ জন ব্যক্তি তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও ওই সময়ের তিন ঘণ্টার মধ্যে সেখানে সিসি ক্যামেরায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা যায়নি। প্রযুক্তির সহায়তায় ২২ অক্টোবর সকাল ১১টা ৩৬ মিনিটে তার অবস্থান ঢাকার সোবহানবাগ এলাকায় শনাক্ত করা হয়।
পুলিশ জানায়, মোহেববুল্লাহ মিয়াজী এরপর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের টিকিট কেটে দুপুর ২টায় পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রাপথে বগুড়ার শেরপুরে পেন্টাগন হোটেলে বাস বিরতি দিলে তিনি নেমে নামাজ পড়ে আবার বাসে ওঠেন, যার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ মোহেববুল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটার সময় তার আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়। এরপর তিনি অটোরিকশা ও সিএনজি পরিবর্তন করে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছান এবং সেখান থেকে পঞ্চগড় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়ে বাস থেকে নেমে গভীর রাতে অন্ধকারে প্রস্রাব করার সময় 'প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে' তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে যায়, ফলে তিনি সেগুলো খুলে ফেলেন। এরপর ঠাণ্ডা ও ক্লান্তির কারণে তিনি আর পোশাক পরতে পারেননি। এ সময় রাস্তায় পড়ে থাকা একটি ছোট তালাসহ শিকল তিনি নিজের পায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে দেখতে পান।
তার ভাষ্য, 'আশেপাশের উলামায়ে কেরামগণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অবচেতন মনে তিনি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন।'
এই ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা আছে কি না কিংবা কী উদ্দেশ্যে বা কার প্ররোচনায় তিনি এমন কাজ করেছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মোহেববুল্লাহর স্বীকারোক্তির কোনো ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। আজ জিএমপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে, সেটাই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য।#
পার্সটুডে/জিএআর/২৮