আফ্রিকায় ফরাসি অপরাধের নয়া চিত্র উন্মোচিত: সেনেগালের থিয়ারোয়ে গণহত্যা
-
থিয়ারোয়ে গণহত্যা
পার্সটুডে- সেনেগালের থিয়ারোয়ে গণহত্যা নিয়ে প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে ফরাসি ঔপনিবেশিক যুগের আরও অজানা অপরাধের চিত্র উন্মোচিত হয়েছে।
পার্সটুডে'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনেগাল সরকারের এই নতুন নথিটি “থিয়ারোয়ে গণহত্যা” নামে পরিচিত সেই ভয়াবহ ঘটনার ওপর আলোকপাত করেছে, যা ফরাসি ঔপনিবেশিক ইতিহাসের অন্যতম অন্ধকার ও দীর্ঘদিন উপেক্ষিত অধ্যায় হিসেবে পরিচিত। দ্য আফ্রিকা রিপোর্ট সাময়িকীতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
ঐ সাময়িকীর প্রতিবেদনে ৩০১ পৃষ্ঠার নথির কথা বলা হয়েছে, যা সেনেগালের প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। দ্য আফ্রিকা রিপোর্ট সাময়িকীতে লেখা হয়েছে, যখন ২০১৭ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রন উপনিবেশবাদকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” বলেছিলেন, তখন হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, আফ্রিকায় ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক অতীতের আত্মা চিরতরে দাফন হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি, সেনেগাল সেই সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার পথে অটল থাকবে।
ছয় মাস বিলম্বে ১৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট বাসিরু দিয়োমায়ে ফায়ে ও প্রধানমন্ত্রী ওসমান সোনকো প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০১ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। গবেষণা কমিটির মতে, এর উদ্দেশ্য ছিল “তিয়ারোয়ে গণহত্যার ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচন।”
এই হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর, যখন ফরাসি ঔপনিবেশিক সেনারা গুলি চালিয়ে সেনেগালি সেনাদের হত্যা করে। এরা ছিলেন সেনেগালের “থিরায়োর” নামে পরিচিত সেনা দল, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। যেমনটি ধারণা করা হচ্ছিল সেনেগারের তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক গভীর সত্য উন্মোচিত হয়েছে। যদিও ফরাসিদের নথিতে এটাকে “ছোটখাটো ভুলত্রুটি” হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।
ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এই ট্র্যাজেডির নানা দিক পরিকল্পিতভাবে গোপন রাখা হয়েছিল। ফরাসি আর্কাইভের কিছু অংশ শুধু গোপনই নয়, বরং জালিয়াতিও করা হয়েছে—যেমন ফ্রান্সের মরলেক্স শহর ও সেনেগালের রাজধানী ডাকারে প্রবেশ এবং দুই শহর থেকে বের হওয়ার রেকর্ড বই।
যেখানে ফরাসি সরকারি সূত্রে সর্বোচ্চ ৭০ জন নিহতের কথা বলা হয়েছে, নতুন প্রতিবেদন বলছে, “নিহতের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০ জন। এছাড়া আরও প্রায় ৪০০ সৈন্য নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেনেগালের রাজধানী ডাকার থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে থিয়ারোয়ে সমাধিক্ষেত্র খনন করে এমন সব কবরের সন্ধান মিলেছে, যেগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ ছিল না। সেখান থেকে খুলি, পাঁজর, মেরুদণ্ডের হাড়, এমনকি লোহার শিকলসহ নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এসব প্রমাণ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, হত্যাযজ্ঞ কেবল ক্যাম্পের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
সাময়িকীতে আরও লেখা হয়েছে, এই প্রতিবেদনটিই “সত্য অনুসন্ধানের শেষ প্রতিবেদন নয়।” ফরাসিদের নতুন কিছু অপরাধের চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, কিন্তু এখনও অনেক অপরাধ অন্ধকারেই রয়ে গেছে, বিশেষ করে নিহতদের প্রকৃত কবরস্থানের বিষয়ে অনেক তথ্য এখনও অজানা।
সেনেগালের এই নতুন প্রতিবেদন কেবল ইতিহাসের এক প্রামাণ্য দলিলই নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।#
পার্সটুডে/এসএ/২৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।