কেন ইরান মার্কিন সব নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ বলে মনে করে?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i153514-কেন_ইরান_মার্কিন_সব_নিষেধাজ্ঞাকে_অবৈধ_বলে_মনে_করে
পার্সটুডে- জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করছে এবং জাতিসংঘ সনদের মৌলিক চেতনা দুর্বল করে দিচ্ছে।
(last modified 2025-10-29T13:11:31+00:00 )
অক্টোবর ২৯, ২০২৫ ১৮:১৪ Asia/Dhaka
  • ইরাভানি
    ইরাভানি

পার্সটুডে- জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করছে এবং জাতিসংঘ সনদের মৌলিক চেতনা দুর্বল করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “এতে কোনো সন্দেহ নেই যে একতরফা নিষেধাজ্ঞাগুলো অবৈধ পদক্ষেপ হিসেবে দাম্ভিকতা ও একতরফা নীতির ফসল। এগুলো বহুপাক্ষিকতাকে হুমকির মুখে ফেলছে, বিশ্বব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং জাতিসংঘ সনদের আসল চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

ইরাভানি আরো বলেন- কিউবার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ অবিলম্বে কোনো শর্ত ছাড়াই প্রত্যাহার করতে হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে তিনি বলেন, কিউবার বিরুদ্ধে একতরফা ও অমানবিক অবরোধ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গৃহীত পদক্ষেপের সুস্পষ্ট উদাহরণ। এটা “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা”র নামে গত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কিউবার জনগণের অধিকার ও কল্যাণকে ধারাবাহিকভাবে দুর্বল করেছে।

ইরান সরকারের দৃষ্টিতে, যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু পশ্চিমা দেশের সমর্থনে আরোপিত এসব একতরফা নিষেধাজ্ঞা কেবল রাজনৈতিক ও দমনমূলক নয় বরং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের মৌলিক নীতির প্রকাশ্য লঙ্ঘন। এসব নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই এবং বৈধ আন্তর্জাতিক কাঠামোর বাইরে আরোপিত হয়, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে দেশগুলোর জনজীবন, জাতীয় উন্নয়ন ও মানবাধিকারের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদিত নিষেধাজ্ঞাই বৈধ। তাই যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপগুলো আইনগত প্রক্রিয়া এড়িয়ে রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়।

তিনি আরও বলেন, এসব নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘ সনদের মূল নীতিগুলোর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। অর্থনীতিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া একধরনের পরোক্ষ বলপ্রয়োগ, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। একতরফা নিষেধাজ্ঞা বিশেষ করে ওষুধ, খাদ্য ও স্বাস্থ্য খাতে সাধারণ মানুষের জীবনকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। “গণতন্ত্র প্রচার”-এর নামে গৃহীত এসব পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে মানুষের মৌলিক অধিকার—স্বাস্থ্য, জীবন ও উন্নয়নের অধিকার—লঙ্ঘন করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, এসব নিষেধাজ্ঞা মূলত সরকার নয়, বরং সাধারণ জনগণের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এভাবে একতরফা নিষেধাজ্ঞা বহুপাক্ষিকতাকে দুর্বল করে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে এবং দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও বিভাজন তৈরি করে, যার ফলে অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সহযোগিতা ব্যাহত হয়।

ইরান বিশ্বাস করে, স্বাধীন দেশগুলোর সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমেই এই একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সম্ভব। এজন্য ইরান স্বাধীন আর্থিক কাঠামো গঠন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার মতো বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করছে।

ইরাভানি আরও বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ, অনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বৈধতা-বিহীন মনে করে, যা জাতিসংঘ সনদ, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এসব নিষেধাজ্ঞা সরকার নয়, সাধারণ জনগণের জীবনকেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এবং রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।#

পার্সটুডে/এসএ/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।