বর্তমান যুগে কীভাবে ইসলামি ঐক্য গড়া সম্ভব, জানালেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থা এখন এমন এক বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে যেটাকে উপড়ে ফেলার চিন্তা করাটাও অসম্ভব।
ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কোনো শক্তির কাছে মাথা না করে তাদের মোকাবেলায় দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান। আজ (শুক্রবার) মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও হজরত ইমাম সাদিক (আ.)'র শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইসলামি ঐক্য সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিদেশি অতিথিবৃন্দ এবং দেশের একদল শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে প্রকৃত ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং মুসলমানদের উচ্চ অবস্থানে পৌঁছা কি সম্ভব?- এই প্রশ্ন উত্থাপন করে সর্বোচ্চ নেতা নিজেই এর উত্তর দেন। তিনি বলেন- জ্বি, মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব। তবে এ জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাতে হবে, কাজ করতে হবে এবং সব ধরণের চাপ ও সমস্যা দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
ইসলামি ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও মুসলমানদের উচ্চ অবস্থানে পৌঁছার ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের বিশিষ্টজন এবং বিজ্ঞ তরুণদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এটা যে সম্ভব তার একটি উদাহরণ হলো ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। এই ছোট্ট চারা গাছটি ইমাম খোমেনী (রহ.)'র দিকনির্দেশনায় তৎকালীন দুই পরাশক্তির মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং সেদিনের চারা গাছটি এখন এমন এক বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে যা উপড়ে ফেলার চিন্তাও কেউ করতে পারে না।
সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, আমরা দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছি এবং সামনের দিকে এগিয়ে গেছি। তবে যেকোনো কাজের মতো দৃঢ়তা প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও কষ্ট সহ্য করতে হয়। যারা আত্মসমর্পণ করে তারাও কষ্টের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো- দৃঢ়তার কারণে উন্নতি হয়, কিন্তু আত্মসমর্পণ অবনতি ডেকে আনে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কয়েকটি দেশের সম্পর্ক স্থাপনকে সবচেয়ে বড় অপরাধগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোর কিছু শীর্ষ নেতার কারণে ইসলামি ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, কিন্তু মুসলিম বিশ্বের চিন্তাবিদ, আলেম, যুক্তিবাদী ও কৃতী ব্যক্তিরা পরিস্থিতিকে শত্রুদের প্রত্যাশিত পর্যায় থেকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারেন। আর এটা করা সম্ভব হলে ঐক্য প্রতিষ্ঠা সহজতর হবে।
ইরাক ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আইএস বা দায়েশের অপরাধযজ্ঞ বিশেষকরে আফগানিস্তানে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, শিয়া-সুন্নি দুই পক্ষেই উগ্রপন্থী রয়েছে যাদের সঙ্গে শিয়া মাজহাব বা সুন্নি মাজহাবের সম্পর্ক নেই। এই উগ্রবাদকে মাজহাবগুলোর জন্য অপবাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার সুযোগ দেওয়া যাবে না এবং যারা একটি মাজহাবের নাম ব্যবহার করে অপর মাজহাবের অনুভূতিতে আঘাত হানে তাদের কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের অভাবেই ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমবর্ধমান নানা সমস্যা, চাপ ও হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে নানা ক্ষেত্রে যে মিল রয়েছে সে দিকে ইঙ্গিত করে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এ পর্যন্ত সর্ব শক্তি দিয়ে বাস্তবে ইসলামি ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি বড় উদাহরণ হলো, ফিলিস্তিনের সুন্নি ভাইদের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন। ভবিষ্যতেও সর্ব শক্তি দিয়ে এই সমর্থন অব্যাহত রাখা হবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, মুসলিম বিশ্বে যে প্রতিরোধ ফ্রন্ট গড়ে উঠেছে সেটার প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সমর্থন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণায় বিশ্বাস করি এবং আমরা ইসলামি ঐক্যের মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের বিষয়ে আশাবাদী।#
পার্সটুডে/এসএ/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।