ইরানের ভূখণ্ডে মার্কিন আগ্রাসন: নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আহ্বান তেহরানের
(last modified Sun, 22 Jun 2025 09:05:27 GMT )
জুন ২২, ২০২৫ ১৫:০৫ Asia/Dhaka
  • জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
    জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ

পার্সটুডে- গতরাতে ইরানি ভূখণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে তেহরান। জাতিসংঘে ইরানের মিশন এক চিঠিতে এ আহ্বান জানায়। 

ইরানের মাটিতে মার্কিন বিমান হামলার পর জাতিসংঘে ইরানের মিশন নিরাপত্তা পরিষদের কাছে চিঠিতে বলেছে, বিনা উসকানিতে এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর মার্কিন হামলা ও আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।" 

পার্সটুডে লিখেছে, জাতিসংঘে ইরানের মিশন এই চিঠিতে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘে ইরানের মিশনের চিঠির লেখা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো: 

২০২৫ সালের ২২শে জুন (স্থানীয় সময়) ভোরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলের  সাথে পূর্ণ সমন্বয় করে একই সাথে ইরানের বেসামরিক নাগরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালায়। তারা ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ইচ্ছাকৃত,পূর্ব পরিকল্পিত এবং বিনা প্ররোচনায় বিমান হামলা চালায়। এর পরপরই,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রথমে "ট্রুথ সোশ্যাল" সামাজিক নেটওয়ার্কে এবং তারপরে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে এই জঘন্য আক্রমণ এবং ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে অবৈধ বলপ্রয়োগের দায় স্বীকার করেন।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান- বিনা প্ররোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন এবং পূর্ব পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এই কর্মকাণ্ডগুলি ১৩ই জুন ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা এবং স্থাপনাগুলির বিরুদ্ধে ইসরাইল যে বিশাল সামরিক আক্রমণ চালিয়েছিল তারই ধারাবাহিকতা।

এই স্পষ্ট আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন এমন একটি সরকার এই কাজটি করেছে যারা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির পক্ষ নয়,অর্থাৎ ইসরাইল-যার অঘোষিত এবং সুরক্ষিত পারমাণবিক ক্ষমতা,পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ এবং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণের ইতিহাস রয়েছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের একমাত্র সদস্য যারা যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। দুটি পৃথক আক্রমণে লক্ষ লক্ষ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এবং এখন প্রকাশ্যে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইরানের পরমাণু ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার দ্বারা পূর্ণ যাচাইকৃত এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় ছিল।

নিঃসন্দেহে,ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের সনদে অন্তর্ভুক্ত আন্তর্জাতিক আইনের চিরস্থায়ী নীতিগুলির একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন। 
জাতিসংঘের সনদের অনুচ্ছেদ ২, অনুচ্ছেদ ৪ অনুসারে জাতিসংঘের যেকোনো সদস্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যেকোনো হুমকি বা বলপ্রয়োগকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করে। শান্তিপূর্ণ ইরানি পরমাণু স্থাপনাগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র আক্রমণ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সংবিধান,আইএইএর সাধারণ সম্মেলনের প্রস্তাব,নিরাপত্তা পরিষদের ৪৮৭ নম্বর প্রস্তাব (১৯৮১) এবং ২২৩১ (২০১৫) এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিরও লঙ্ঘন।

আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এই স্পষ্ট ও অবৈধ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাল বিলম্ব না করে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান জানাচ্ছে। যাতে এই স্পষ্ট ও অবৈধ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এর তীব্র নিন্দা করা হয়। জাতিসংঘ সনদের অধীনে কাউন্সিলের ওপর অর্পিত দায়িত্বের কাঠামোর মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ যাতে করা যায়, এই জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীরা সম্পূর্ণরূপে জবাবদিহি করতে পারে এবং শাস্তি থেকে বঞ্চিত না হয়।#

পার্সটুডে/জিএআর/এমএআর/২২