ইংরেজরা কেন ইরানি কমান্ডার রাইস আলী দেলাওয়ারির নাম শুনেই ভয়ে কাঁপত?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i151650-ইংরেজরা_কেন_ইরানি_কমান্ডার_রাইস_আলী_দেলাওয়ারির_নাম_শুনেই_ভয়ে_কাঁপত
পার্সটুডে: ৩ সেপ্টেম্বর (ফার্সি ১২ শাহরিভার) হচ্ছে ইরানের সাহসী সেনাপতি ও ঔপনিবেশবাদ-বিরোধী কমান্ডার রাইস আলী দেলাওয়ারির শাহাদাতবার্ষিকী এবং 'ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় সংগ্রাম দিবস'।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৫ ১৭:৩২ Asia/Dhaka
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইরানের প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন রাইস আলী দেলওয়ারি
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইরানের প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন রাইস আলী দেলওয়ারি

পার্সটুডে: ৩ সেপ্টেম্বর (ফার্সি ১২ শাহরিভার) হচ্ছে ইরানের সাহসী সেনাপতি ও ঔপনিবেশবাদ-বিরোধী কমান্ডার রাইস আলী দেলাওয়ারির শাহাদাতবার্ষিকী এবং 'ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় সংগ্রাম দিবস'।

প্রতি বছর এই দিনটি দক্ষিণ ইরানের অমর বীর রাইস আলী দেলাওয়ারির সাহসিকতা ও বীরত্বের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ে তার বীরোচিত বিদ্রোহ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির দক্ষিণ ইরান দখলের ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল এবং ইরানের ইতিহাসে এক মহান মহাকাব্য সৃষ্টি করেছিল।

রাইস আলী দেলাওয়ারি ছিলেন ইরানের হাজারো বীর নামধারীদের অন্যতম, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তাঙ্গেস্তান ও বুশেহর অঞ্চলে জনগণের নেতৃত্ব দেন এবং ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইরানকে রক্ষা করেন। তার ত্যাগ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে দখলদার ইংরেজ বাহিনী পরাজিত হয়।

জাদুঘরে রাইস আলী দেলাওয়ারি

তিনি ফার্সি ১২৬১ সনে (১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ) ইরানের দক্ষিণে তাঙ্গেস্তানের দেলওয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ব্রিটিশ বাহিনী যখন ইরানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তখন রাইস আলী দেলাওয়ারির বয়স মাত্র ২৫ বছর। তা সত্ত্বেও তিনি তাঙ্গেস্তানের সাহসী যোদ্ধাদের একত্র করেন প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। তার অদম্য প্রতিরোধের কারণে ব্রিটিশরা দেলওয়ার, তাঙ্গেস্তান ও বুশেহর দখল করতে ব্যর্থ হয়।

রাইস আলী দেলাওয়ারির সংগ্রামের গুরুত্ব শুধু সামরিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও জাতীয় দিক থেকেও তা গভীর ছিল, যা গোটা ইরানে স্বাধীনতা ও প্রতিরোধের চেতনা জাগ্রত করেছিল।

তার নেতৃত্বে তাঙ্গেস্তানের জনগণের প্রতিরোধ সাত বছর স্থায়ী হয়। এ সময় দেলাওয়ারির যোদ্ধারা দুটি মূল লক্ষ্য সামনে রাখে:

১. নিজেদের ভূমি—বুশেহর, দাশতেস্তান ও তাঙ্গেস্তানকে রক্ষা করা।

২. বিদেশি সেনাদের ইরানের গভীরে প্রবেশে বাধা দিয়ে স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দেওয়া।

জাদুঘরে তাঙ্গেস্তান সাহসী বীরদের ভাস্কর্য

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, উত্তর দিক থেকে রাশিয়া ও দক্ষিণ দিক থেকে ব্রিটেন ইরানে হামলা চালায়। ইংরেজ যুদ্ধজাহাজ বুশেহরের উপকূলে নোঙর ফেলে এবং ক্রমে এই শহর ও আশপাশ দখলের চেষ্টা করে।

বুশেহর দখলের একদিন পর ১৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা এর প্রতিবাদ করলে তাদের গ্রেফতার করে ভারতে নির্বাসিত করা হয়। এরপর রাইস আলী দেলাওয়ারি আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তার বন্ধু 'খলু হোসেইন বার্দখোনি দাশতি'র সহায়তায় ১৩৩৩ হিজরির রমজান মাসের শুরুতে শপথ করেন যে, তিনি বুশেহর রক্ষা ও ব্রিটিশদের অগ্রযাত্রা রুখতে যুদ্ধ করবেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী তিনি ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং তাদের পরাজিত করতে সক্ষম হন।

রাইস আলী দেলওয়ারি'র শপথের এই অংশটি বিশ্বের স্মৃতিতে রয়ে গেছে:

হে আল্লাহর কালাম (কুরআন), আমার কথার সাক্ষী হও। আমি তোমাকে শপথ করে বলছি, যদি ইংরেজরা বুশেহর দখল করতে ও আমার মাতৃভূমির মাটিতে পা রাখতে চায়, আমি শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ব। যতক্ষণ না আমার শরীরের শেষ ফোঁটা রক্ত ঝরে পড়ে, ততক্ষণ আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে সরে আসব না। যদি আমি এ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করি, তবে আমি আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী এবং তাঁর রাসূল (হযরত মুহাম্মদ সা.) আমাকে প্রত্যাখ্যান করবেন।

রাইস আলী দেলওয়ারির ভাস্কর্য

এই স্বাধীনতাকামী বীর সেনাপতি শেষ পর্যন্ত ফার্সি ১২৯৪ সালের ১২ শাহরিভার (৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ) তারিখে ইরানের মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে শহীদ হন। তার শাহাদাত দিবস ইরানে জাতীয় ঔপনিবেশিক বিরোধী সংগ্রামের দিন” হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতার পথের শহীদদের সংগ্রাম এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়।

ইরান এবং বুশেহরে ব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের অন্যতম এজেন্ট মি. চিক, ১৯১৫ সালের ৫ জুন তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন: "রাইস আলী এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। বলা হয় তিনি ইংরেজদের শপথ করা শত্রু।

পার্সটুডে/এমএআর/৩