আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা কেন অর্থহীন?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i152284-আমেরিকার_সঙ্গে_আলোচনা_কেন_অর্থহীন
পার্সটুডে: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কর্মকর্তারা সবসময়ই আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার ব্যর্থতা সম্পর্কে একাধিক কারণ তুলে ধরেন। এসব কারণ মূলত ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমেরিকার আচরণের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে।
(last modified 2025-09-24T11:02:08+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫ ১৬:৫১ Asia/Dhaka
  • জেসিপিওএ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের স্বাক্ষর প্রদর্শন করছেন ট্রাম্প (ফাইল ফটো)
    জেসিপিওএ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের স্বাক্ষর প্রদর্শন করছেন ট্রাম্প (ফাইল ফটো)

পার্সটুডে: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কর্মকর্তারা সবসময়ই আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার ব্যর্থতা সম্পর্কে একাধিক কারণ তুলে ধরেন। এসব কারণ মূলত ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমেরিকার আচরণের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে।

ইরানি কর্মকর্তারা বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় আসে আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তারা ন্যায্য কোনো চুক্তি চায় না, বরং তাদের লক্ষ্য হলো নিজেদের শর্ত চাপিয়ে দেওয়া। আমেরিকার এ ধরনের আচরণ ইসলামি বিপ্লবের মূলনীতি 'স্বাধীনতা' এবং 'অন্যের ওপর অত্যাচার সহ্য না করা'-এর সাথে সাংঘর্ষিক।

অতীতের অভিজ্ঞতা, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ছয় বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের সমঝোতা (জেসিপিওএ) প্রক্রিয়া পরিষ্কার করে দেখিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা কেবল অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানই করে না, বরং মার্কিন কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির অপব্যবহার করে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তীব্র করার তাদের অমানবিক নীতি অনুসরণ করে। এতে স্পষ্ট হয় যে, আলোচনা আসলে আমেরিকার হাতিয়ার, যা দিয়ে তারা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এবং একতরফাভাবে সুবিধা নেয় কিন্তু বিনিময়ে কোনো ছাড় দেয় না। তাই এই ধরনের আলোচনা কেবল নিরর্থকই নয়, ক্ষতিকরও বটে।

জেসিপিওএ'র আলোচনার সময় ও পরবর্তীকালে মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে কূটনৈতিক ও আইনি উপায়গুলো ব্যবহার করেছে। অনেক বিশ্লেষক ও ইরানি কর্মকর্তার দৃষ্টিতে এটি আলোচনার পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক চুক্তিকে অপব্যবহারেরই নামান্তর। আমেরিকা ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জেসিপিওএ থেকে বেরিয়ে আসলেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের ‘স্নাপব্যাক মেকানিজম’ ব্যবহার করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের চেষ্টা করেছে।

বিভিন্ন সময়ের আলোচনায়ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা কমানোর পরিবর্তে ইরানি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যাতে সেগুলোকে আলোচনায় চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই আচরণ ইরানি পক্ষের ভেতরে তীব্র অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে এবং আলোচনা প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করেছে।

যখন ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে স্বচ্ছতার জন্য সমঝোতায় পৌঁছায়, তখন আমেরিকা ও তার মিত্ররা ‘স্নাপব্যাক মেকানিজম’ সক্রিয় করে এই চুক্তিগুলোকে উপেক্ষা করে। ইরানি কর্মকর্তারা এটিকে 'কূটনৈতিক প্রতারণা'ও 'আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যবহার' হিসেবে বিবেচনা করেন।

আমেরিকার বৈরী নীতি শুধু আলোচনার সময় কমেনি, বরং হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা সুযোগ পেলেই নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে ইরানের বিরুদ্ধে। অথচ গত কয়েক বছরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান 'স্নাপব্যাক মেকানিজম’ ও আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতার সব অঙ্গীকার পূরণ করেছে। কিন্তু অপরপক্ষ অর্থাৎ আমেরিকা তার কোনো অঙ্গীকারই রক্ষা করেনি।

মার্কিন কর্মকর্তাদের দ্বিমুখী আচরণ এমনকি ইরানের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার ক্ষেত্রেও অব্যাহত ছিল। কূটনৈতিক নীতি ও আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে তারা ইসরায়েলের হামলায় সহযোগিতা করেছে এবং ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে বোমা মেরেছে। ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, হোয়াইট হাউসের এসব শত্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপ হলো অবৈধ সামরিক আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে সক্রিয় অংশগ্রহণের উদাহরণ।

ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ি ব্যাখ্যা করে বলেছেন- কেন বীর ইরানি জাতি শত্রুর চাপ ও হুমকির মুখে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মতো লাভজনক প্রযুক্তি থেকে পিছু হটবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে আলোচনার ফল শুরু থেকেই আমেরিকা নির্ধারণ করে দেয় এবং চাপিয়ে দেয়, তা অর্থহীন ও ক্ষতিকর, কারণ এতে শত্রু আরও বেশি চাপ প্রয়োগের লোভ পায়, অথচ কোনো ক্ষতি প্রতিহত হয় না। এমন আলোচনাকে কোনো সম্মানিত জাতি বা প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ মেনে নিতে পারে না।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা শুধু ব্যর্থ নয়, ক্ষতিকরও। এর কারণগুলো হলো— বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আলোচনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, ইসরায়েলের শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা এবং আমেরিকার নীতির প্রতি কাঠামোগত অবিশ্বাস।#

পার্সটুডে/এমএআর/২৪