ইমাম খোমেনী (রহ.) কেন বাসিজকে 'ঐশ্বরিক উপহার' বলেছেন?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i154144-ইমাম_খোমেনী_(রহ.)_কেন_বাসিজকে_'ঐশ্বরিক_উপহার'_বলেছেন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজকে কেবল একটি সামরিক বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না; বরং এটিকে সমসাময়িক ইতিহাসে একটি বহুমুখী ঘটনা হিসেবে বিশ্লেষণ করা উচিত।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
নভেম্বর ১৭, ২০২৫ ১৮:৩০ Asia/Dhaka
  • কয়েকজন বাসিজ সদস্য
    কয়েকজন বাসিজ সদস্য

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজকে কেবল একটি সামরিক বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না; বরং এটিকে সমসাময়িক ইতিহাসে একটি বহুমুখী ঘটনা হিসেবে বিশ্লেষণ করা উচিত।

ইরানের সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ অবন থেকে ৫ অযার (২০ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর) পর্যন্ত সাত দিনকে 'নিপীড়িতদের বাসিজ সপ্তাহ' হিসেবে উদযাপিত হয়। এই উপলক্ষে পার্সটুডে'র এই নিবন্ধে 'ইরানে বাসিজের ভূমিকা ও অবস্থান' নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ফার্সি ১৩৫৮ সালে (১৯৭৯) ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর দেশের নতুন শাসনব্যবস্থাকে সুরক্ষিত এবং সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই প্রেক্ষাপটে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনি বাসিজ গঠনের নির্দেশ দেন। তিনি বাসিজকে 'ঐশ্বরিক উপহার' হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর দৃষ্টিতে, বাসিজ শুধু একটি সংগঠন নয়, বরং প্রেম ও আত্মত্যাগের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাসিজকে একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ধারণায় পরিণত করে, যা ইরানি সমাজের মানসিকতায় গভীরভাবে প্রোথিত হয়।

ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বর্তমান নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীও বাসিজকে মূলত একটি সংস্কৃতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন; এমন একটি সংস্কৃতি যা বিশ্বাস, দায়িত্বশীলতা, আইনমান্য ও শৃঙ্খলার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সংস্কৃতি সংগঠনের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে আনুষ্ঠানিক সদস্য না হয়েও অনেক মানুষ নিজেদের বাসিজি মনে করে। প্রকৃতপক্ষে, বাসিজ একটি সমষ্টিগত পরিচয়ে রূপান্তরিত হয়েছে, যার শিকড় পাওয়া যায় ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে মুসলমানদের সংগঠিত করার ঐতিহ্যে।

গত চার দশকে বাসিজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে:

  • সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্র: ইরান-ইরাক যুদ্ধে ব্যাপক অংশগ্রহণ, লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবক পাঠানো এবং বহু শহীদ ও আহত সেনা প্রদান।
  • সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র: ‘সালেহিন’ সার্কেল, ‘রাহিয়ান-এ নূর’সহ বিভিন্ন কার্যক্রম এবং নরম শক্তি তৈরির লক্ষ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ।
  • সামাজিক ও সেবা ক্ষেত্র: জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, ভূমিকম্প ও বন্যায় ত্রাণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং করোনা সংকটে অসহায় মানুষদের সহায়তা।

এই বহুমুখী কার্যক্রম প্রমাণ করে, বাসিজ কেবল সামরিক শক্তি নয়; বরং রাষ্ট্রের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহায়ক শক্তি হিসেবেও কাজ করেছে।

পরিশেষে, বাসিজকে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনা, যার কার্যক্রম সামরিক ও সেবামূলক ক্ষেত্রেও বিস্তৃত—এইভাবে বিশ্লেষণ করাই যুক্তিযুক্ত। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তে এই সংগঠন কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে এবং একই সঙ্গে একটি সর্বজনীন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে বাসিজের টিকে থাকা নির্ভর করবে নতুন প্রজন্মের চাহিদা ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উপর; কারণ এর অস্তিত্ব কেবল সংগঠনের কাঠামোয় নয়, বরং ইরানি সমাজের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে নিহিত।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৭