সাংবাদিক হত্যার কেলেঙ্কারি ঢাকতে সৌদি-মার্কিন নয়া কৌশল: ইরানকে টার্গেট
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ তালেবানের প্রতি সমর্থন দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন অর্থমন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সৌদি সরকারবিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনা ম্লান করে দিতে এবং বিশ্ব জনমতকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই ইরানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তালেবান নেতাদের সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন বৈঠকের ব্যাপারে ওয়াশিংটন পোস্টে খবর প্রকাশের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার টুইট বার্তায় মার্কিন অর্থমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইয়েমেনে হত্যাযজ্ঞ ও সাংবাদিক হত্যার কেলেঙ্কারিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই তালেবানের প্রতি কথিত সমর্থন দেয়ার অজুহাতে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল। সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার চোরাবালি থেকে সৌদি আরবকে উদ্ধারের জন্য যখন মার্কিন অর্থমন্ত্রী রিয়াদ সফরে গেছেন তখন বাহরাইন ও সৌদি সরকার আমেরিকার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসিকে কথাকথিত সন্ত্রাসীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমেরিকা ও কয়েকটি আরব দেশের এসব পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, তারা তালেবান ইস্যুতে ইরান বিরোধী ব্যাপক অপপ্রচারের মাধ্যমে ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক হত্যার কেলেঙ্কারি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কন্স্যুলেটে সৌদি সরকার বিরোধী এক সাংবাদিককে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এতো বেশি হৈচৈ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে যে, আমেরিকা ও তার আরব মিত্ররা এখন সৌদি সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ কেবল সাংবাদিক হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই গত তিন বছর ধরে তারা ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধেও ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সৌদি আরবের প্রতি নিন্দার ঝড় বয়ে গেলেও রিয়াদের প্রতি ওয়াশিংটনের প্রকাশ্য সমর্থন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এসব অপকর্ম ছাড়াও দায়েশ ও জাবহাত আন নুসরা থেকে শুরু করে তালেবান ও আল কায়দা সন্ত্রাসীদেরকে সৌদি আরব যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি আমেরিকার সমর্থন রয়েছ।
তালেবান ও সৌদি আরবের প্রতি আমেরিকার সমর্থন দেয়ার অর্থই হচ্ছে সন্ত্রাসবাদকে সহযোগিতা করা যার পরিণতিতে আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে হত্যাকাণ্ড চলছেই। তালেবানের প্রতি আমেরিকার সমর্থন গোপন কোনো বিষয় নয় এবং আমেরিকা সবসময়ই তালেবানকে ব্যবহার করে আফগানিস্তানে তাদের লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মরিয়া জাখারোভা বলেছেন, বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যাচ্ছে তালেবানদের সবচেয়ে বড় আর্থের যোগানদাতা হচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আফগানিস্তানে যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে এবং যেভাবে মাদক চাষ ও উৎপাদন হচ্ছে তার পেছনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দাবিদার আমেরিকার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এ অবস্থায় আমেরিকা ও তার আরব মিত্ররা যতই ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাক না কেন আফগানিস্তান, ইয়েমেন কিংবা ইস্তাম্বুল কেলেঙ্কারি থেকে তারা রেহাই পাবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৫
- খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন