ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ প্রস্তাব লঙ্ঘনের অভিযোগ: তেহরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
তেহরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা যে দাবি করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কাতারের রাজধানী দোহায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে আল জাজিরা টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি মার্কিন অভিযোগের ব্যাপারে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়াকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন অভিহিত করে বলেছেন, আমেরিকা এমন অবস্থানে নেই যে ওই প্রস্তাবের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পরে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই চুক্তি ধ্বংস কিংবা দুর্বল করার জন্য আমেরিকা সবরকম চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু বিশ্ববাসী তা মেনে নেয়নি।
আমেরিকা ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বিরুদ্ধে যে নীতি নিয়েছে তা দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং এর ফলে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে সারা বিশ্বে। এ ব্যাপারে প্রায় দুই বছর আগে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এক দেশের নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে আরেক দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অর্থহীন।
আমেরিকা এখনো ওই নীতিতে অটল রয়েছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে আমেরিকা হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারবে কিন্তু তা এ অঞ্চলের সংকট সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখবে না। প্রকৃতপক্ষে, মধ্যপ্রাচ্যে সংকট সৃষ্টির মূল হোতা হচ্ছে আমেরিকা আর সেটাকে আড়াল করতেই ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলছে আমেরিকা। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দোহায় বলেছেন, যেসব দেশে ইরান সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে তা ওই দেশগুলোর অনুরোধেই পাঠিয়েছে এবং ওই দেশগুলো যখনই চাইবে তখনই সামরিক উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
খ্যাতনামা মার্কিন চিন্তাবিদ নওম চমস্কি বলেছেন, আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এবং আরবদের নিয়ে যে জোট গঠনের চেষ্টা করছে আমেরিকা তার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানকে মোকাবেলা করা। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বড় বাধা হয়ে আছে ইরান।
আমেরিকা একদিকে এ অঞ্চলে সংকট সৃষ্টির জন্য ইরানকে দায়ী করে নিজের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছে অন্যদিকে কয়েকটি আরব দেশ আমেরিকার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনে প্রক্সিযুদ্ধ চালাচ্ছে। যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব আমরা ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে দেখতে পাচ্ছি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আমেরিকা ও ব্রিটেনের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে ইয়েমেনকে জাহান্নামে পরিণত করেছে।
যাইহোক, কাতার সফরকারী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। আর তা হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোকে অবশ্যই বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চেষ্টা চালাতে হবে এবং বিদেশীদের উপর নির্ভরতা কাটিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৬