ইরানের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্ববিরোধী অবস্থান
ইরানের পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী তিন ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি এই সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করে এটি বাস্তবায়নের ওপর আবারো গুরুত্ব আরোপ করেছে। একইসঙ্গে এসব দেশ ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার লক্ষ্যেও পদক্ষেপ নিয়েছে।
এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ইরানে পুঁজি বিনিয়োগকারী ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় আইনি সহযোগিতা দেয়া এবং ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক ব্যব্স্থা ‘ইনসটেক্স’ চালু করা।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গতরাতে ইরান সম্পর্কে এমন এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে যা তেহরানের ব্যাপারে তাদের আগের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
বিবৃতিতে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হলেও ওয়াশিংটনের ইরান বিরোধী অভিযোগগুলোর পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই উত্তেজনা সৃষ্টিতে তার ভাষায় ইরানের ভূমিকার সমালোচনা করেছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে সিরিয়া ও লেবাননের সরকার বহির্ভূত শক্তিগুলোকে রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতা দিয়েছে।

ইইউ’র বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ইরান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে। একইসঙ্গে ইরানের কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমেরিকার ইরান-বিদ্বেষী দাবিগুলোর পুনরাবৃত্তি করা সত্ত্বেও নিছক নিজেদের স্বার্থে পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপ; কারণ, তারা এই সমঝোতাকে ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য জরুরি মনে করে। কিন্তু এর বিপরীতে তারা ইরানকে পরমাণু সমঝোতায় বর্ণিত আর্থিক সুবিধা দিতে গড়িমসি করছে।
এই সমঝোতা রক্ষার ব্যাপারে ইউরোপ যেসব বক্তব্য দিয়েছে তাকে ইতিবাচক বলা সম্ভব হলেও আমেরিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্য নীতি সম্পর্কে যেসব দাবি করেছে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইউরোপীয়রা ভালো করেই জানে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আত্মরক্ষামূলক এবং তেহরান কখনো কারো বিরুদ্ধে আগে যুদ্ধ শুরু করেনি।

এ ছাড়া, ইউরোপীয়রা এমন সময় লেবানন ও সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করছে যখন এসব দেশ আমেরিকার সঙ্গী হয়ে ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ার বৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য দেশটিতে তৎপর উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে সবরকম পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। পাশাপাশি এই ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে সমরাস্ত্র কিনে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের নিরীহ জনগণকে হত্যা করে যাচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউরোপের পক্ষ থেকে সোমবার প্রকাশিত বিবৃতিতে পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু দিক থাকলেও এতে ইরানের বিরুদ্ধে যেসব কাল্পনিক অভিযোগ করা হয়েছে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/৫