রাজনৈতিক ও মানবিক সমর্থনের জন্য ইরানকে কৃতজ্ঞতা জানালেন আনসারুল্লাহ প্রতিনিধি
-
তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আনসারুল্লাহ মুখপাত্র
ইরান সফররত ইয়েমেনের জনপ্রিয় হুথি আনসারুল্লাহ সংগঠনের মুখপাত্র মোহাম্মাদ আব্দুসসালাম তার দেশের জনগণের প্রতি ইরানের রাজনৈতিক ও মানবিক সমর্থনের জন্য আবারো কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
তিনি তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বলেছেন। এ সাক্ষাতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি অবরোধ ও যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক অভিহিত করে অবরোধ প্রত্যাহার ও বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আমেরিকাসহ আরো কয়েকটি দেশের সমর্থন নিয়ে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে স্থল, আকাশ ও পানি পথে অবরোধ আরোপের পাশাপাশি সামরিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ আগ্রাসনে ইয়েমেনের অর্থনীতি, কৃষি ও অবকাঠামো ধ্বংস হওয়া ছাড়াও ১৬ হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। এ ছাড়া শরণার্থী হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
সৌদি সরকারের ধারণা ছিল যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে এবং ইয়েমেন সংকট সমাধানে উত্থাপিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে ওই দেশটির ব্যাপারে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। সৌদি কর্মকর্তারা বহুবার রাজনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানের কথা বললেও বাস্তবতা হচ্ছে প্রথম থেকেই ব্যাপক সামরিক হামলা চালিয়ে এবং যুদ্ধ বন্ধের জন্য উত্থাপিত শান্তি পরিকল্পনার বিরোধিতা করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও শক্তির প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী পাল্টা হামলা শুরু করায় সৌদি আরব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বলতে গেলে সৌদি আরব ইয়েমেনের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। গত এক মাসে ইয়েমেনের যোদ্ধারা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে যা রিয়াদের জন্য চরম অবমাননাকর ও লজ্জাজনক। এখন সৌদি আরবের জন্য একটি পথই খোলা রয়েছে আর তা হচ্ছে যুদ্ধবিরতি করা এবং ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু করা যাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশটিতে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসতে পারে।
ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ আসাদুল্লাহি ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের অসংখ্য ভুল পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, রিয়াদ বর্তমানে ইয়েমেন সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এমনভাবে এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন যাতে তার ব্যর্থতার বিষয়টি সবার নজরে না পড়ে। তবে এটাও ঠিক লজ্জাজনক এ পরাজয়ের কারণে যুবরাজ সালমানের রাজনীতিরও অবসান ঘটবে যা কিনা তার জন্য বিরাট সংকট তৈরি করবে।
ইরান প্রথম থেকেই ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তেহরান ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি বিদেশি সামরিক আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তেহরানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেয়া সাক্ষাতে ইয়েমেন সংকট নিরসনের জন্য তেহরানের পক্ষ থেকে উত্থাপিত চারটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যুদ্ধের অবসান এ অঞ্চলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যাইহোক, ইরান সফররত ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ সংগঠনের মুখপাত্রের সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ ও রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৭