প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
'রেডিও তেহরান থেকে পাই মানুষের কল্যাণ আর সুন্দর জীবন গঠনের বার্তা'
‘আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ'-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন। বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পার্সটুডেতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আজ প্রকাশিত হলো 'ফ্রেন্ডস ডি-এক্সিং ক্লাব ঢাকা'র প্রেসিডেন্ট মোঃ সোহেল রানা হৃদয়ের লেখা।
১৯৯৫ সাল। আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। বাড়িতে থাকা রেডিওটি আমার দখলে তখন। কেসিবো রেডিওটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল- টিভি অনুষ্ঠান শোনা যেত। বিশেষ করে শীতের সময় শুক্রবারের রাতে বাড়ির বাইরে গিয়ে অন্যের বাড়িতে টিভি দেখা চরম অন্যায় হিসেবে ধরা হতো। তবে আলিফ লাইলা অনুষ্ঠানটির জন্য মনটা আনচান করতো। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে রেডিওতে শুনেই শান্ত থাকতে হতো। কালো রঙের কেসিবো রেডিওটি আমাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভারত থেকে আনিয়েছিলেন আমার বড় ভাই। তবে রেডিওটি বাড়িতে আনার পরপরই তা আমার দখলে চলে আসে। কারণ স্কুল সময়ের পরে বিকেলে খেলতে যাবার আগ পর্যন্ত এবং সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত অবধি তা আমার বইয়ের কাছাকাছি থাকতো।
পড়ার অবসরে রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়মিত শুনতে শুরু করি। প্রথম দিকে বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং মিডিয়াম ওয়েভে ভারতের কিছু চ্যানেলে হিন্দী সিনেমার গান শুনতাম। দারুণ উপভোগ্য ছিল সেই সময়গুলো। এর কিছুদিন পরেই শুরু হলো শর্টওয়েভে পদচারণা। সুইচ পরিবর্তন করে টিউন করতে থাকতাম। নব ঘোরাতে ঘোরাতে মিটার ব্যান্ডের কাটা যেখানে গিয়ে থামতো সেখানকার নম্বরটি এবং চ্যানেলটির নাম খাতায় লিখে রাখতে শুরু করলাম। এভাবেই সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বেশ কিছু বাংলা ভাষায় প্রচারিত চ্যানেল আবিষ্কার করে ফেললাম। এভাবেই রেডিও তেহরানের সাথে সাথে বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, ডয়চে ভেলে জার্মান বেতার, রেডিও ভেরিতাস এশিয়া, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, এ্যাডভেন্টিস্ট ওয়ার্ল্ড রেডিওসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইংরেজি বেতারের সাথে পরিচিতি। তারও বেশ কিছুদিন পরে বেতারের ঠিকানায় চিঠি লেখার সাহস করলাম। প্রথমে বাংলাদেশ বেতার এবং পরে অন্যান্য বেতারে নিয়মিত লেখা শুরু করি ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে। রেডিও তেহরানে প্রথম কোন বিষয় নিয়ে লিখেছিলাম তা সঠিক মনে নেই তবে চিঠি লেখার ২৫ দিনের মধ্যেই আমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় একটি চিঠি আসে রেডিও তেহরান থেকে। সে দারুণ এক শিহরণ। আমি আজও সেই স্মৃতিময় ক্ষণ ভুলতে পারি না। সেই থেকে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠান শুনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিঠি লিখে যাচ্ছি আজও।
আমার স্পষ্ট মনে আছে- রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগ থেকে একদিন আমার নামে আসা একটি খাম আমার বাবা খুলে কয়েকটি ম্যাগাজিন পেয়ে তা কয়েকদিন ধরে পড়ে আমাকে জানিয়েছিল সেগুলোতে কী লেখা আছে। কারণ আমার তখন সবগুলো ম্যাগাজিন পড়া সম্ভব ছিল না ক্লাসের পড়ার জন্য। আমার বাবা খুব যত্মে আমার নামে আসা চিঠিপত্রগুলো গুছিয়ে রাখতেন। আমার অবসর সময়ে সেগুলো আমাকে পড়তে দিতেন। বিভিন্ন বেতারে চিঠি লিখে আমি সারাক্ষণ অপেক্ষায় থাকতাম বিভিন্ন বেতারের পত্রের জন্য। যখন কোন খাম হাতে পেতাম, তা যেন আমার কাছে বিরাট পাওয়া মনে হতো। একবার একটি বড় খামে রেডিও তেহরান থেকে বেশ কিছু ম্যাগাজিন, অনুষ্ঠান সূচি, স্টিকার এবং অন্যান্য ছোট-খাটো উপহার সামগ্রী পেলাম।
স্টিকারগুলোর মধ্যে বড় সাইজের ইমাম খোমেনী এবং আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ছবি ছিল- যা এখনও আমার সংগ্রহে সযত্মে আছে। বড় বড় ওয়াটার প্রুফ খামে যখন রেডিও তেহরানের ডকুমেন্টগুলো আমার বাড়ির ঠিকানায় আসতো তখন পাড়ার বেশ কিছু বন্ধুরা আগ্রহ প্রকাশ করল তারাও লিখবে বলে।
পরে সেই সকল আগ্রহী বন্ধুদেরকে নিয়েই গঠন করি “শ্রুতি আন্তর্জাতিক বেতার শ্রোতা ক্লাব”। এরপরে ২০০০ সালে আরো কিছু বন্ধুদেরকে যুক্ত করে ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়-“ফ্রেন্ডস ডি-এক্সিং ক্লাব”। শুরু থেকেই যে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি।
এভাবেই সেই থেকে যুক্ত আছি রেডিও তেহরানের সাথে। মাঝে পড়াশোনার চাপে কিছুদিন অনিয়মিত ছিলাম লেখাতে, তবে অনুষ্ঠান শোনা বাদ যায়নি। এরই মাঝে প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা রেডিও তেহরানকে খুব কাছে পেয়েছি। কেউ এখন রেডিও থেকে দূরে যেতে চাইলেও পারে না- কারণ যার সাথে মোবাইল এবং ইন্টারনেট আছে তার পকেটেই রেডিও আছে- আর রেডিও আছে মানেই সবার প্রিয় রেডিও তেহরান আছে। জীবনঘনিষ্ঠ প্রতিটি পর্বেই ফুটে ওঠে মানুষের কল্যাণ আর সুন্দর জীবন গঠনের বার্তা- পাই সঠিক জীবনের দীশা আর আনন্দময় পরিবেশ। মানব জাতির অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে সব ধরনের উপায় বর্ণনা করা হয় রেডিও তেহরানে। এখন বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম হিসেবে রেডিও তেহরান তার স্থান নিশ্চিত করেছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ মানেই রেডিও তেহরান; তাইতো সাথেই আছি রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের। রেডিও তেহরানের সাথে যুক্ত থেকে জীবন ধন্য হবে আমাদের সকলের এই কামনায় বিদায় জানাচ্ছি।
আইআরআইবি ফ্যানক্লাব বাংলাদেশ এর ২য় বছর পূর্তিতে সকল শ্রোতাবন্ধুকে আমাদের ফ্রেন্ডস ডি-এক্সিং ক্লাব ঢাকার পক্ষ থেকে জানাচ্ছি অফুরান ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
শুভেচ্ছান্তে-
মোঃ সোহেল রানা হৃদয় ('এ' ক্যাটাগরিতে বিজয়ী)
প্রেসিডেন্ট, ফ্রেন্ডস ডি-এক্সিং ক্লাব ঢাকা
সুপার-সি, আইজিএসএন্ডসি, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা-১২০৬। বাংলাদেশ।