'আমার পেশায় নিয়োগের ক্ষেত্রে রেডিও তেহরানের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল'
https://parstoday.ir/bn/news/letter-i120684-'আমার_পেশায়_নিয়োগের_ক্ষেত্রে_রেডিও_তেহরানের_পরোক্ষ_ভূমিকা_ছিল'
‘আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ'-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন। বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পার্সটুডেতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আজ প্রকাশিত হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিনিয়র শ্রোতা বিধান চন্দ্র সান্যালের লেখা।
(last modified 2025-10-08T09:10:00+00:00 )
মার্চ ১৪, ২০২৩ ১০:১৫ Asia/Dhaka
  • 'আমার পেশায় নিয়োগের ক্ষেত্রে রেডিও তেহরানের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল'

‘আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ'-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন। বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পার্সটুডেতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আজ প্রকাশিত হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিনিয়র শ্রোতা বিধান চন্দ্র সান্যালের লেখা।

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে এমন কিছু অনুভূতি সম্পন্ন ভালোবাসা মাখানো স্মৃতি থাকে যা চিরকাল নতুন থাকে মানুষের মনের মনিকোঠায়। কোনো কাল, স্থান, গণ্ডি তা মুছে দিতে পারে না।

রেডিও তেহরান, যার বিস্ময়ের শেষ নেই। 'আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে।' সারা বিশ্ব জগতেই রেডিও তেহরানের কণ্ঠস্বর মধুরতম ও গভীরতম সুর প্রাণের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে আসছে। মহত্বের উচ্চতা, প্রেমের গাঢ়তা, সৌন্দর্যের চরমোৎকর্ষ সমস্ত তার দর্শন গভীরতার দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে আমাদের সুধায় ডুবিয়ে দিচ্ছে প্রতি নিয়ত। আনন্দের বেদনাকে এমনি করেই চিরকাল জাগিয়ে রেখে চিরকাল তৃপ্ত হব আমরা। তোমার মধুর প্রেমেই, তোমার বাণীতেই দুঃখকে অলংকার করে গলায় পড়তে পারি, মৃত্যুও যেন সুধাময় হয়ে ওঠে।

পৃথিবী আজ দুর্গতির পঙ্ককুন্ডে লুটোচ্ছে- হিংসায় উন্মত্ত আজ পৃথ্বী। আমরা বল, তেজ, সম্পদ সমস্ত হারিয়ে ফেলেছি। সত্যতা আমাদের কাছে আজ দূরুহ, বিশ্বাস আজ দুঃস্বপ্ন। ভালোবাসা আজ সুদূর। সমস্ত অধিকারেই কেবল সংকীর্ণতা। কল্পনা আজ বড় দুর্বল। মনুষ্যত্বের গৌরব আজ ধুলায় লুণ্ঠিত। তাই প্রাণের আশ্রয় রেডিও তেহরান, প্রাণের আরাম তার অনুষ্ঠান। আনন্দ-বেদনার মরমী-মহত্বের মহত্তম প্রকাশের শ্রেষ্ঠ আধার যার মাধ্যমে সীমার সঙ্গে অসীমের, খণ্ডের সঙ্গে পূর্ণের, ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে বিশ্ব জীবনের চিরন্তন প্রবাহের উপলব্ধি যে অনুষ্ঠান শ্রবণের সংস্পর্শে মনের গহনে পরম সত্তা জাগ্রত হয় যেখানে নিজেকে নিবেদনের পরম আকুতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সৃষ্ট সেই রেডিও তেহরান।  

স্কুল জীবনে পড়াশোনা করবার সময় আমার মনটা কোন এক অজানা কারণেই বেতার প্রেমী হয়ে উঠেছিল। যার ফলে কোন একদিন রাতে রেডিওর নব ঘোরাতে ঘোরাতে রেডিও তেহরানে বাংলা অনুষ্ঠান আমার মনের আঙিনায় ধরা দেয়। সেদিনটা ছিল ১৯৮৩ অথবা ১৯৮৪ সালের এক বর্ষণমুখর রাত। তারপর থেকে রেডিও তেহরানের সাথে আমার পথচলা শুরু।

জ্ঞানের পরিধিকে বাড়াতে আর ইরানকে জানতে এবং ইসলামিক সংস্কৃতিকে বুঝতে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে শুনে চলেছি রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠানমালা। রেডিওতে বাংলা অনুষ্ঠানকে অনুভব করি আমার রন্ধে রন্ধে। এ যেন রেডিও তেহরানের কারিগর কলাকুশলীদের সুনিপুন দক্ষতায় গড়ে ওঠা এক অপার শিল্পকলা। অনুষ্ঠানের প্রতি রেডিও তেহরানের কর্মকর্তা ও কলা-কুশলীদের মমত্ববোধ ও সারল্যে ছন্দোবদ্ধতা, সমৃদ্ধ প্রাণবন্ত উপস্থাপনা আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে।

রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আমার ভীষণ ভালো লাগে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে ইরানের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মৈত্রীর অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছে। অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ইরানের ইসলামি জীবনযাত্রা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবন সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাচ্ছি। সেই সাথে নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ তরতাজা বিশ্ব সংবাদ,  দৃষ্টিপাত ও কথাবার্তা যেন খোলা এক জানালা, যেখানে উঁকি দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে দেখা যায়।

অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আমরা পাচ্ছি পার্স টুডে'র মত ওয়েবসাইট যার মান খুবই উন্নত এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সাজানো। রেডিও তেহরার বাংলা যেমন ইরান ইরানের মানুষ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে বেশি বেশি জানার ও বোঝার সুযোগ করে দিচ্ছে তেমনি বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে প্রচার এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান এবং ক্রমবর্ধমান সার্বিক সহযোগিতাভিত্তিক বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বকে আরো জোরদার করতে প্রতিদিন মূল্যবান অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের এক শিল্পীর কণ্ঠে শুনেছিলাম জনপ্রিয় একটি গান, যার কথা ছিল- "হায়রে স্মৃতি বড় গীতিময়/ বারে বারে মনে হয়"। সত্যি সে ভুলবার নয়। সময়টা ছিল ১৯৯৭ সাল। আমি পেশায় একজন প্রাথমিক শিক্ষক। সে সময় প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগের নিয়ম রীতি আবেদনকারীকে ১০০ নম্বরে মূল্যায়ন করা হতো। মাধ্যমিক রেজাল্টে ৬০ নম্বর, শিক্ষক প্রশিক্ষণ রেজাল্টে ২৫ নম্বর, লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় ১০ নম্বর এবং  এক্সট্রা ক্যারিকুলারে ৫ নম্বর। আমাদের মৌখিক পরীক্ষার স্থলে লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল। সে যাই হোক লিখিত ও এক্সট্রা ক্যারিকুলারের মোট ১৫ নম্বরের মধ্যে ১ নম্বর প্রয়োজন ছিল। এক্সট্রা ক্যারিকুলারে জেলা স্তরের সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য ছিল না। রাজ্য বা জাতীয় স্তরের প্রতিটি সার্টিফিকেটের জন্য ছিল ১ নম্বর। আমি সেখানে দাখিল করলাম রেডিও তেহরান আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিজয়ী সার্টিফিকেট।  ইন্টারভিউর বোর্ডের বিভিন্ন সদস্যের হাত ঘুরে চলল সার্টিফিকেটটি। সবাই কৌতূহলী এতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট। শেষ পর্যন্ত তা গৃহীত হলো। অর্থাৎ আমার স্কোরে ১ নম্বর যুক্ত হয়ে গেল। পরে জেনেছিলাম লিখিত পরীক্ষায় আমি ৭ নম্বর পেয়েছিলাম। মূলকথা আমার পেশায়  নিয়োগের ক্ষেত্রে রেডিও তেহরানের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল।

একবার রেডিও তেহরান হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর উপর কবিতা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমি দুটি বিভাগেই অংশ নিই। কবিতা প্রতিযোগিতায় আমি বিজয়ী ও হই। শিলিগুড়ি থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদ পত্র "উত্তরবঙ্গ সংবাদ" পত্রিকায় আমার বিজয়ের সংবাদ আমার ছবিসহ প্রকাশিত হয়। গর্বে আমার বুক ভরে ওঠে। এই সেই রেডিও তেহরান যাকে কেন্দ্র করে আমার পেশায় নিয়োগ প্রাপ্তি, আমার মানসম্মান , তাকে কী আর ভোলা যায়! 

এদিন চলিয়া যাবে

ক্ষণকাল পরে

রবে মাত্র স্মৃতি টুকু

চিরকাল তরে।

২০২১ -এ আমি রেডিও তেহরানের বার্ষিক শ্রেষ্ঠ শ্রোতা নির্বাচিত হই।  ২০২২-এ এমন দিন ছিল না যেদিন রেডিও তেহরানে অনুষ্ঠান বিষয়ে বা পার্সটুডের বিষয়ে পত্র লিখিনি। আসলে রেডিও তেহরানের ভাবাদর্শ, মানবপ্রেম, সৎ আদর্শ  বিশেষভাবে স্মরণীয়।

যদি রেডিও তেহরানকে জ্ঞানে অমান্য করি তাহলে মানুষের মূঢ়তায় পতন। যদি সমাজে অমান্য করি তাহলে আমাদের জড়তায় পতন। আমরা অনন্তের মধ্যে অবাধ গতিকে ধরতে চাই না। অনন্তের আনন্দকে পাওয়াই উদ্দেশ্য। এই পথেই নিয়ে চলে রেডিও তেহরান। সত্য ও সুন্দর যার মর্মকথা।

রেডিও তেহরানের কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানমালার নিয়ত নতুন নতুন উৎকর্ষ ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক এই শুভকামনা রইল। সত্যিই রেডিও তেহরান আমার পূর্ব দিকে সূর্য উঠা ভোরের সকাল, বসন্তের কোকিলের কুহু কুহু তান, যতদিন রবে এ দেহ মন ততদিন যাব শুনে রেডিও তেহরানকে সুখে, দুখে ভেবে আপন।

 

বিধান চন্দ্র সান্যাল ('এ' ক্যাটাগরিতে বিজয়ী)

ঢাকা কলোনী, পোঃ বালুরঘাট

জেলা- দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৪