প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
'সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ উন্মোচনে রেডিও তেহরান অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করছে'
‘আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ'-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন। বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পার্সটুডেতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আজ প্রকাশিত হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সিনিয়র শ্রোতা ও ডিএক্সার এস এম নাজিম উদ্দিনের লেখা।
শীতের প্রকৃতির মাঝে এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রাচুর্য উপলব্ধি করার সময় এখন। চারিদিকে নানা রঙের ফুলের সমারোহ বাংলার প্রকৃতিকে এক অপূর্ব মোহময়ী করে রেখেছে। এই মনোমুগ্ধকর সুগন্ধ আস্বাদন করতে করতে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাই; হারিয়ে যাই ছেলেবেলার সেই শৈশবে। যখন মনের আনন্দে পার্থিব দায়িত্বের বাইরে ছুটে বেড়াতাম পল্লী বাংলার এ পাড়া থেকে সে পাড়া; এ বাগান থেকে ও বাগানে। আহা! কী সব দিন ছিল, তখন যেন...."হারিয়ে যাবার নেই মানা"।
এ সকল ভালোলাগার অনুভূতির সঙ্গে মনপ্রাণজুড়ে ছিল রেডিও। কিন্তু হায়! নিজের কোনো রেডিও ছিল না। বাবার রেডিওটি লুকিয়ে চুরিয়ে মাঝে মাঝে শোনার সুযোগ ঘটতো বৈকি! রাত্রি বেলায় শোবার সময় বাবা রেডিওটি অন করে মাথার কাছে রেখে খবর বা অন্যান্য অনুষ্ঠান শুনতো, এর সাথে আমিও শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়তাম।
সেসময় একটি ভাঙ্গা-চোরা রেডিও আমার হস্তগত হয়। পড়াশোনার ফাঁকে এই ভাঙ্গা যন্ত্রটি দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন কোনায় ঢুঁ মারতাম। এরকমই একদিন পেলাম রেডিও তেহরানকে। যদিও অনেক আগেই বাবার মাধ্যমে রেডিও তেহরানের সাথে পরিচয় ঘটেছিল।
আরো একটু বড় হয়ে একটি পত্রিকায় চোখ পড়ে, -'নিউজ লেটার' পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে ইরান তথা ইমাম খোমেইনি (রহ.) এর বিষয়ে জানার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়; আগ্রহ বাড়ে রেডিও তেহরানের প্রতিও।
"....প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিশ্ব শোষকদের জন্য প্রধান ভীতির কারণ হচ্ছে ইসলাম। কেননা, ইসলাম ই হচ্ছে এমন এক শক্তি যা দুনিয়ার মুসলমানদের কে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম।"
-ইমাম খোমেইনি (রহ.) এর এই অমূল্য বাণী আমার নজর কাড়ে। এ আহ্বান বর্তমানের প্রেক্ষিতে খুবই প্রাসঙ্গিক ও চিরন্তন সত্য।
ক্রমেই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেইনি (রহ.) এর জীবন, ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ও দূরদর্শিতা আমাকে মুগ্ধ-আকৃষ্ট করে তোলে। এরই ফলশ্রুতিতে রেডিও তেহরানের গুণমুগ্ধ শ্রোতায় পরিণত হই।
রেডিও তেহরানের ভালোবাসা আর ভালোলাগার সুগন্ধের আবেশ মাখানো প্রথম পত্রের পরশ পেয়েছিলাম ১৯৯২ সালের এক শীতকালে। আমাদের পরিচিত ডাকপিয়ন সুনীল দাস বাড়ির বারান্দায় রেখে গেল একটি বড় খাম। ভেতর থেকে বার করলাম অমূল্য রতন! একটি ইকো অফ ইসলাম (সাদা কালো) পত্রিকার কপি, ব্রুসিয়ার, অনুষ্ঠানসূচি (রঙিন) আর ইমাম খোমেনী (রহ.) এবং আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ছবি সম্বলিত সুদৃশ্য ক্যালেন্ডার (ইংরেজি ও ফার্সি)।
আহা! সেদিন, কী যে আনন্দ পেয়েছিলাম! ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সেই শুরু; এখনো অব্যাহত আমার সেই আরাধ্য বেতার ও তার সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধ।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা, সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ, মজলুম মুসলমানদের কণ্ঠস্বর ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রচার মাধ্যম হিসেবে আমার প্রিয় বেতার কেন্দ্র রেডিও তেহরান। দিনের পর দিন প্যালেস্টাইনের মজলুম মুসলিম জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে বিরাজ করছে রেডিও তেহরান। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ উন্মোচনে এই বেতার দীর্ঘদিন ধরে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
শ্রোতাপ্রিয় "প্রিয়জন" অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরাও আমাদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। পূর্বে যেমন এই অনুষ্ঠানে শাহনাজ আরেফিন আপা ও মনজুর এলাহী ভাই এবং পরবর্তীতে মুজাহিদুল ইসলাম ভাই-এর সুললিত ও মুগ্ধ কণ্ঠে এই সব মতামতপূর্ণ চিঠির ভাষা পৌঁছে যেত হাজার হাজার শ্রোতার কাছে। তখন যেহেতু কোনো সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না; তাই নিজের মতামতকে তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে রেডিও তেহরান ছিল এক অমূল্য প্লাটফর্ম। আমার মনে আছে ১৯৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রচুর চিঠি লিখতাম রেডিও তেহরানে। সেসময়ে প্রত্যেকটি "প্রিয়জন" আসরে আমার চিঠি স্থান পেত। এসব অনুষ্ঠান টেপরেকর্ডার রেকর্ডিং করেও রাখতাম।
রেডিও শোনার সেই সোনালী দিনগুলিতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তথা ইমাম খোমেইনি (রহ.)-এর বিপ্লবের দেশে যাবার স্বপ্ন দেখতাম। অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ শ্রোতা হবার সুবাদে অনেক সম্মান ও পুরুস্কারও পেয়েছি। "সার্টিফিকেট অফ মেরিট", "শ্রেষ্ঠ শ্রোতা" ও নির্বাচিত হয়েছি রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে। দীর্ঘ দিনের একনিষ্ঠ শ্রোতা হবার সুবাদে ২০০২ সালে রেডিও তেহরান আমাকে আমন্ত্রণ জানাই "ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সম্প্রচার সংস্থা" (IRIB) এর প্রথম রেডিও ও টিভি ফেস্টিভ্যাল এ অংশগ্রহণ এর জন্যে। আমার স্বপ্নের দেশ ইরান ও রেডিও তেহরানকে নিজের দু'চোখ ভোরে দেখা ও উপলব্ধি করার এ অমূল্য অভিজ্ঞতা আমার স্মৃতির মনিকোঠায় আজও জীবন্ত ও ভাস্বর হয়ে আছে। উল্লেখ্য- এ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সেই সময়ে "সাপ্তাহিক কলম" ও " রংধনু" ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
চিঠি লেখা ও রেডিও শোনার এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে, যদিও এখন রেডিও শোনা ও মতামত প্রকাশের অনেক মাধ্যম রয়েছে। এখনও ফেইসবুক ও ওয়েব পেজ এ ঢুঁ মারি নিয়মিত; আঙুলের স্পর্শে নিংড়ে নিই বর্তমানের "পার্স টুডে" কে। আর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় গেয়ে উঠি,-
"কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই-
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।"
লেখক:
এস এম নাজিমুদ্দিন (এ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী)
ইন্টারন্যশনাল ডি এক্স রেডিও লিসেনার্স ক্লাব
গ্রাম ও পোস্ট- বারুইপাড়া, জেলা-মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৬