জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি
ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে ফের সক্রিয় হচ্ছে আইএস জঙ্গিরা
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের সহকারী ভ্লাদিমির ব্রুনকোভ সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে আবারো উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের উত্থানের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়ায় এখনো অন্তত ছয় থেকে দশ হাজার সন্ত্রাসী অবস্থান করছে যারা কিনা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি।
তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলেছেন, কেবল দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণই যথেষ্ট নয় একই সঙ্গে তাদের হুমকি মোকাবেলায় আগাম ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা আরো বলেছেন, এটা ঠিক যে পশ্চিম এশিয়ায় দায়েশ বা আইএস জঙ্গিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু তারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নিজেদের তৎপরতা ও অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় ফের জঙ্গিদের উত্থানের ব্যাপারে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার সতর্কবাণী যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা সিরিয়ার বিভিন্ন জেলখানা থেকে দায়েশ জঙ্গিদেরকে মুক্ত করে দেয়া এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে তাদেরকে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আমেরিকার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ওয়াশিংটন সম্প্রতি এক অভিযান চালিয়ে ইদলিব প্রদেশে দায়েশ বা আইএস জঙ্গি নেতা আবু ইব্রাহিম আল কোরায়েশিকে হত্যার দাবি করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমেরিকা সিরিয়ার জেলখানায় আটক জঙ্গিদেরকে ইরাকে স্থানান্তর করছে এবং ইরাকে অবস্থিত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা ওই দেশটিতে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
এর আগে সিরিয়ার হাসাকা প্রদেশের গভর্ণর জাতিসংঘের বিভিন্ন দফতরের প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছিলেন, দায়েশ বা আইএস জঙ্গিরা হচ্ছে আমেরিকারই ষড়যন্ত্রের ফসল যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও হত্যাকাণ্ড ঘটানো। সিরিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য মোসাআব আল হালাবি বলেছেন, হাসাকা প্রদেশের জেলখানায় দায়েশ জঙ্গিদের হামলায় যে শতশত জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে তার পেছনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাত ছিল।
ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের ব্যাপক তাণ্ডব এবং এই দুটি দেশের বিশাল অংশ তারা দখল করে নেয়ার চার বছর পর ২০১৭ সালে প্রতিরোধ শক্তির কাছে তারা পরাজিত হয়। কিন্তু তারপরও কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী এখনো ইরাক ও সিরিয়ায় রয়ে গেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের ওপর তারা হামলা চালাচ্ছে।
ইরাকের সরকার ও ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী ২০১৭ সালে সন্ত্রাসীদেরকে পরাজিত করে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদেরকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয় এবং রক্তক্ষয়ী ওই যুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে। তবে সে সময় সন্ত্রাসীরা পরাজিত হলেও দায়েশ বা আইএস সন্ত্রাসীরা ইরাকের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে এখনো তৎপর রয়েছে এবং গত দুই মাসে তারা ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক মানুষের ওপর হামলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ইরাকের কিরকুক, সালাউদ্দিন ও দিয়ালা প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, আফগানিস্তানেও সন্ত্রাসী হামলার পেছনে আমেরিকার হাত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওয়াশিংটন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গত কয়েক বছর ধরে উত্তর আফগানিস্তানে দায়েশ সন্ত্রাসীদের সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। রুশ কর্মকর্তারা বহুবার বলেছেন, মার্কিন সরকার তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আফগানিস্তানের দায়েশ বা আইএস সন্ত্রাসীদেরকে অস্ত্রসহ সবরকম সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘও জানিয়েছে, তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেদেশে দায়েশের উপস্থিতি জোরদার হয়েছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন