ইসরাইলের প্রেসিডেন্টের তুরস্ক সফর: এরদোগান আসলে কি চান?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i105034-ইসরাইলের_প্রেসিডেন্টের_তুরস্ক_সফর_এরদোগান_আসলে_কি_চান
একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় দুর্বল পয়েন্ট হচ্ছে তার গোপন ইচ্ছার বিষয়টি শত্রুরা অবহিত হতে পারা এবং তার লক্ষ্য সম্পর্কেও জানতে পারা।
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
মার্চ ১০, ২০২২ ২০:১৮ Asia/Dhaka

একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় দুর্বল পয়েন্ট হচ্ছে তার গোপন ইচ্ছার বিষয়টি শত্রুরা অবহিত হতে পারা এবং তার লক্ষ্য সম্পর্কেও জানতে পারা।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান সবাইকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তুরস্ক হচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামরিক শক্তির দেশ। সুতরাং বৃহৎ শক্তিগুলোকে এ অঞ্চলে জায়গা করতে হলে কিংবা এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বড় কোনো চুক্তি করতে হলে অবশ্যই তুরস্কের অনুমতি নিতে হবে। যদিও এরদোগান সরকার অভ্যন্তরীণ তীব্র সংকটে জর্জরিত এবং তারা সব শ্লোগান থেকে সরে এসেছে এবং সাবেক তুরস্কের দিকে ফিরে যাচ্ছে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিনিধি দলের একের পর এক আমেরিকা ও মিশর সফর এবং সৌদি আরব ও আমিরাতে সফরের জন্য এরদোগানকে আমন্ত্রণ জানানো এবং সর্বশেষ দখলদার ইসরাইলের প্রেসিডেন্টকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানানো এসবই সাবেক তুরস্কের দিকে ফিরে যাওয়ার লক্ষণ। কেননা তুরস্কের অতীত কখনো মুসলমানদের পক্ষে কোনো কাজ করেনি।

ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গতকাল দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আঙ্কারায় এসেছেন এবং দেশটির প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।

তুরস্কে ডলারের বিপরীতে জাতীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি ও  মুদ্রাস্ফীতির কারণে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। তুরস্কের জনগণের জীবন এমন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে যে এমনকি অনেকে পরিপূর্ণ খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান  ও তার উপদেষ্টাদের ধারণা তারা যদি তুরস্ককে অতীতের দিকে ফিরিয়ে নিতে পারে তাহলে হয়তো চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারবে। আর এ কারণে তারা ইসরাইলের প্রেসিডেন্টকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে প্রেসিডেন্ট এরদোগান গত দুই দশকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দিয়ে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া, ২০০৯ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি সুইজারল্যান্ডের ড্যাভসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে গাজায় সামরিক অভিযানের ব্যাপারে ইসরাইলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শিমোন পেরেজের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি আর এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন না। 

এরপর গাজার জনগণের জন্য তুরস্কের একটি ত্রাণবাহী জাহাজ ইসরাইলিরা  ডুবিয়ে দিলে তেলআবিব ও আঙ্কারার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরপর ২০১৮ সালে ইসরাইল ও তুরস্ক একে  অপরের রাষ্ট্রদূতদের বহিস্কার করে। এরপর থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় একদিকে অর্থনৈতিক সংকট অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভের কারণে ইসরাইলি প্রেসিডেন্টকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো যাবে বলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান আশা করছেন।

কিন্তু ইসরাইলের প্রেসিডেন্টের তুরস্ক সফরের ফলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান আরো জটিল সংকটে পড়লেন বলে মনে করা হচ্ছে। তুরস্কের ইসলামি সাআদাত পার্টির মহাসচিব তামাল কারিমুল্লাহ ওগ্লু ৮১টি প্রদেশের জনগণকে ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের তুরস্ক সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ইসরাইলের সঙ্গে এরদোগানের ঘনিষ্ঠতা তার নিজের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। #     

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।