তুরস্কের নীতিনির্ধারক ভ্রাতৃসমাজের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ
-
ইরান ও তুরস্কের পতাকা
পার্সটুডে : পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাসের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তুরস্কের নীতিনির্ধারক ভ্রাতৃসমাজকে সতর্ক করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
পার্সটুডে'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের গত এক বছরের ঘটনাবলী– বিশেষ করে ইসরায়েলের আঞ্চলিক অভিযান, বিশেষত ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধ, ইউরোপীয় ত্রয়ী (ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি) কর্তৃক স্ন্যাপব্যাক সক্রিয়করণ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং দক্ষিণ ককেশাসে আঙ্কারার ভূমিকা পালনের প্রচেষ্টা– তুর্কি ভাইদের জন্য কিছু পরামর্শ প্রদান করা অপরিহার্য করে তুলেছে।
১. ইরানের বন্ধুত্বপূর্ণ অভিপ্রায়:
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান গত কয়েক দশক ধরে তুরস্কের সাথে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছে। ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আঙ্কারা হয়ে আসা সফর এবং তুরস্কের কর্মকর্তাদের ইরান সফর, সেইসাথে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসংখ্য সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি, তেহরানের উত্তর-পশ্চিমা প্রতিবেশীর সাথে সর্বস্তরের সম্পর্ক সম্প্রসারণ এবং সহযোগিতার স্তর উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষার একটি শক্ত প্রমাণ। তুরস্কের প্রতি ইরানের বন্ধুত্বপূর্ণ ও হিতৈষী মনোভাব এবং উদ্দেশ্য তুরস্কের কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের কাছে বারবার স্পষ্ট হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জুন ২০১৬-এর ব্যর্থ অভ্যুত্থান। তখন তেহরানে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত রেজা হাকান তাকিন এ বিষয়ে একটি প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন: "অভ্যুত্থানের রাতে ইরানের সমর্থনের জন্য তুরস্ক অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। এটি একটি সত্যিকারের বন্ধুত্ব। আমরাও ইরানকে সমর্থন করি।" তাই তেহরান এখন তুরস্কের কাছ থেকে একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি আশা করে।
২. ন্যাটো সুবিধা ব্যবহার সম্পর্কে সতর্কতা:
ন্যাটোতে তুরস্কের সদস্যপদ এবং এই পশ্চিমা সামরিক জোটের নীতির সাথে এর কর্মকাণ্ডের সমন্বয়কে বিবেচনায় নিয়ে আঙ্কারার উচিত ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপে বিশেষ করে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সামরিক অভিযানের সময় ন্যাটো/মার্কিন সুবিধা ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে আরও সতর্কতার সাথে অবস্থান নেওয়া এবং কাজ করা। স্বাভাবিকভাবেই, তেহরান আশা করে যে, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সম্ভাব্য সামরিক অভিযানে, আঙ্কারা ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য তার নিজস্ব ভূখণ্ড বা তুরস্কে ন্যাটো/মার্কিন সামরিক সুবিধা ব্যবহারের অনুমতি দেবে না।
৩. ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক:
এরদোয়ানসহ তুরস্কের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ইসরায়েলবিরোধী কঠোর অবস্থান এমনকি এরদোয়ান এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে বাগযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশিত খবর ও প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, আঙ্কারা এবং তেল আবিবের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইলি দৈনিক মা'আরিভ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে তুরস্ক থেকে দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে রপ্তানি প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এসব পণ্য বিকল্প রুটে, বিশেষত গ্রিস হয়ে ইসরায়েলে পাঠানো হচ্ছে। রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আঙ্কারার উচিত হবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রধান শত্রু ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. স্ন্যাপব্যাক এবং নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা:
ইউরোপীয় ত্রয়ী কর্তৃক স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় হওয়ার পরে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর হয়েছে। তুরস্কও ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করেছে এবং তেহরানের উপর তার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে চাপ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সাথে সমন্বয় রেখে এই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। রাশিয়া এবং চীনের মতো, তুরস্কও স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় হওয়ার পরে নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের নিন্দা জানাতে এবং এর বিরোধিতা জোরদার করতে পারত, যা দুই দেশের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যাচ্ছিল।
৫. দক্ষিণ ককেশাস এবং জাঙ্গেজুর করিডোর:
দক্ষিণ ককেশাসে, আর্মেনিয়ার দক্ষিণে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নাখচিভানকে আজারবাইজানের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযোগকারী একটি করিডোর তৈরির জন্য তুরস্ক এবং আজারবাইজানের সমন্বয় ও চাপ – যা ইরেভানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাকু 'জাঙ্গেজুর করিডোর' নামে অভিহিত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থ বিবেচনা না করে নিজস্ব স্বার্থে এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার জন্য আঙ্কারার প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে। ইরানের নীতিগত অবস্থান হল আর্মেনিয়ার ভূখণ্ডের অখণ্ডতা বজায় রাখা, অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতির বিরোধিতা করা এবং জবরদস্তিমূলক যে কোনো ভূ-রাজনৈতিক সীমানা পরিবর্তনের বিরোধিতা করা।#
পার্সটুডে/এমএআর/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।