ফিলিস্তিনে মানবতার ওপর চলমান জুলুম ইতিহাসে বিরল
ইসরাইলের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিবৃতি; বিশ্বকাপে আরবদের প্রতিক্রিয়ায় বিস্মিত তেল আবিব
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি মঙ্গলবার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় বলেছেন, পাকিস্তানের সরকার ও জনগণ ফিলিস্তিনি জাতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তার বার্তায় আরও বলা হয়েছে, সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলের অবৈধ দখলদারির কারণে ফিলিস্তিনিরা কষ্ট পাচ্ছে। এটা পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগজনক। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, দখলদার ইসরাইলের অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণেই তাদের ঔদ্ধত্য বেড়েছে। তারা পাশবিক হামলা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সমাজ যতদিন ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ বন্ধে পদক্ষেপ না নেবে ততদিন ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্টের অবসান হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বার্তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, তারা ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারি এবং হত্যা-নির্যাতনের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত। এই দখলদারিকে ইসলামাবাদ মেনে নেবে না।
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবালও বলেছেন, তাদের সরকারের নীতি সুস্পষ্ট। পাকিস্তান কখনোই ইহুদিবাদী ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না।
পারস্য উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পর পাকিস্তানও এই পথে এগোতে পারে বলে নানা মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে একদল পাকিস্তানি নাগরিক বর্ণবাদী ইসরাইল সফরে গেলে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে। তবে পাকিস্তানের সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানের জনগণও নানা পন্থায় বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কোনো দিনই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ককে মেনে নেবে না। শুধু পাকিস্তান কেন, যেসব আরব দেশের সরকার গত কয়েক বছরে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে সেখানকার জনগণও এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি, মেনে নিতে পারেনি। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে চলতি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে।
আমেরিকার শিকলে বাধা কুকুর হিসেবে খ্যাত অবৈধ ইসরাইল, কাতার বিশ্বকাপকে কাজে লাগিয়ে তাদের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ককে একটা স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশ্বকাপে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিককে এই কাজে নিয়োগ দিয়েছে তেল আবিব। কিন্তু বাস্তবতা দেখে তারা বিস্মিত। আরবরা ইসরাইলি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতেও রাজি হচ্ছে না। ইসরাইলি দৈনিক ইয়াদিউত আহারোনোত এই বাস্তবতা স্বীকার করে লিখেছে, আরব বিশ্বে ইসরাইল যে কতটা ঘৃণিত তা প্রমাণ হয়েছে কাতার বিশ্বকাপে। কেবল ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠী বা সরকারের প্রতিই নয় বরং ইসরাইলের প্রত্যেক নাগরিকের প্রতিও রাস্তাঘাটে, অলিতে-গলিতে জনগণের মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড ঘৃণা।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবতার ওপর যে জুলুম চালানো হচ্ছে তা ইতিহাসে বিরল। এই অন্যায় ও জুলুম মেনে নেওয়া মানে গোটা মানব জাতির অপমান ও অবমাননাকে সহ্য করা। এরপরও ফিলিস্তিনিদের একটা অংশ ইউরোপ, আমেরিকা ও দখলদারদের নানা প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে চুক্তির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সহাবস্থানের চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো দখলদারদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করা হয় নি। এখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়া হয়নি। শরণার্থীদের স্বদেশে ফেরার অধিকার মেনে নেওয়া হয়নি। প্রতিদিনই চলছে নির্মম হত্যা-নির্যাতন। গত সাত দশকে ফিলিস্তিনিরা জবরদখল, হত্যা-নির্যাতন ও নিপীড়ন ছাড়া আর কিছুই পায় নি। #
পার্সটুডে/এসএ/১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।