গাজার চোরাবালিতে ইসরাইলি সৈন্যরা, ফিলিস্তিনি স্নাইপাররা তাদের অপেক্ষায় আছে!
(last modified Sun, 03 Dec 2023 08:13:44 GMT )
ডিসেম্বর ০৩, ২০২৩ ১৪:১৩ Asia/Dhaka

গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অনেক এলাকায় পুনরায় হামলা শুরু করেছে এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর স্থল ইউনিট উত্তর গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশে অনুপ্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শুক্রবার ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর গড়িমসির কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং ইহুদিবাদীরা যুদ্ধ বিরতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় তাদের  হামলার মাত্রা তীব্র করে।

ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিসে অবস্থিত আল-কাররাহ এলাকার আবাসিক ঘড়বাড়িতে পুনরায় হামলা শুরু করেছে। ইহুদিবাদী শাসকদের যুদ্ধের নৌযানগুলি দেইর আল-বালাহ শহরের পশ্চিমে তাদের হামলা পুনরায় হামলা চালিয়েছে। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর কামান গাজার উত্তরে অবস্থিত জাবালিয়া ক্যাম্পের পশ্চিমাঞ্চলেও ব্যাপকভাবে হামলা চালিয়েছে।

যুদ্ধবিরতির পর নতুন দফায় সংঘর্ষ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী সেনাদের হামলায় কমপক্ষে ২৪০ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে এবং৬৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।  

গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামীদের এক ঝাঁক রকেট ইসরাইলের তেল আবিব, আশদোদ, আশকেলন এবং গাজার আশেপাশের অন্যান্য ইহুদিবাদী বসতিগুলোকে টার্গেট করে আঘাত হেনেছে। আবু আলী মোস্তফার ব্যাটালিয়ন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে দখলদারদের পাশবিক হামলার জবাবে "কিসোফিম" শহরে রকেট দিয়ে বোমাবর্ষণের ঘোষণা দেয়। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড তিনটি "জাওয়ারী" ড্রোনের মাধ্যমে দখলদার বাহিনীর অবস্থানকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। .

লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারাও অধিকৃত ফিলিস্তিন ও লেবাননের সীমান্তে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সামরিক ঘাঁটি এবং সামরিক অবস্থানগুলিকে টার্গেট করে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।  

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপ প্রধান সালেহ আল-আরুরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তেল আবিবের সঙ্গে আর কোনো বন্দি বিনিময় করবে না হামাস। তিনি শনিবার আল-জাযিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই মুহূর্তে বন্দি বিনিময় নিয়ে আর কোনো আলোচনা হচ্ছে না। হামাসসহ সকল প্রতিরোধ আন্দেলন এখন এই বিষয়ে একমত যে, গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব পুরোপুরি ও চূড়ান্তভাবে বন্ধ না হওয়ার পর্যন্ত আর কোনো বন্দি বিনিময় হবে না। তিনি বলেন, এখন যারা আমাদের হাতে বন্দি আছে তার হয় ইসরাইলি সেনা সদস্য অথবা সাবেক সেনা। কাজেই তাদেরকে সম্পূর্ণ নতুন শর্তে মুক্ত করবে হামাস।  এই ফিলিস্তিনি নেতা বলেন, আমরা প্রথম দিন থেকে বলে এসেছি, আমাদের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দিদের ফেরত নিতে হলে সকল ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, ইসরাইল যদি মনে করে গায়ের জোরে তারা আমাদের ওপর তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে তাহলে তারা মারাত্মক বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। 

দখলদার ইসরাইলের সেনাবাহিনীর মতে গাজা উপত্যকায় বর্তমানে ১৭ জন নারীসহ ১৩৭ জন ইহুদিবাদী বন্দি রয়েছে। গত সপ্তাহে বন্দি বিনিময়ের সময় ২৪ জন বিদেশিসহ ১১৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

মিশরের স্টেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রধান জিয়া রাশওয়ান বলেছেন, "গাজা উপত্যকায় অস্থায়ী মানবিক যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার জন্য মিশর খুবই দুঃখিত এবং বর্তমানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে ফিরে আসার জন্য তার অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে।"

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সূত্র জানায়, গাজা উপত্যকায় স্থল হামলা আগামী দিনগুলোতে আরো বাড়ানো হবে। ইহুদিবাদী সূত্রের মতে, গাজা উপত্যকায় মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরাইলি বন্দীদের কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে তা যুদ্ধের কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করছে তেল আবিবের শাসক গোষ্ঠী। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপদেষ্টার বরাত দিয়ে বলেছে, গাজা উপত্যকায় একটি বাফার জোন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। 

যাইহোক হামাসসহ অন্যান্য প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল তারা গাজা অঞ্চলের সঙ্গে  ভালভাবে পরিচিত কিন্তু দখলদার ইহুদিবাদী সামরিক বাহিনীর সেই সুবিধা নেই। এই পরিচিতি তাদের শত্রুকে হতবিহ্বল করে দেয়ার জন্য একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে কাজ করতে পারে। একজন চৌকস এবং শক্তিশালী প্রতিরোধকামী স্নাইপার একটি ইউনিট হিসেবে কাজ  করে শত্র পক্ষের বহু সৈন্যকে খতম করার সুুবিধা  পাবে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সেনাবাহিনী যদি গাজায় হামলা জোরদার করে তাহলে তাদেরকে কঠিন মূল্য দিতে হবে এবং অবশিষ্ট বন্দীদের জীবন যারা বেশিরভাগই সৈন্য তাদের জীবন বিপন্ন হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।#

পার্সটুডে/এমবিএ/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।