জুন ২৩, ২০২৪ ১৮:২৭ Asia/Dhaka
  • লেবাননে হামলা করলে কি ইসরাইল বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে যাবে?
    লেবাননে হামলা করলে কি ইসরাইল বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে যাবে?

পার্সটুডে- লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি আমাদেরকে ভীত করে না এবং আমাদের ভয় পাওয়া উচিতও নয়। কারণ, শত্রু ভালো করে জানে যে, আমরা কঠিনতম পরিস্থিতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছি। সেইসঙ্গে সে একথাও জানে যে, আগ্রাসন চালালে তার কপালে কী আছে?

সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহ গত বুধবার হিজবুল্লাহর ফিল্ড কমান্ডার তালেব সামি আব্দাল্লাহ ওরফে হাজি আবুতালেবের শাহাদাত উপলক্ষে এক টেলিভিশন ভাষণে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

আরব রাজনৈতিক ভাষ্যকারের বিশ্লেষণ

হিজবুল্লাহ নেতার ওই ভাষণের পর আরব বিশ্বের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ভাষ্যকার আব্দুলবারি আতওয়ান বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল লেবাননের বিরুদ্ধে কোনোরকম কাপুরুষতা দেখানোর চেষ্টা করলে হিজবুল্লহা তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুসারে, রাই আল-ইয়াওম পত্রিকায় এক সংবাদ বিশ্লেষণে আতওয়ান লিখেছেন: সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ভাষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হলে আমাদেরকে ওই ভাষণের ব্যাপারে তিন পক্ষের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে হবে।  

সাইপ্রাসের প্রতিক্রিয়া

এই সাংবাদিক তার নিবন্ধে বলেন, সবার আগে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিডেস। তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলেছেন, লেবাননের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে সাইপ্রাস জড়িত হবে না।

হিজবুল্লাহর ‘হুদহুদ’ ড্রোন ইসরাইলের জন্য নয়া বিস্ময়

আতওয়ান বলেন, ইসরাইলি গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামরিক বিশেষজ্ঞরা হিজবুল্লাহর হাতে থাকা লাখ লাখ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও রকেটের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এসব সমরাস্ত্রের মোকাবিলায় ইসরাইল সামরিক ও নিরাপত্তাগত দিক দিয়ে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরাইলে তার ‘হুদহুদ’ গোয়েন্দা ড্রোন পাঠানোর পর ইহুদিবাদী কর্মকর্তাদের ঘুম হারাম হওয়ার যোগাড় হয়েছে। গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হুদহুদ ড্রোনটি ইসরাইলের কথিত সমস্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে হাইফা বিমান ও সমুদ্র ঘাঁটিসহ ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোর স্পর্শকাতর ছবি তুলে নির্বিঘ্নে লেবাননে ফিরে গেছে।

ইসরাইল ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মার্কিন সাংবাদিকের স্বীকারোক্তি

রাই আল-ইয়াওম পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে আতওয়ান আরো লিখেছেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক থমাস ফ্রাইডম্যান একথা স্বীকার করেছেন যে, ইসরাইলকে এখন গাজা, লেবানন ও পশ্চিম তীর- এই তিন ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যে ইসরাইলকে আমরা এতদিন চিনতাম তা পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই ইসরাইল এখন ইরান নামক একটি বড় শক্তির মুখোমুখি যে শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রক্সি ও সামরিক সক্ষমতাগুলো ব্যবহার করে ইসরাইলকে ধ্বংস করে দিতে চায়।

আতওয়ান তার নিবন্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আসলে আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের যুদ্ধে জড়াতে চান যার ফলে লাভের ফসল ঘরে তুলবে রাশিয়া ও চীন।

সাইপ্রাস-ইসরাইল গোপন চুক্তির তথ্য এখন হিজবুল্লাহর কব্জায়

আব্দুলবারি আতওয়ান আরো বলেন, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এই প্রথমবারের মতো ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ইউরোপীয় দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসকে চোখরাঙানি দিয়েছেন এবং দেশটির বিমানবন্দরসহ অন্যান্য স্থাপনায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন। এই আরব রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলেন, হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সূত্রে নিখুঁত খবর পাওয়ার পরই এই হুমকি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে, গত এপ্রিলে সাইপ্রাসের একটি পাহাড়ি এলাকায় স্বাগতিক দেশের সঙ্গে ইসরাইলের একটি যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই পাহাড়ি এলাকার সঙ্গে দক্ষিণ লেবাননের পাহাড়ি এলাকার মিল রয়েছে।

সেইসঙ্গে হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সূত্র আরো খবর পেয়েছে, ইসরাইল ও সাইপ্রাস এমন একটি চুক্তি করেছে যার ভিত্তিতে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরাইলের বিমানবন্দরগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে সাইপ্রাস তার বিমানবন্দরগুলোকে ইসরাইলের সামরিক ও বেসামরিক বিমানগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দেবে।

হুদহুদ শুধু গোয়েন্দা ড্রোন নয় তার রয়েছে হামলা চালানোর শক্তি

এই আরব রাজনৈতিক ভাষ্যকার আরো লিখেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলি জেনারেলরা গত ১০ বছর ধরে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির ওপর গভীর নজর রেখে আসলেও হিজবুল্লাহর হুদহুদ ড্রোনের সক্ষমতা দেখে তারা হতচকিত হয়ে পড়েছেন। তারা একথা উপলব্ধি করেছেন যে, হুদহুদের রয়েছে অসম্ভব দ্রুতগতি এবং রাডার ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত নীচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সক্ষমতা। সেইসঙ্গে এই ড্রোনে উচ্চমাত্রার বিস্ফোরকসমৃদ্ধ ওয়ারহেডও বসানো যায়। অর্থাৎ হিজবুল্লাহ চাইলে এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে ইসরাইলের স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে পারবে।

আত্মিক মনোবল ও সামরিক শক্তির দিক দিয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন আতওয়ান। তিনি বলেন, ঠিক এ কারণে সম্প্রতি আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি লেবানন সফরে গিয়ে খালি হাতে ওয়াশিংটনে ফিরে গেছেন।

লেবাননে হামলা চালানোর আগেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে তেল আবিব

এই আরব বিশ্লেষক তার নিবন্ধের শেষাংশে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের হুমকির প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন: গ্যালান্টের মতো ইহুদিবাদী কর্মকর্তারা হিজবুল্লাহকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু তার যদি সেরকম কোনো ক্ষমতা থাকত তাহলে তিনি হয় তা বাস্তবায়ন করতেন অথবা চুপ থাকতেন; ফাঁকা বুলি আওড়াতেন না। আতওয়ান বলেন, তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, লেবাননের রাজধানী বৈরুতের শহরতলীতে ইসরাইলের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আগেই তেল আবিব বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।#

পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/ ২৩

ট্যাগ