গাজাকে নিয়ে ইসরায়েলের নতুন ষড়যন্ত্রের স্বরূপ
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i151010
পশ্চিম এশিয়া বিষয়ের বিশেষজ্ঞ জর্জিও ক্যাফিরো বলেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই গোটা গাজা দখলের পরিকল্পনাকে অপরিহার্য বলে মনে করেন।
(last modified 2025-08-08T09:45:07+00:00 )
আগস্ট ০৭, ২০২৫ ১৭:৪৬ Asia/Dhaka
  • পশ্চিম এশিয়া বিষয়ের বিশেষজ্ঞ  জর্জিও ক্যাফিরো
    পশ্চিম এশিয়া বিষয়ের বিশেষজ্ঞ জর্জিও ক্যাফিরো

পশ্চিম এশিয়া বিষয়ের বিশেষজ্ঞ জর্জিও ক্যাফিরো বলেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই গোটা গাজা দখলের পরিকল্পনাকে অপরিহার্য বলে মনে করেন।

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নির্মূল বা দুর্বল করতে ব্যর্থ হয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন গোটা গাজা উপত্যকা দখল করার কথা বলছেন তার কয়েকজন চরমপন্থী মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। 

ইসরায়েলের সন্ত্রাসী প্রধানমন্ত্রীর দাবি এ পরিকল্পনা হল সংযুক্তিকরণ, কিন্তু বাস্তবে তা হলো গাজার সম্পূর্ণ দখল। মঙ্গলবার একটি সামরিক ঘাঁটিতে নতুন বাহিনীকে তিনি বলেন, "গাজায় শত্রুদের পরাজিত করা, আমাদের জিম্মিদের মুক্ত করা এবং গাজা যেন আর কখনও ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করা এখনই প্রয়োজন।"

"আমরা এই অভিযানগুলো বা মিশনগুলোর কোনওটিতেই হাল ছাড়ছি না," তিনি বলেন, "আগের চেয়েও বেশি সেনা" প্রস্তুত করা হচ্ছে।

পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক জর্জিও ক্যাফিরো বলেছেন যে গাজাকে ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত করা সংক্রান্ত নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে তার চরমপন্থী অংশীদারদের সন্তুষ্ট করার জন্য একটি হতাশাজনক ছাড় হিসাবে দেখা যেতে পারে, যে নেতানিয়াহু অতীতে অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ বা পবিত্র স্থানগুলোতে উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নেয়ার মতো নানা ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী পদক্ষেপ নিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের এবং তার নানা দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার উপায় হিসাবে ব্যবহার করেছে। 

ক্যাফিরো জোর দিয়ে বলেন: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তার জোটে চরমপন্থী মন্ত্রীদের অব্যাহত অংশগ্রহণকে কেবল একটি রাজনৈতিক সম্পদ হিসেবেই নয়, একইসঙ্গে তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য একটি প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবেও দেখছেন বলে মনে হচ্ছে।

নিউ আরব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই বিশ্লেষণে তিনি বলেছেন: "সাম্প্রতিক মাসগুলিতে নেতানিয়াহু ধারাবাহিকভাবে অতি-ডানপন্থী মন্ত্রীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে নিয়েছেন, এমনকি যখন এটি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন করেছে অথবা অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, গাজা দখলের ধারণা যা আগে থেকেই উত্থাপিত হয়েছিল, তা এখন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। চরমপন্থী শক্তির আধিপত্যে থাকা তার ভঙ্গুর জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য নেতানিয়াহুর উপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই প্রস্তাবটিকে কেবল রাজনৈতিক কৌশল বা মহড়া বলে উপেক্ষা করা বোকামি হতে পারে।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে নেতানিয়াহুর গাজা সংযুক্তির কথা যা আসলে গাজার দখল, অপরিবর্তনীয় উত্তেজনার দিকে একটি সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় যা গাজার ভবিষ্যত এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলবে তা এই দখল স্বল্পমেয়াদী হোক বা দীর্ঘমেয়াদী যা-ই হোক না কেন।

কাফিরো বলেন: "বিশ্ব গাজায় ক্ষুধা প্রত্যক্ষ করছে, যেখানে দুর্ভিক্ষ এই উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিদিন শিশুসহ ফিলিস্তিনিদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল তার ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেই চলেছে।" যা টিকে আছে তা হল কেবল বিশাল ধ্বংসস্তূপের মাছে ফিলিস্তিন নামক ভূখণ্ড যেখানে ব্যর্থ হয়েছে কূটনীতি ও অব্যাহত রয়েছে গণহত্যা তথা জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। 

এদিকে, রিয়াদের কিং ফয়সাল সেন্টারের একজন সিনিয়র ফেলো জোসেফ এ. কেচিচিয়ান দ্য নিউ আরবকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন: "নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল এবং তার এ সভায় সবচেয়ে উগ্র চরমপন্থী সদস্যদের ধরে রাখতে তাকে ক্রমাগত সমন্বয় সাধন করতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ, নেতানিয়াহু যদি সত্যিই গাজা দখলের কথা বিবেচনা করে তাহলে তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।"

তিনি আরও বলেছেন: "যদি গাজাকে সংযুক্তও করা হয়, তবুও গাজা পুনর্নির্মাণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ হবে যা ইসরায়েলের নেই। যদিও খুব কম লোকই এই উপত্যকাটিকে প্রাচ্যের মোনাকোতে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক হবে। এ সংযুক্তির ফলে ইসরায়েল সমুদ্র উপকূলীয় সম্পদ, [প্রধানত] প্রাকৃতিক গ্যাসকে নিজের বলে দাবি করতে পারে, কিন্তু এটি হবে চুরি যা বিশেষ ধরনের নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে ইসরায়েলের জন্য।" #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।