ইয়েমেনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নবায়ন: হামলা চালাতে সৌদিকে সবুজ সংকেত
ইয়েমেনের গণপ্রতিরোধ বাহিনী 'আনসারুল্লাহ'র অন্যতম শীর্ষ নেতা হাজ্জাম আল আসাদ বলেছেন, সৌদি বর্বর আগ্রাসন অব্যাহত থাকার পেছনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবগুলো দায়ী। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ নবায়ন করার একই সময়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট সামরিক আগ্রাসন জোরদার করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদ গত সোমবার ইয়েমেনের ওপর আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নবায়ন করে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের সমর্থন নিয়ে সৌদি আরব ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনে ব্যাপক হামলা শুরু করে এবং এরপর দেশটির বিরুদ্ধে আকাশ, স্থল ও সমুদ্র পথে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আমেরিকা, ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্যের আরো কয়েকটি দেশের দেয়া অস্ত্র ব্যবহার করে সৌদি আরব গত প্রায় তিন বছর ধরে ইয়েমেনে গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি দেশটির বহু অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে এবং এ বর্বর আগ্রাসন এখনো অব্যাহত আছে।
তবে ইয়েমেন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা থেকে বোঝা যায়, সৌদি আরব কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। রিয়াদ ভেবেছিল মাত্র দুই অথবা তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা ইয়েমেন দখল করে নিতে পারবে। কিন্তু গত তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধে কোনো সাফল্যই অর্জন করতে পারেনি। মিশরের আল-বাদিল বার্তা সংস্থার বিশ্লেষক খালেদ আল মোনায়েম এ ব্যাপারে এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, "ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আগ্রাসন চতুর্থ বছরে পড়তে যাচ্ছে কিন্তু রিয়াদ এখন পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারেনি এবং সৌদি আগ্রাসনের ফলে কেবল ইয়েমেনের নিরীহ মানুষ হতাহত হচ্ছে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের দেয়া অস্ত্রের আঘাতে যারা মারা যায়নি তারাও অন্যায় অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে কলেরাসহ নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিসহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।"

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর অন্যায় আচরণ অব্যাহত রয়েছে। তারা সবকিছু জেনেও সৌদি আরবের প্রতি সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন কোনো রাখঢাক না করেই ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে তথ্য সরবরাহ করা এবং জঙ্গি বিমানের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর প্রবল চাপের মুখে নিরাপত্তা পরিষদ অবরুদ্ধ ও যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেনের জনগণের প্রতি সমর্থন দেয়ার পরিবর্তে এবং যুদ্ধ বন্ধের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সৌদি আরবের সমর্থন দিচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপ সৌদি আরবকে সমর্থন দেয়ারই প্রমাণ। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার অর্থ হচ্ছে, আগ্রাসন চালানোর জন্য সৌদি আরবকে সবুজ সংকেত দেয়া। এ ধরণের পদক্ষেপ খোদ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩