ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জেদ্দার বৈঠক কি সফল হবে?
বিশ্বের প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় এসব দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
মূলত রাশিয়াকে দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন করে চূড়ান্তভাবে দেশটিকে পরাজিত করার লক্ষ্যে আগামী মাসগুলোতে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জেলেনেস্কি এই বৈঠকের আয়োজন করছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে। গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা তার দেশের রাষ্ট্রদূতদের একটি জরুরি বৈঠকে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং দেশের বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা বলেন। জেলেনেস্কি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে তার রাষ্ট্রদূতদের বলেন যে তারা যেন আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে, সাংগঠনিক বা মিডিয়া, সাংস্কৃতিক বা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে মিত্রদের এবং এখন পর্যন্ত যেসব দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করছে তাদের বোঝান যে ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে রাশিয়ার সম্পূর্ণ পরাজয়।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে ইউক্রেনকে তার পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন ধরে রাখতে হবে। ইউক্রেনের এই পাল্টা হামলায় কিছু অর্জন হয়েছে কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। এই দেশটিকে এখন ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয় এমন দেশগুলিকে কাছে টেনে এই যুদ্ধে তাদের সমর্থন বাড়াতে হবে। তিনি মনে করেন যে যুদ্ধের গতিপথ ইউক্রেনের পক্ষে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবেন এবং ইউক্রেনের সেই অঞ্চলগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন যা রাশিয়া সামরিক উপায়ে তার ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত করেছে। এই বিষয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ধীরে ধীরে যুদ্ধ রাশিয়ার মাটিতে এবং সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছে যাবে এবং এটি একটি অনিবার্য, স্বাভাবিক এবং সম্পূর্ণ ন্যায্য প্রক্রিয়া।
ইতিমধ্যে, ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে উল্লেখযোগ্য ইউক্রেনীয় সেনার হতাহতের সংখ্যা এবং সামরিক সরঞ্জাম হারানোর পরিসংখ্যান থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে জেলেনস্কি রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে তার দেশ থেকে বিতাড়িত করার পথে কঠিন চাপে রয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণের শুরু থেকে ৪৩ হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়াও, ৪ হাজার ৯০০টি ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জামও ধ্বংস হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জেদ্দার বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অনেক দেশ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে কিয়েভকে সাহায্য করার এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে বৈরী অবস্থান গ্রহণের কোনো ইচ্ছা নেই। সৌদি আরব এবং চীন এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া এই বৈঠকে রাশিয়ার উপস্থিতির ওপর জেদ্দা আলোচনার সাফল্য নির্ভর করছে বলেও ঘোষণা দিয়েছে ব্রাজিল। নিউইয়র্ক টাইমস এ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদনে লিখেছে, ইউক্রেনের যুদ্ধের অর্থনৈতিক চাপের কারণে সমস্ত দেশ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আগ্রহী, তবে এক্ষেত্রে রাশিয়াকে মুখোমুখি দাঁড়ানোর করানোর তাদের এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয় বলে পত্রিকাটি তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছে। #
পার্সটুডে/বাবুল আখতার/৫