কেন কিছু মার্কিন কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে জাপানকে হেয় করছেন?

১৯৪৫ সালের আগস্টে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার পক্ষে যুক্তি দেয়া নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে জাপানে উদ্বেগ বেড়েছে। টোকিও এরইমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কিত ব্যাখ্যার বিরোধিতা করে, ওয়াশিংটনকে তার অবস্থান জানিয়েছে। কিন্তু তাতে মার্কিন কর্মকর্তারা কোনো পাত্তা দেয়নি।

আমেরিকার রিপাবলিকান দলের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম গত ৮মে একটি সভায় জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন করার সময় বক্তব্য দিতে গিয়ে বিতর্কিত ওই এই মন্তব্যটি করেছিলেন। এছাড়া, একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম জাপানে পরমাণু বোমা হামলা চালিয়ে সেদেশের জনগণকে হত্যা করাকে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেছিলেন। একই সাথে তিনি মার্কিন যুদ্ধবাজ ইতিহাসবিদদের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছেন যদি আমরা পরমাণু বোমা মেরে জাপানিদের হত্যা না করতাম তাহলে যুদ্ধ বন্ধ হতো না।

 অবশ্য জাপানি নাগরিকদের হত্যার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করেনি। যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এখনো তারা প্রতারণাপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরে জাপানসহ বিশ্বের মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে।

সিনেট কমিটির বৈঠকে লিন্ডসে গ্রাহাম ইসরায়েলকে শক্তিশালী অস্ত্র দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

জাপানের মন্ত্রীপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের এই মন্তব্যকে "খুবই দুর্ভাগ্যজনক" বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, "আমেরিকার পারমাণবিক বোমা হামলায় বহু লোক প্রাণ হারিয়েছিল, বিভিন্ন ধরনের রোগসহ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছিল এবং অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছিল।"

তবে, লিন্ডসে গ্রাহামের এ বক্তব্যে দুর্বল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাপান সরকার। জাপান সরকার কেবল মার্কিন সরকার এবং গ্রাহামকে জানিয়েছে যে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

দুর্ভাগ্যবশত, জাপানি ইতিহাসবিদ এবং মিডিয়াগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারমাণবিক বোমা হামলার পরিণতি ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালায়নি।

বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আমেরিকার সাথে জাপানের উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা এবং আনুগত্য বজায় থাকা সত্ত্বেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত  ১মে জাপান, চীন এবং রাশিয়াকে "বিদেশী বিরোধী" বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু তারপরও টোকিও সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জোরালো কোনো প্রতিবাদ আসেনি।

দেখা যাচ্ছে যে কিছু মার্কিন সিনেটর বিশেষ করে লিন্ডসে গ্রাহামের মত ব্যক্তিরা আমেরিকার রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য এবং জাপানের সরকার ও জাতির উপর আমেরিকার মনস্তাত্ত্বিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে জাপানকে অপমান করতে চাইছেন। যা কিনা জাপানি জাতিকে ইতিহাসের বেদনাদায়ক স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, জাপানিদের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে। ব্যাপক ক্ষমতাধর ও একটি বুদ্ধিমান জাতি হয়েও কেন তারা পাশ্চাত্যের মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছুক নয় সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৬