সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪ ১৮:১৮ Asia/Dhaka
  •  'বিশ্বে অর্থনৈতিক গতি আনতে এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি হ্রাসে নয়া হাতিয়ার'

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডি ডলারাইজেশন বা ডলার বিকেন্দ্রীকরণের নীতি বিশ্বের অনেক দেশের এজেন্ডায় রাখা হয়েছে বিশেষ করে যেসব দেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নীতির শিকার হয়েছে সেসব দেশে এই তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

বিকেন্দ্রীকরণের দিক থেকে কেবলমাত্র রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময় এবং বিভিন্ন দেশ এবং আঞ্চলিক ব্লকের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বৃদ্ধিকেই বিবেচনা করা হয়নি তবে ব্রিকস গ্রুপের মতো বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং সংস্থাগুলো এই ক্ষেত্রে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। পার্সটুডে অনুসারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে এই বিষয়ে বলেছিলেন,  লেনদেনে ব্যবহৃত মুদ্রা বিশ্ব অর্থনীতিতে সেই দেশের ভূমিকা দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। বিশ্বের দক্ষিণ দেশগুলোর বিশ্বব্যাপী জিডিপির ৫০ ভাগের বেশি যা স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় মুদ্রার ব্যবহারে অগ্রাধিকার পরিবর্তন করবে।

আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা নীতিগুলি ডলারকে শাসন করার একটি কৌশল

প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াশিংটন এবং তার মিত্রদের নীতি বিশেষ করে ওয়াশিংটনের নীতিগুলো মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে চাপ দেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার নীতি ভুক্তভোগী দেশগুলোকে তাদের মুদ্রার পোর্টফোলিও থেকে ডলার কমাতে এমনকি তা পুরোপুরি বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এখন রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে বেশিরভাগ বাণিজ্য রুবেল এবং ইউয়ানের ভিত্তিতে হচ্ছে। এছাড়াও, চীনের অনেক অংশীদার ইউয়ান মুদ্রা ব্যবহার করে তাদের বেশিরভাগ বাণিজ্য লেনদেন করে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ স্টিফেন জেন  এবং আমেরিকার ব্যাংক মরগান স্ট্যানলি এই প্রসঙ্গে জোর দিয়ে বলেছে,  গত ১৫ বছরের তুলনায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্কিন ডলার থেকে দূরে সরে যাওয়ার বৈশ্বিক পদ্ধতির পরিবর্তনের গতি ১০ গুণ বেড়েছে।

ব্রিকসের গ্রহণযোগ্যতা এবং এই অর্থনৈতিক ফোরামে যোগদানের জন্য বিভিন্ন দেশের অনুরোধ বিশ্ব অর্থনীতির লেনদেন থেকে ডলার বাদ দেওয়ার জন্য দেশগুলোর ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার উদাহরণ। ব্রিকস সদস্য দেশগুলো ঘোষণা করেছে যে তারা ভবিষ্যতে তাদের লেনদেনে দেশীয় মুদ্রা ব্যবহার করতে চায় এবং কিছু সময়ের পরে একটি সাধারণ ডিজিটাল মুদ্রার সঙ্গে ডলার প্রতিস্থাপন করতে চায়।

ডিজিটাল মুদ্রা ডলারের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে

বিভিন্ন দেশ এখন একটি সাধারণ ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে, যা ডলারের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা যেতে পারে।

ব্রিক্স ডিজিটাল মুদ্রা ব্লকচেইন প্রযুক্তির কৌশল ব্যবহার করতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থায়নের ডিজিটালাইজেশনের জন্য একটি উন্নত সমাধান বের করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিকল্পটি বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্ত লেনদেন সহজতর করবে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে বাড়িয়ে তুলবে। প্রকৃতপক্ষে,ব্রিকস মুদ্রার প্রবর্তন করে ডলারকে বাদ দেয়ার মত একটি সাহসী পদক্ষেপের প্রয়োজন যেটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থায়নে মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে।

নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় ডি-ডলারাইজেশন

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্বাহী পরিচালক ক্রিস্টিনা জর্জিয়েভা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, "বিশ্বের মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবে মার্কিন ডলার থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয়ে গেছে।" আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কথায় দেখা যাচ্ছে যে ডলার বিকেন্দ্রীকরণ প্রকল্প জনসাধারণের চিন্তা জগতে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে এবং ডলার বাদ দিয়ে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আর্থিক চুক্তির প্রসার ঘটছে।

একই প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেফ বোরেলও স্বীকার করেছেন.  আমেরিকা তার আধিপত্যবাদী অবস্থান হারিয়েছে এবং ১৯৪৫ সালের পর বহুপাক্ষিক বিশ্ব ব্যবস্থা তার স্থান হারাচ্ছে।

ইরান এবং ডলার বিকেন্দ্রীকরণ নীতি

ইরানও সেই দেশগুলোর মধ্যে একটি যারা ডি ডলারাইজেশন নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এই বিষয়ে এটি এই বছরের শুরু থেকে ব্রিক্স-এ যোগ দিয়েছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কর্মকর্তারা সবসময় আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা নীতির সমালোচনা করে আসছেন। কারণ ডলারকে ইরানের উপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ওয়াশিংটন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা কমাতে এবং অন্যান্য মুদ্রা থেকে অর্থনীতির জন্য একটি কার্যকরী উপায় তৈরি করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে, ডি-ডলারাইজেশনের জন্য ইরানের সমাধানগুলির মধ্যে একটি হল রাশিয়া ও চীনের সাথে আর্থিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ব্রিকসে কার্যকলাপ।

ডি ডলারাইজেশনের পর নতুন সুযোগ

এটা মনে হয় যে  ডি ডলারাইজেশনের প্রক্রিয়াটি মার্কিন ডলারের আধিপত্য হ্রাস করার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান আর্থিক ব্যবস্থায় দেশগুলো অধিকতর সহজ নীতি গ্রহণ করতে পারবে যার মাধ্যমে তারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কে বাাড়িয়ে তুলতে পারবে। এই প্রক্রিয়া বিশ্ব অর্থনীতির পটভূমি বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছ। এছাড়া  চীন, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশে নতুন সুযোগ আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

আমেরিকান ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক সাইদ মোহাম্মদী কাভান্দ লিখেছেন,  যৌক্তিকভাবে এবং প্রথম পর্যায়ে যা কল্পনা করা যেতে পারে তা হল মার্কিন ডলারকে কেন্দ্র করে একটি ইউনিপোলার শাসন থেকে বহুমেরুতে পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রেটন উডস সিস্টেমের পতনের পর এটিই হবে বৈশ্বিক অর্থায়নে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন; এমন পরিবেশে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে,একটি নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে শাসন করবে।

পার্সটুডে/এমবিএ/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ