গাজা উপত্যকা দখলের চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
-
গাজা উপত্যকা দখলের চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
পার্সটুডে- বিভিন্ন খবরে জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখলের প্রচেষ্টার পাশাপাশি জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের ওপর ইসরাইলের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার পায়তারা করছেন।
হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নতুন পরিকল্পনার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ইসরাইলিদের দ্বারা সৃষ্ট ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন: "গাজা উপত্যকা ফিলিস্তিনিদের জন্য এখন আর উপযুক্ত জায়গা নয় এবং তাদেরকে অবশ্যই ভালো ও নতুন জায়গা দিতে হবে।" পার্সটুডে জানিয়েছে, মার্কিন সরকারের এই নতুন অবস্থান থেকে বোঝা যায় যে ট্রাম্প বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সহযোগিতায় অবশিষ্ট ফিলিস্তিনি ভূমি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চান।
এর আগে, ট্রাম্প বলেছিলেন যে গাজার ধ্বংসাবশেষ পুনর্গঠনের জন্য গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের মিশর এবং জর্ডানে স্থানান্তরিত করা উচিত। কিন্তু এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও এক ধাপ এগিয়ে গাজার ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব এবং ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীরে অবস্থিত এই ছোট ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মালিকানার দাবি করেছেন।
ট্রাম্প এমন একজন ব্যক্তি যিনি তার যৌবনে ভবন নির্মাণ শিল্পে কাজ করতেন এবং এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি মানবিক অজুহাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার অধিবাসীদের অন্যত্র অপসারণ এবং সেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলো পুনর্নির্মাণের কথা বলছেন। এমনকি তিনি এই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষের মতামত নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করছেন না। তিনি গাজায় বসবাসকারী ২৫ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে, ৩০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পশ্চিম তীরকে ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের দখলিকৃত অঞ্চলের সাথে সংযুক্তির সম্ভাবনাও কথাও বলেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ইচ্ছা থেকে বোঝা যায়, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের চিন্তাভাবনা থেকে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সরে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটাও বোঝা যায় তারা অবশিষ্ট ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলো দখল করবে।
অবশ্য, এখন পর্যন্ত সমস্ত আরব দেশ সর্বসম্মতভাবে ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিশর এবং জর্ডানে স্থানান্তরিত করার ধারণার বিরোধিতা করেছে। তবে, এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে যে, ট্রাম্প আরব দেশগুলো বিশেষ করে মিশর ও জর্ডানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি হুমকির ভাষাও প্রয়োগ করবে। অন্য কথায়, যদি মার্কিন সেনাবাহিনীকে গাজায় পাঠানো হয় এবং এ অঞ্চলের উপর দখল দরিত্ব কায়েম করে এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে মিশরে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে কায়রো এ পদক্ষেপ ঠেকানোর সাহস পাবে না।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ৮০ বছর ধরে দখলদারিত্ব, যুদ্ধ এবং হত্যাযজ্ঞের মুখেও যে ফিলিস্তিনি জাতি তাদের ভূমি মুক্ত করার আদর্শ ত্যাগ করেনি, তারা চুপ থাকবে না এবং মার্কিন দখলদারিত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। অতএব, পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তিপূর্ণ জীবন প্রদানে ট্রাম্পের দাবির বিপরীতে, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসলে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে নতুন যুদ্ধের আগুন জ্বালাতে চাইছেন, যার আগুন কেবল এই অঞ্চলের দেশগুলোকেই পোড়াবে না ইসরাইলকেও জ্বালিয়ে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন লাখ লাখ ফিলিস্তিনির উপর অবিচার নির্যাতন দূর হবে এবং তারা তাদের স্বপ্নের দেশ অর্জন করবে, কেবল তখন ফিলিস্তিনের ভূমিতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রকৃতপক্ষে, গাজায় মার্কিন মালিকানার দাবী কিংবা পশ্চিম তীরের উপর ইসরাইলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে মূলত ফিলিস্তিন ইস্যুকে চিরতরে মুছে ফেলার চক্রান্ত চলছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।