তেহরানের পাশে দাঁড়ালো আঙ্কারা
তুর্কি দলগুলো সর্বসম্মতিক্রমে ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে
-
তেহরানের পাশে দাঁড়ালো আঙ্কারা
পার্সটুডে-ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকারের সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর, তুরস্কের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে তার মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত আঞ্চলিক উন্নয়ন আবারও দেখিয়েছে যে দেশগুলোর ভূ-রাজনৈতিক এবং আদর্শিক অবস্থান তাদেরকে আন্তঃ-আঞ্চলিক সংকটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে। পার্সটুডে আরও জানায়, ইরানের ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলি আক্রমণ কেবল একটি সামরিক ঘটনাই ছিল না বরং একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্পও ছিল। যার বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই প্রেক্ষাপটে, রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে নাগরিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বসহ তুর্কি কর্মীদের প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব মূল্যবোধ এবং রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্য থেকে এই সংকটের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি; আত্মরক্ষা ইরানের স্বাভাবিক অধিকার
তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) দ্ব্যর্থহীনভাবে ইহুদিবাদী ইসরাইলের আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে। একে পার্টি বলেছে: ইরানের আত্মরক্ষার অধিকারকে তারা জোরালোভাবে সমর্থন করে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে "রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ" এবং "আন্তর্জাতিক ডাকাতি" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জোরালোভাবে বলেছেন: তুরস্ক এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাঁর দলের পাশাপাশি তুর্কি সংসদও ইসরাইলের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দল; বিদেশী শত্রুরা তুরস্কের জন্য হুমকি
ক্ষমতাসীন জোটে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রধান মিত্র ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টিও ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অবস্থানকে সমর্থন করেছে এবং ইসরাইল হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তবে, দলের নেতা, দেভলেত বাহচেলি, জোর দিয়ে বলেছেন: বিদেশী শত্রুরা তুরস্ককেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
ইসরাইলের সাথে আরও কঠোরতার আহ্বান পিপলস রিপাবলিকান পার্টির
প্রধান তুর্কি বিরোধী দলও ইরানের বাড়িঘর এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা সরকারকে আরও স্পষ্ট এবং আরও সিদ্ধান্তমূলক অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। দলের নেতা, ওজগুর ওজেল, ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে "অবৈধ এবং উন্মাদনা" বলে মন্তব্য করেছেন এবং সম্ভাব্য কোনো আক্রমণে তুর্কি সামরিক ঘাঁটির সহায়ক ভূমিকা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
ইরানকে রক্ষা, ইসলামী বিশ্বকে রক্ষা: সাদাত পার্টি
ইসলামী বক্তব্য এবং ইহুদিবাদ-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সাদাত পার্টি ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত স্পষ্ট এবং কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতা মাহমুদ আরিকান ইসরাইলি আক্রমণগুলোকে "কাপুরুষোচিত" এবং "নিষ্ঠুর" বলে বর্ণনা করেছেন। সেইসাথে তিনি ওই হামলাকে সমগ্র মসিলিম জাতির জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন। তেল আবিবের প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নৃশংস আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী একটি ইসলামী প্রতিরোধ ফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সরাসরি হস্তক্ষেপের চেয়ে কূটনীতিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত: গুড পার্টি
তুরস্কের সক্রিয় দলগুলোর অন্তর্ভুক্ত গুড পার্টি এখনও একটি স্বাধীন সরকারী অবস্থান ঘোষণা করে নি, তবে তাদের অতীতের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে, তুরস্কের জাতীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে একটি রক্ষণশীল অবস্থান গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মনে করে। দলটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং উত্তেজনার কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেয় এবং দলীয় দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে দূরে রাখে।
প্রতিরোধকামী জাতিই বিজয়ী: সমাজতান্ত্রিক দলগুলো
তুর্কি সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর একটি জোটও মার্কিন সরকার সমর্থিত ইহুদিবাদী ইসরাইলের ইরানের ওপর আক্রমণের ঘটনায় ইরানের সমর্থনে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। ওই আক্রমণের ঘটনায় ইরানের একদল বিজ্ঞানী, সিনিয়র সামরিক কমান্ডার এবং কয়েক ডজন ইরানি নাগরিক শহীদ হয়েছেন। এই দলগুলো সাম্প্রতিক আক্রমণগুলোকে গাজায় গণহত্যার ধারাবাহিকতা বলে মনে করছে। সেইসাথে প্রতিরোধকামী জাতিই বিজয়ী বলে উল্লেখ করেছে।
ইসরাইলের তীব্র সমালোচনায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট তুর্কিয়ে পার্টি এবং ওয়াতান পার্টি
হোসেইন বাশের নেতৃত্বে ইন্ডিপেন্ডেন্ট তুরস্ক পার্টি, ইসরাইলি আক্রমণগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছে। ওয়াতান পার্টিও সমাবেশ এবং মিডিয়া কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি সমর্থনে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সেইসাথে আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছে ওয়াতান পার্টি।
নাগরিক কর্মী এবং বেসরকারী সংস্থা; স্পষ্টবাদী অবস্থান থেকে সতর্ক নীরবতা
মাজলুম-দের, আইএইচএইচ এবং এজিডির মতো সংস্থাগুলোও ইসরাইলি আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এই আগ্রাসনকে ইসলামী বিশ্বের বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে মূল্যায়ন করেছে। ইহুদি আধিপত্যবাদী প্রকল্পের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সংহতি এবং ইসলামী ঐক্যের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
মানবিক ও সামাজিক সংকটের উপর মনোযোগ দিন: ত্রাণ ও পরিবেশ সংস্থা
কিজিলে, আকুট এবং টেমার মতো সংস্থাগুলো রাজনৈতিক কোনো অবস্থান নেয় নি বরং মানবিক সংকট নিরসন এবং শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য তাদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছে। এই সংস্থাগুলো জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কেও সতর্ক করেছে।
ন্যাটোসহ পশ্চিমা আধিপত্যের বিরোধিতায় বামপন্থী সংগঠনগুলো
হাকেভলেরি এবং টিজিবি'র মতো গোষ্ঠীগুলো তুরস্ককে সাম্রাজ্যবাদী ন্যাটো ও পশ্চিমাদের সাথে সহযোগিতা ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ার প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তবে ইরানের প্রতি সরাসরি সমর্থন ঘোষণা করে নি তারা।#
পার্সটুডে/এনএম/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।