গার্ডিয়ান যেভাবে দখলদার ইসরায়েলের মিথ্যা দাবিগুলোর পুনরাবৃত্তি করছে
ইহুদি-বিদ্বেষের মিথ্যা দাবি তুলে ফিলিস্তিনে ইহুদি আমদানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা
-
গার্ডিয়ান যেভাবে দখলদার ইসরায়েলের মিথ্যা দাবিগুলোর পুনরাবৃত্তি করছে
পার্স টুডে - ইতালির সরকার গার্ডিয়ান সংবাদপত্রের এ দাবি অস্বীকার করেছে যে দেশটিতে একজন ইহুদিবাদী ও তার ছেলের উপর হামলা হয়েছে।
২০২৫ সালের জুলাইয়ের শেষের দিকে, ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান ইতালিতে একজন ফরাসি ইহুদি ব্যক্তি ও তার ছেলের ওপর একটি কথিত আক্রমণের ঘটনা প্রকাশ করে ঘটনার সত্যতা পুরোপুরি যাচাই ছাড়াই। প্রাথমিকভাবে, গার্ডিয়ান ও আরও কয়েকটি ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং ইতালীয় সংবাদমাধ্যম "এলি" নামে একজন ব্যক্তির গল্প প্রচার করেছিল, যিনি দাবি করেছিলেন যে ইহুদি টুপি পরার কারণে ফিলিস্তিনি সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়, কিন্তু পরে তথ্য প্রকাশ পায় যে এলি নিজেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত করেছিলেন এবং আরবদের প্রতি বর্ণবাদী গালিগালাজ দিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছিলেন। যাইহোক, ইসরায়েলি মিডিয়া এই ধরনের ঘটনাগুলোকে দ্রুত ইহুদি-বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিত্রিত এবং অতিরঞ্জিত করে।
নোভারা মিডিয়া ওয়েবসাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে, ইতালীয় কর্তৃপক্ষ দেশটিতে একজন ইহুদিবাদী ও তার ছেলের উপর হামলার বিষয়ে গার্ডিয়ান সংবাদপত্রের দাবি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইহুদি-বিদ্বেষের বিষয়ে ইসরায়েলের বিশেষ মনোযোগকে স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, বরং এটি তাদের কূটনৈতিক হাতিয়ারগুলোর একটি। অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অভিবাসনকে উৎসাহিত করার জন্য এই শাসকগোষ্ঠী কথিত ইহুদি-বিদ্বেষকে ব্যবহার করে।
পশ্চিমা গবেষণায়ও দেখা গেছে যে ইহুদি-বিরোধী প্রচারণার মাত্রা বৃদ্ধি ও ইসরায়েলে অভিবাসনের হার বৃদ্ধির মধ্যে একটি স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ সম্পর্কের অস্তিত্ব রয়েছে। ২০০০ সন থেকে ২০২১ সনের কথিত ইহুদি-বিদ্বেষের ঘটনাগুলো পরীক্ষা করেও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। যেই বছরগুলোতে কথিত ইহুদি-বিদ্বেষী ঘটনাগুলোর কথা বেশি প্রচার করা হয়েছে সেই বছরগুলোতে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অভিবাসন বেড়েছে। ইহুদি এজেন্সি নামের একটি সংস্থা নানা ধরনের প্রচারণা, ভয় ও প্রলোভনের মাধ্যমে ইহুদিদেরকে অধিকৃত ফিলিস্তিনে নিয়ে আসে। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদও এক্ষেত্রে একই ধরনের ভূমিকা পালন করে। আকর্ষণীয় কোনো কিছুর লোভ দেখিয়ে ইহুদিদেরকে অধিকৃত ফিলিস্তিনে আনা সম্ভব না হলে অনেক সময় জোর করেও ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে নিয়ে আসে মোসাদ ও ইহুদি এজেন্সি। মোট কথা দুই পদ্ধতিতে ইসরাইল বিশ্বের নানা অঞ্চল থেকে ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে নিয়ে আসে:
ইহুদি বিদ্বেষের মিথ্যা দাবি বা প্রচারণা ও ইহুদিদের বন্ধু সাজার ভূমিকায় ইসরায়েল
ইহুদিবাদী ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী সারা বিশ্বের ইহুদিদের অভিভাবক বলে দাবি করে নিজেদের। এ ছাড়াও ইহুদিদের জন্য কথিত ঐশী-অনুমোদনযুক্ত একটি রাষ্ট্রের ধারণা প্রচারের বিষয়ও ইসরায়েলের গোপন মিশন, অবশ্য সম্প্রতি নেতানিয়াহু ও এর আগে আরও অনেক ইহুদিবাদী নেতা নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত ইহুদি ঐশি রাষ্ট্রের ধারণা প্রচার করেছে যা ইহুদিবাদের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। অন্য কথায় একদিকে ইহুদিদেরকে বিশ্বব্যাপী মজলুম বলে প্রচার করা হয় এবং এই প্রচারণার ভিত্তিতে তাদেরকে সুরক্ষা দেয়ার নামে ফিলিস্তিনে আনে ইহুদিবাদীরা। ইহুদিদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে প্রচার করা ও তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর ফলে অনেক ইহুদি ইসরাইলকে বন্ধ বা অভিভাবক ভাবতে বাধ্য হন।
অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদীদের নিয়ে আসার ব্যাপারে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা
ইসরায়েলি গোয়েন্দা মিশনকে যা সহজতর করেছিল তা হল পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিয়ে বা গোপন ইহুদি-বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ইহুদি সম্প্রদায়গুলোর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা। মোসাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে তাদের অন্যতম লক্ষ্য হল বিশ্বের প্রতিটি দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে ইহুদিদের অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে নিয়ে আসা। মোসাদের লক্ষ্য হল দেশগুলির অস্থিরতাকে পুঁজি করে সেসবকে বিদেশে ইহুদি-বিদ্বেষের সাথে সম্পর্কিত দেখানো এবং রাজনৈতিক স্বার্থে এ বিষয়টি ব্যবহার করা।
ইতিহাস বা তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাবে অতীতে বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইহুদিদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে গোপনে যাতে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে অভিবাসন করতে বাধ্য হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ইরাকে বোমা হামলাগুলোর বিষয়ে বাগদাদের ব্রিটিশ দূতাবাসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ইরাক থেকে ইহুদি অভিবাসনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনে অভিবাসন করতে দ্বিধাগ্রস্ত ধনী ইহুদিদের আকৃষ্ট করার জন্য ইহুদিবাদী কর্মীরা এইসব বোমা হামলা পরিচালনা করেছিল।
এ ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইহুদি অভিবাসনের ঢেউ শুরু হয়। ইহুদিবাদী ইসরায়েল লক্ষ্য করে যে পূর্ব ইউরোপ থেকে অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ল্যাটিন আমেরিকার দেশে ইহুদিদের অভিবাসন বাড়ছে। এ অবস্থায় ইসরায়েল জার্মান সরকারকে ইহুদিদের অভিবাসন ভিসা প্রদান বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলে, যাতে তারা জার্মানিতে যেতে না পারে বরং তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনে অভিবাসন করতে বাধ্য হয়। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।