ইউরোপ 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া সক্রিয় করলে ইরান কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151284-ইউরোপ_'স্ন্যাপব্যাক'_প্রক্রিয়া_সক্রিয়_করলে_ইরান_কী_কী_পদক্ষেপ_নিতে_পারে
পার্সটুডে: ইউরোপীয়রা 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া সক্রিয় করলে ইরান কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা ব্যাখ্যা করেছেন দেশটির একজন সংসদ সদস্য।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
আগস্ট ১৯, ২০২৫ ২০:২৪ Asia/Dhaka
  • ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির তিন নেতা
    ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির তিন নেতা

পার্সটুডে: ইউরোপীয়রা 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া সক্রিয় করলে ইরান কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা ব্যাখ্যা করেছেন দেশটির একজন সংসদ সদস্য।

ইউরোপীয় ত্রয়ী- ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি- সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিবকে লেখা এক চিঠিতে ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে তাদের আগের দাবিগুলো পুনরাবৃত্তি করে জানিয়েছে যে, যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় না বসে, তবে তারা তথাকথিত ‘স্ন্যাপব্যাক’ সক্রিয় করার জন্য প্রস্তুত। প্রশ্ন হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে ইরান কী করবে?

পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের সংসদ সদস্য আহমাদ নাদেরি বলেছেন, "যদি ইউরোপীয়রা তাদের চাপ বাড়ানোর নীতি অব্যাহত রাখে, তাহলে ইরানও প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। উদাহরণস্বরূপ, ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি তেকে থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। সুতরাং এই দেশগুলোর নেতাদের জানা উচিত যে, তারা যে খেলা শুরু করেছেন তা ব্যর্থ হয়েছে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কাছে অনেকগুলো কার্ড রয়েছে যা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করবে।"

অন্যদিকে, আমেরিকান থিংক ট্যাঙ্ক 'স্টিমসন' একটি প্রতিবেদনে লিখেছে, এশিয়ার দিকে মোড় নেওয়া ইরানকে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ইউরোপের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “ইউরোপীয়দের ব্রাসেলস চুক্তির কোনো ধারা, বিশেষ করে স্ন্যাপব্যাক ব্যবহারের যোগ্যতা নেই। আমাদের ও ইউরোপের মধ্যে এটি একটি আইনগত চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে আমাদের হাতে বিভিন্ন উপায় আছে এবং আমরা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করছি। যদি শেষ পর্যন্ত তারা এটি চালু করে, আমাদেরও প্রতিক্রিয়ার উপায় আছে, যা উপযুক্ত সময়ে ঘোষণা করা হবে।”

এর আগে, গত জুলাইয়ে ইস্তানবুল বৈঠকের পর আরাকচি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে বলেছিলেন, "ইউরোপীয় ত্রয়ীর স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় করার কোনো আইনি বা নৈতিক ভিত্তি নেই।  যদি তারা এই পথে যায়, তবে ভবিষ্যতের পরমাণু আলোচনা থেকে ইউরোপীয় শক্তিগুলো বাদ পড়বে।"

ইরানের সংসদের আরেক সদস্য কামরান গাজানফারি বলেছেন, যদি 'স্ন্যাপব্যাক' সক্রিয় হয় তাহলে ইরানকে অবশ্যই এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, যাতে প্রমাণ হয় যে, আমাদের হাতে শক্তি আছে। এতে শেষ পর্যন্ত পশ্চিমারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এখন পর্যন্ত তারা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মাধ্যমে আমাদের পরমাণু কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করছিল, কিন্তু ইরান যদি এনপিটি থেকে বেরিয়ে এসে সব সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য এক অনিশ্চিত ও অস্পষ্ট বিষয়ে পরিণত হবে।"

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং কোনো আইনি কারণ ছাড়াই ইরানি নাগরিকদের আটক করেছে। এতে তারা ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, 'স্ন্যাপব্যাক' সক্রিয় করা হলে ইরান আরও কঠোরভাবে ইউরোপের গুপ্তচর ও সন্ত্রাসী কর্মসূচির বিরুদ্ধে আরও দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে পারে এবং একই সাথে উত্তেজনা পরিচালনা করে আঞ্চলিক সমীকরণকে কূটনীতির পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে।

২০১৫ সালের ইরান পরমাণু সমঝোতা (জেসিপিওএ) অনুযায়ী, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার শর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটির ওপর থেকে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে। তবে এই সমঝোতায় একটি বিশেষ ধারা রাখা হয়, যাকে বলা হয় ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’। এর মাধ্যমে কোনো স্বাক্ষরকারী দেশ যদি মনে করে যে ইরান সমঝোতার শর্ত লঙ্ঘন করছে, তবে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশ এটি আটকে রাখতে পারবে না; নির্দিষ্ট সময় শেষে নিষেধাজ্ঞাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল (snap back) হবে। অর্থাৎ, স্ন্যাপব্যাক হলো এক ধরনের ‘স্বয়ংক্রিয় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল প্রক্রিয়া’, যা পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যবহার করতে চায়।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৯