নাইজেরিয়ায় আমেরিকার সামরিক চুক্তির আড়ালে কী লুকিয়ে আছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151382-নাইজেরিয়ায়_আমেরিকার_সামরিক_চুক্তির_আড়ালে_কী_লুকিয়ে_আছে
পার্সটুডে: মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, নাইজেরিয়াকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার নামে দেশটিকে প্রায় ৩৪৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
আগস্ট ২৪, ২০২৫ ১৯:১৩ Asia/Dhaka
  • ৩৪৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি—নাইজেরিয়ায় নতুন সংকট ডেকে আনবে কি যুক্তরাষ্ট্র?
    ৩৪৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি—নাইজেরিয়ায় নতুন সংকট ডেকে আনবে কি যুক্তরাষ্ট্র?

পার্সটুডে: মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, নাইজেরিয়াকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার নামে দেশটিকে প্রায় ৩৪৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পার্সটুডে জানিয়েছে, নাইজেরিয়ার কাছে বিক্রি করা এই অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে গোলাবারুদ, সঠিক নিশানায় আঘাত হানা বোমা এবং নির্দেশিত মিসাইল। ওয়াশিংটনের দাবি, আফ্রিকায় বোকো হারাম এবং আইএসআইএসের মতো সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় নাইজেরিয়াকে সাহায্য করতেই এই অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু নাইজেরিয়ার ভেতরেই নয়, আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গুরুতর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই অস্ত্র নাইজেরিয়ায় অভ্যন্তরীণ সংকটকে উসকে দিতে পারে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নাইজেরিয়া ভয়াবহ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বোকো হারাম, আইএস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয়, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে।

অন্যদিকে দক্ষিণ ও মধ্য নাইজেরিয়ায় দুর্নীতি, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে সামাজিক অস্থিরতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জনঅসন্তোষ প্রবল হচ্ছে।

নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ, গত কয়েক বছরে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। একাধিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, এই বাহিনীগুলো বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভ দমন করেছে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই পরিস্থিতিতে, অস্ত্রের অপব্যবহার এবং নাইজেরিয়ায় মানবাধিকারের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ এখন তীব্রভাবে বেড়েছে। তা সত্ত্বেও, ওয়াশিংটন দেশটিকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার দাবি করছে। নতুন করে মার্কিন অস্ত্র চুক্তি কার্যকর হলে এই অপব্যবহার আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে, নাইজেরিয়ায় অস্ত্র বিক্রিকে পশ্চিম আফ্রিকার এই বড় ও প্রভাবশালী দেশের সাথে আমেরিকার রাজনৈতিক-সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা যেতে পারে। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে নিজের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পশ্চিম আফ্রিকার বৃহত্তম সামরিক শক্তি নাইজেরিয়ার সাথে সামরিক সম্পর্ক বাড়ানো উভয় দেশের জন্যই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। পাশাপাশি, নাইজেরিয়ার সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করা আফ্রিকা অঞ্চলে এই দেশটির সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এবং বাড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশে তাদের উপস্থিতি এবং কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে প্রচুর বাধা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি নাইজারের মতো অনেক দেশে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তাই, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্যের নীতি এখন ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের জন্য একটি সোনালি সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই দেশগুলোর সাথে তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় সম্প্রসারণের, পাশাপাশি এই ধরনের চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নও তাদের লক্ষ্য।

যাইহোক, নাইজেরিয়ায় অস্ত্র বিক্রি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ হিসাবে উপস্থাপন করা হলেও, এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক দিকগুলো উপেক্ষা করা যায় না।  এছাড়াও, নাইজেরিয়ায় আমেরিকার উপস্থিতি শক্তিশালী করা এবং ওয়াশিংটনের নীতি অনুসরণ করে এই দেশটির উপর রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়ানো নিয়েও অনেক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি—এই অস্ত্রচুক্তি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করবে, তবে বাস্তবে এটি নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও মানবাধিকার সংকটকে গভীরতর করতে পারে। একইসঙ্গে, ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও আফ্রিকায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেও চুক্তিটিকে দেখা হচ্ছে।

সুতরাং, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে: এই অস্ত্রচুক্তি কি সত্যিই সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইকে শক্তিশালী করবে, নাকি নাইজেরিয়ার ভেতরে নতুন মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দেবে?#

পার্সটুডে/এমএআর/২৪