গাজায় কি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একাই অপরাধ করছে?
-
ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী কি গাজায় একাই অপরাধ করছে?
পার্সটুডে- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, গাজার জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ কেবল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একা করেনি। মার্কিন সেনারাও দায়ী।
ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে লিখেছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একাই হামলা করছে না। সেখানে আমেরিকান বাহিনীও এই অভিযানে অংশগ্রহণ করছে বলে তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে যে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে অংশগ্রহণের জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আইনি দায়বদ্ধতা রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়াশিংটন অফিসের পরিচালক সারাহ ইয়াগার বলেন, ইসরায়েলি সেনাদের সাথে সামরিক অভিযানে মার্কিন বাহিনীর সরাসরি অংশগ্রহণের অর্থ হল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় সশস্ত্র সংঘাতের একটি পক্ষ ছিল এবং এখনও আছে।
ইয়াগার আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধে জড়িত থাকার জন্য কোনো একটি রাষ্ট্রকে দায়ী করার বিধান রয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে। তাছাড়া জেনেশুনে অন্য একটি রাষ্ট্রকে যুদ্ধ আইন এবং অন্যান্য আইনের অপব্যবহারের গুরুতর লঙ্ঘন করতে সহায়তার জন্যও তারা দায়ী হবে।
তিনি বলেন, মার্কিন জনগণের জানা উচিত যে, ইসরায়েলকে দেওয়া আমেরিকান অস্ত্র সরাসরি গাজায় অপরাধ সংঘটিত করতে সাহায্য করছে এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিভুক্ত যুদ্ধ আইন লঙ্ঘনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী হতে হবে।
প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে গাজার অবস্থানগুলিকে লক্ষ্য করে কার্যকরী গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে। সেইসাথে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে ব্যাপক সমন্বয়, পরিকল্পনা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে।
প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্যও উদ্ধৃত করা হয়েছে। যারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ইসরায়েলের আক্রমণ সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের সাথে পরামর্শ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের অক্টোবরে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, 'আমি আমাদের বিশেষ বাহিনী এবং গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছি ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং গাজায় লুকিয়ে থাকা অন্যান্য হামাস নেতাদের খুঁজে বের করতে আমাদের ইসরায়েলি প্রতিপক্ষের সাথে কাজ করার জন্য। আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের সাহায্যে, ইসরায়েলি বাহিনী নিরলসভাবে হামাস নেতাদের অনুসরণ করেছে।'
২০২৫ সালের ১৮ মার্চে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী পুনরায় বিমান হামলা শুরু করার পর হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট এক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আজ রাতের গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যে পরামর্শ করা হয়েছে। একই সময়ে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, সেই রাতে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, বর্তমান যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে। সংস্থাটি আরো বলেছে যে, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন কেবল এই লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিতেই শুধু ব্যর্থ হয়নি বরং তাদের বিবৃতি এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনীর অবৈধ কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছে বা এতে জড়িত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জো বাইডেন এবং দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন উভয়ই ইসরায়েলকে ব্যাপক পরিমাণে অস্ত্র ও নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির নিরাপত্তা সহায়তা মনিটরের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে ইসরায়েলে কমপক্ষে ৪.১৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে।#
পার্সটুডে/জিএআর/২৯