বিশ্লেষণ:
ইসরায়েলের পতনের গতি যেভাবে ক্রমেই দ্রুততর হচ্ছে
-
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু
পার্স টুডে - একজন মিশরীয় বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেছেন যে ইহুদিবাদী ইসরায়েল পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর বিচ্ছিন্নতা ক্রমেই বাড়ছে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি দখলদার শক্তির অমানবিক ও পৈশাচিক আচরণ যতই বাড়ছে ততই এই দানবীয় ও শয়তানি শক্তিকে বর্জন ও একঘরে করার প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার যে বক্তব্য রেখেছেন তা বেশ লক্ষ্যনীয়। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, দেশটির সরকার "ইসরায়েলের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করার" এবং ইসরায়েলি বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আল জাজিরার উদ্ধৃতি দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদ সুলতান একটি বিশ্লেষণে লিখেছেন যে ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে বয়কট করার এই ধরনের নীতি গ্রহণ ইহুদিবাদী শাসক চক্রকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে।
ইসরায়েলি শাসকরা প্রায়ই তাদের দখলদারিত্বকে বৃহত্তর করার স্বপ্ন দেখে এবং "বৃহত্তর ইসরায়েল" এর স্বপ্ন মাথায় লালন করছে। এই মিশরীয় বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেছেন যে ইসরায়েল শক্তি ও প্রচারণার উপর নির্ভর করে পিছু হটছে। লেখক "আফ্রিকায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের পতন"-এর দিকটিও উল্লেখ করেছেন। এরই আলোকে ১৯৬০-এর দশকে ইসরায়েলি দূতাবাসের সংখ্যা ৩৩ থেকে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে মাত্র ১৩-তে দাঁড়িয়েছে, এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে এটি আন্তর্জাতিকভাবে "ঘৃণ্য রাষ্ট্র" হয়ে উঠেছে, যা "উচ্চাকাঙ্ক্ষী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নীতির" অভাবযুক্ত একটি বিচ্ছিন্ন শাসনব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
ইসরায়েলের বিচ্ছিন্নতার স্বীকারোক্তি এমন একটি বিষয় যা ইহুদিবাদী মিডিয়াও স্বীকার করছে। অর্থনৈতিক ওয়েবসাইট "ক্যালকালিস্ট", ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে সম্প্রতি জানিয়েছে যে, (গাজায়) মানবিক সংকট বৃদ্ধির সাথে সাথে, গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সাথে ব্যবসায়িক সহযোগিতা স্থগিত করা, চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানানো বা চিঠিপত্রের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানানোর অসংখ্য ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
পশ্চিমা ও আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে বয়কটের ঘটনা উল্লেখ করে, অর্থনৈতিক সংবাদপত্রটি বলেছে যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ তহবিলগুলো ইসরায়েলে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সাথে তাদের সহযোগিতা স্থগিত করেছে।
এছাড়াও, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নীরব নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কোম্পানিগুলো ইসরায়েলে তাদের কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানি খুবই ধীরগতিতে চলছে।
সংবাদপত্রটি জোর দিয়ে বলেছে যে অধিকৃত অঞ্চলগুলো ব্যবসায়িক গন্তব্য হিসেবে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর নীরব বয়কটের শিকার হয়েছে। নীরব ও ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞাগুলো ইহুদিবাদী ইসরায়েলের প্রধান শিল্প, উচ্চ-প্রযুক্তির কোম্পানিগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
এই প্রতিবেদন অনুসারে উচ্চ-প্রযুক্তি খাতে চুক্তি বাতিল, পরিকল্পিত বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং অ-ইসরায়েলি বিকল্পগুলোকে বেছে নেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত মালিকানা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং সম্মেলনের আয়োজকরাও এই প্রদর্শনীগুলোতে ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছে না। তারা ইসরায়েলকে প্রদর্শনী হতে বাদ দিচ্ছে বা ইসরায়েলকে আসতে দিতে অস্বীকার করছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং দেশে দেশে গণপ্রতিরোধমূলক ও অর্থনৈতিক পদক্ষপগুলোর কারণে ইসরায়েলের একঘরে হওয়ার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা থেকে বোঝা যায় যে বিশ্বব্যাপী বিবেক এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধমূলক গণ-জাগরণের মুখে "বৃহত্তর ইসরায়েল" প্রতিষ্ঠা ও এর সম্প্রসারণবাদী স্বপ্ন ইহুদিবাদীদের জন্য পতনের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ যুদ্ধক্ষেত্রে নয় বরং কূটনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতির ময়দানে টিকে থাকার ওপর নির্ভর করছে, আর এই ময়দান এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে প্রতিদিন ইসরাইলের সহযোগী ময়দান-পরিচালকদের সংখ্যা কমতে দেখা যাচ্ছে। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।