সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনে উদীয়মান শক্তিগুলোর সমাবেশে পশ্চিমারা কেন ক্ষুব্ধ?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151722-সাংহাই_শীর্ষ_সম্মেলনে_উদীয়মান_শক্তিগুলোর_সমাবেশে_পশ্চিমারা_কেন_ক্ষুব্ধ
পার্স টুডে – সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন ও পাশ্চাত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জোটবদ্ধতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় জোটের নেতারা বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
(last modified 2025-09-08T13:26:16+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৫ ১৬:০৩ Asia/Dhaka
  • ভারত, রাশিয়া ও চীনের শীর্ষ  তিন নেতা
    ভারত, রাশিয়া ও চীনের শীর্ষ তিন নেতা

পার্স টুডে – সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন ও পাশ্চাত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জোটবদ্ধতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় জোটের নেতারা বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

পার্স টুডে-র মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কায়া কালাস সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনে উদীয়মান শক্তির জোটের প্রতি ইউরোপের ক্ষোভের প্রতিফলনকারী বিবৃতিতে দাবি করেছেন যে ইরান, রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়া নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্ব-ব্যবস্থার জন্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ।

বুধবার ইউরোপীয় কমিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে, বেইজিংয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে কালাস দাবি করেন: "যখন চীনের রাষ্ট্রপতি রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার নেতাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন এটি কেবল পশ্চিমা-বিরোধী চিত্র ছিল না, বরং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছিল।"

তিনি দাবি করেন যে এই সমর্থন কেবল প্রতীকী ছিল না একইসঙ্গে এটি ছিল একটি "নতুন কর্তৃত্ববাদী বিশ্বব্যবস্থা" গড়ে তোলার প্রচেষ্টার অংশ।

এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বৈঠকের পাশাপাশি চীন, ভারত এবং রাশিয়ার  ঐক্যবদ্ধ  বৈঠক সম্পর্কে একাধিক বার্তায় প্রকাশ্যে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি এবং চীন ও রাশিয়ার নেতাদের সাথে তার উষ্ণ বৈঠকের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে তিনি চীনের কাছে ভারত ও রাশিয়াকে হারিয়েছেন। নিজস্ব মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ তার ব্যক্তিগত পাতায় ট্রাম্প একটি পোস্টে লিখেছেন যে তিনি পূর্ব এশিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাংহাই শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক ঘটনা-প্রবাহ বেইজিংয়ের অনুকুলে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা  করে  তিনি লিখেছেন: মনে হচ্ছে আমরা ভারত ও রাশিয়াকে চীনের কাছে হারিয়েছি। তিনি বিদ্রুপের সুরে লিখেছেন: "আমি তাদের উভয়ের দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ কামনা করি!"

ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্পের এই স্বীকারোক্তি এসেছে। ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন যার ২৫ শতাংশ কেবল রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে আরোপ করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ভারত রাশিয়ার তেল কিনে পরোক্ষভাবে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে অর্থায়ন করছে। 

ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশীয় শিল্পকে শক্তিশালীকরণ এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার প্রতি ভারতের অবিচল থাকার ওপর জোর দিয়েছেন এবং দেশীয়ভাবে তৈরি পণ্য ক্রয়কে অগ্রাধিকার দিতে ভারতীয়দের আহ্বান জানিয়েছেন।

আঞ্চলিক পর্যায়ে ভারত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার দুই প্রভাবশালী সদস্য চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য কাজ করছে, আর এরই অংশ হিসেবে তিয়ানজিনে সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনে মোদী ও চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তাদের আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদার এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের উপর জোর দিয়েছিলেন।

মোদী ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন তাদের বৈঠকে ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমেরিকান কর আরোপের চাপ সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা বজায় রয়েছে।

নয়াদিল্লি, বেইজিং এবং মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠায় এই যে পরিবর্তন তা বিশাল ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরছে।

সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) ২৫তম শীর্ষ সম্মেলন ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা পূর্ব ও মধ্য এশিয়ায় রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

পশ্চিমা নেতারা স্বীকার করছেন যে পশ্চিমা বিশ্ব-ব্যবস্থা ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং তা হুমকির শিকার। মস্কো ও বেইজিং বিশ্বাস করে যে আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং বিশ্ব ব্যবস্থার বাস্তবতা বহুমেরু-কেন্দ্রীক বিশ্ব-ব্যবস্থায় দিকে এগিয়ে যুাচ্ছে।অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমেরু ব্যবস্থা বজায় রাখার উপর জোর দিয়ে এবং বৈশ্বিক পুলিশের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করে একতরফাবাদের মাধ্যমে তার লক্ষ্য ও স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে। এদিকে ইউরোপও ওয়াশিংটনের মতোেই পশ্চিমা নিয়মের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমাদের একক কর্তৃত্বের বিশ্ব-ব্যবস্থা সংরক্ষণ করতে চায়।

চীন, রাশিয়া ও এখন ভারতের নেতারা উদীয়মান বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চান, যার অন্যতম প্রতীক হল ব্রিকস গ্রুপ, যার প্রাথমিক সদস্য ছিল রাশিয়া, চীন, ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। রাশিয়া ও চীন এখন অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, সামরিক ও নিরাপত্তা, সমরাস্ত্র, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে  সম্পর্কের ব্যাপক বিস্তার ঘটিয়েছে। একই সাথে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং ব্রিকস গ্রুপের মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং জোটগুলোতে দুই দেশের অংশগ্রহণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমা আধিপত্য ও মার্কিন আগ্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলা ও নানা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদারের গুরুত্বের বিষয়ে একই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। 

এখন ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের উদ্ধত আচরণ এবং পদক্ষেপের পর নয়াদিল্লিও স্পষ্টতই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। #
 

পার্স টুডে/এমএএইচ/০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।