ইথিওপিয়ার রেনেসাঁ বাঁধ: উন্নয়নের দিগন্ত নাকি আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে নতুন অধ্যায়?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151870-ইথিওপিয়ার_রেনেসাঁ_বাঁধ_উন্নয়নের_দিগন্ত_নাকি_আঞ্চলিক_দ্বন্দ্বে_নতুন_অধ্যায়
পার্সটুডে: আফ্রিকার সবচেয়ে বড় পানিসম্পদ প্রকল্প 'রেনেসাঁ বাঁধ' (আল-নাহদা) মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছে ইথিওপিয়ার সরকার।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫ ২০:৪২ Asia/Dhaka
  • ইথিওপিয়ার রেনেসাঁ বাঁধ
    ইথিওপিয়ার রেনেসাঁ বাঁধ

পার্সটুডে: আফ্রিকার সবচেয়ে বড় পানিসম্পদ প্রকল্প 'রেনেসাঁ বাঁধ' (আল-নাহদা) মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছে ইথিওপিয়ার সরকার।

টানা ১৪ বছর ধরে নির্মাণকাজ চলার পর ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী 'আবি আহমেদ', বিশাল এই বাঁধটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এই বাঁধ বহু বছর ধরেই আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এমনকি ইথিওপিয়ার এই উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে মিশর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানায়, ইথিওপিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এই বাঁধের কোনো আইনি বা রাজনৈতিক বৈধতা মিসর ও সুদানের জন্য থাকবে না।

'সদ আল-নাহদা', যা “ইথিওপিয়ান গ্র্যান্ড রেনেসাঁস ড্যাম” নামে পরিচিত। মূলত ইথিওপিয়া ও প্রতিবেশী দেশগুলোর বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে।

ইথিওপিয়ার কর্মকর্তারা দাবি করেন, এই বাঁধ শুধু ইথিওপিয়ার লাখো মানুষের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে না, বরং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও রপ্তানি করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ বারবার এই প্রকল্পকে যৌথ উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি নিম্নপ্রবাহের নীলনদের দেশগুলোর জন্য কোনো হুমকি নয়।

কিন্তু ইথিওপিয়ার এই ব্যাখ্যায়ও মিশর আশ্বস্ত হয়নি। মিসর তার সমস্ত মিঠা পানির উৎস হিসেবে নীলনদের ওপর নির্ভরশীল এবং বহু বছর ধরেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবারও জানিয়েছে, এই প্রকল্প নীলনদের পানি ভাগাভাগি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক চুক্তিগুলোর লঙ্ঘন। কায়রোর মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর অধিকার ক্ষুণ্ন করছে এবং এর সব পরিণতি ইথিওপিয়াকেই বহন করতে হবে।

কায়রোর দৃষ্টিতে, নীলনদের পানিপ্রবাহ সামান্য কমলেও মিশরের কৃষি, পানীয় জলের যোগান ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। বারবার তারা জোর দিয়ে বলেছে, নীলনদ শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং মিশরের ইতিহাস ও সভ্যতার অংশ। প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বহুবার সতর্ক করে বলেছেন, মিশরের পানিনিরাপত্তা একটি রেডলাইন এবং তা হুমকির মুখে পড়লে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গত কয়েক বছরে মিসর বহুবার যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকান ইউনিয়ন, রাশিয়া ও আমিরাতের মধ্যস্থতায় একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আজও তা সফল হয়নি।

১০ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ মিসর ৯০ শতাংশেরও বেশি পানির জন্য নীলনদের ওপর নির্ভরশীল। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্বাস শারাকি এ প্রসঙ্গে বলেন: “প্রায় ৯৩ শতাংশ মিশর মরুভূমি, যেখানে কেউ বাস করে না। আমাদের সব ১০৭ মিলিয়ন মানুষ নীলনদের তীরে বসবাস করে; মিশরের সভ্যতা নীলনদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নীলনদই আমাদের জীবন।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, এই বাঁধ ৬৪ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি আটকে দেবে, যা মিসরের জন্য বিশাল ক্ষতি।

সুদানও এই সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। একদিকে তারা আশঙ্কা করছে, বাঁধের অযথাযথ ব্যবস্থাপনা পরিবেশের ক্ষতি, বন্যার ঝুঁকি এবং নিম্নপ্রবাহের বাঁধগুলোর নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, অন্যদিকে, তারা আশা করছে এই প্রকল্প থেকে সস্তা বিদ্যুৎ ও সীমান্ত এলাকায় পানি নিয়ন্ত্রণে সুবিধা পাবে। এ কারণেই সুদানের অবস্থান বহু বছর ধরে দোদুল্যমান ছিল—কখনো মিশরের পাশে, কখনো ইথিওপিয়ার পক্ষে। তবে বর্তমানে তারা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছে।

ইথিওপিয়া যখন এখনো মিশর ও সুদানের সঙ্গে কোনো বাধ্যতামূলক ও পূর্ণাঙ্গ চুক্তি ছাড়াই রেনেসাঁ বাঁধ চালু করায় আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়ে গেছে। ফলে মনে হচ্ছে, এই জটিল সংকটের একমাত্র সমাধান হতে পারে কার্যকর কূটনীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা। কারণ বিদেশি হস্তক্ষেপ কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং টেকসই সমাধানের পথ আরও কঠিন করে তুলবে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১০