ফিলিপাইনে মার্কিন সেনা উপস্থিতির ফসল: হাজারো পরিচয়হীন শিশু, অন্ধকার ভবিষ্যৎ
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151926-ফিলিপাইনে_মার্কিন_সেনা_উপস্থিতির_ফসল_হাজারো_পরিচয়হীন_শিশু_অন্ধকার_ভবিষ্যৎ
পার্সটুডে- ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী সামরিক উপস্থিতির স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হাজারো পরিচয়হীন মানুষ, স্থানীয় নারীদের সঙ্গে অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে যাদের জন্ম হয়েছে।
(last modified 2025-09-14T05:38:59+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫ ১২:০৫ Asia/Dhaka
  • ফিলিপাইনে মার্কিন সেনা উপস্থিতির ফসল: হাজারো পরিচয়হীন শিশু, অন্ধকার ভবিষ্যৎ
    ফিলিপাইনে মার্কিন সেনা উপস্থিতির ফসল: হাজারো পরিচয়হীন শিশু, অন্ধকার ভবিষ্যৎ

পার্সটুডে- ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী সামরিক উপস্থিতির স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হাজারো পরিচয়হীন মানুষ, স্থানীয় নারীদের সঙ্গে অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে যাদের জন্ম হয়েছে।

দশকের পর দশক ধরে এই পিতৃ পরিচয়হীন প্রজন্ম বৈষম্যের শিকার হয়ে বেঁচে আছে। তারা এমন ভুক্তভোগী, যাদের জন্য না মাতৃভূমি কোনো স্বীকৃতি দিয়েছে, না পিতৃভূমি কখনো দায়িত্ব নিয়েছে।

যে ক্ষতচিহ্ন ঠিক হবে না

প্রায় তিন দশক আগে ফিলিপাইনে প্রায় একশ বছরের সামরিক উপস্থিতির ইতি টানে আমেরিকা। সোবিক ও ক্লার্ক নৌঘাঁটি থেকে মার্কিন জাহাজ চলে যায়, আর তারকাঙ্কিত পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোর মধ্যে কেবল ফাঁকা ভবনগুলোই ছিল না বরং তারা ফেলে যায় হাজার হাজার পরিচয়হীন শিশুকে, যারা “জাহাজের ফেলে যাওয়া সন্তান” নামে পরিচিতি পেয়েছিল। আর সেই প্রজন্ম বর্ণবাদ ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই বড় হয়েছে।

কারভিন লুয়ান্তে

এই নির্মম বাস্তবতার প্রতীক হলেন কারভিন লুয়ান্তে। সোবিক ঘাঁটির ছায়ায় বেড়ে ওঠা কারভিন সাত বছর বয়সেই জীবনধারণের জন্য হকারি শুরু করেন। আজ ৪৫ বছর বয়সেও তিনি পরিচয়ের সংকটে ভুগছেন—যে পরিচয়কে না ফিলিপাইন স্বীকার করে, না যুক্তরাষ্ট্র মানতে চায়।
২০১৩ সালের এক জরিপে উঠে আসে, জন্মের মুহূর্ত থেকেই এই শিশুদের অধিকাংশ বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। অনেকের বৈধ কাগজপত্র নেই, শিক্ষার সুযোগও সীমিত, কর্মসংস্থানের পথ তো আরও সঙ্কীর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে পাদ পড়ে ফিলিপাইন

১৯৮২ সালে মার্কিন কংগ্রেস একটি আইন পাস করে, যাতে ভিয়েতনাম, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস ও কম্বোডিয়ায় মার্কিন সেনাদের সন্তানদের অভিবাসনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বৈষম্যমূলকভাবে ফিলিপাইনকে বাদ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে হাজারো ফিলিপিনো শিশু ক্ষতিপূরণ ও অধিকার দাবিতে মামলা করলেও কোনো ফল মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছে, আর নানা সঙ্কটে জর্জরিত ফিলিপাইন সরকারও তাদের উপেক্ষা করেছে।

‌আবারও মার্কিন ঘাঁটি; নতুন আশঙ্কা

১৯৯২ সালে মার্কিন সেনাদের বহিষ্কারের পর তারা নতুন নিরাপত্তা চুক্তির অজুহাতে আবারও ফিলিপাইনে ফিরেছে—চীনকে মোকাবেলার স্লোগান তুলে তারা এই কাজ করছে। এর ফলে প্রশ্ন উঠছে: ফিলিপাইনে  কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে? নতুন প্রজন্মও কি পরিচয়হীন সন্তানে পরিণত হবে? ফিলিপাইনে মার্কিন জাহাজের প্রত্যাবর্তন মানেই অতীতের ক্ষতকে আবার নতুন করে টেনে আনা।

নাগরিকত্বের স্বপ্ন; অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি

অধিকাংশ শিশুদের একমাত্র আশা ছিল মার্কিন নাগরিকত্ব। তারা বিশ্বাস করত, এটি দারিদ্র্য ও বৈষম্য থেকে মুক্তির পথ খুলে দেবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ফিলিপিনো শিশুদের এই অধিকার দেয়নি। অন্য দেশের সন্তানদের জন্য সুযোগ থাকলেও ফিলিপিনোরা বঞ্চিতই রয়ে গেছে। এ বৈষম্য মার্কিন নীতির প্রকৃতি ও ধরণকেই তুলে ধরে, আর তাহলো সামরিক স্বার্থে অন্য জাতিকে ব্যবহার করবে অথচ মানবিক দায়টাও নেবে না। 

ফিলিপাইন: দাবার বোর্ডের একটি গুটি

ওয়াশিংটনের চোখে ফিলিপাইন কখনো মানবিক অংশীদার ছিল না বরং এটি ছিল চীনের বিরুদ্ধে ভূ-রাজনীতির দাবার বোর্ডের একটি গুটি। তাইওয়ানের কাছাকাছি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ফিলিপাইনকে মার্কিন সামরিক পরিকল্পনার জন্য কৌশলগত ঘাঁটিতে পরিণত করেছে আমেরিকা। মার্কিন নেতাদের বারবার ম্যানিলা সফর এবং নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি সেই প্রমাণই বহন করে। কিন্তু এই হিসাব-নিকাশে জায়গা নেই পরিচয়হীন শিশুদের কিংবা ফিলিপিনো জনগণের অধিকারের। #

পার্সটুডে/এসএ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।