দক্ষিণ পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোর নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152214-দক্ষিণ_পারস্য_উপসাগরের_আরব_দেশগুলোর_নিরাপত্তার_প্রতি_প্রতিশ্রুতিবদ্ধ_যুক্তরাষ্ট্র
পার্সটুডে–সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের অন্যান্য দেশগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করেছে আমেরিকা।
(last modified 2025-09-22T13:48:20+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫ ১৬:৪০ Asia/Dhaka
  • মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও
    মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও

পার্সটুডে–সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের অন্যান্য দেশগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করেছে আমেরিকা।

পার্সটুডে আরও জানায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের সাথে ফোনে কথা বলে ওই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন আমেরিকা পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোর নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই দাবি এমন এক সময়ে করা হলো যখন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সদস্য কাতারের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের ফলে এই দেশগুলো হোয়াইট হাউসের প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে পড়েছে।

মার্কিন দাবি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত মেশাল হামাদ আলে সানি দোহার ওপর সাম্প্রতিক ইসরাইলি হামলায় আমেরিকার নিষ্ক্রিয়তাকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে কাতার গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছে এবং বলেছে যে কাতারকে লক্ষ্যবস্তু করে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। দোহায় ইসরাইলের আক্রমণের সময় দেশটির প্যাট্রিয়ট সিস্টেমগুলো কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায়, মেশাল হামাদ আলে সানি বলেছিলেন: "ইসরাইলিদের এক ধরণের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। সে কারণে হয়তো আমাদের বেশিরভাগ প্যাট্রিয়ট ভিন্ন দিকে ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, যেহেতু আমরা মিত্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করি এবং ইসরাইলিদের কাছ থেকে আমরা গ্যারান্টি পেয়েছি যে তারা এমন কিছু করবে না, তাই আমরা এই পদক্ষেপে সত্যিই অবাক হয়েছি।"

দোহায় ইসরাইলি বিমান বাহিনীর সাম্প্রতিক বিমান হামলায়, হামাস আন্দোলনের নেতাদের বাসভবনে বোমা হামলা করা হয়েছিল। কিছু ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে যে মার্কিন সরকার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সমন্বয় করে এই অভিযান চালানো হয়েছিল, কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে: ওই পদক্ষেপটি স্বাধীনভাবে নেওয়া হয়েছিল। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সেইসঙ্গে এটিকে একটি অপরাধমূলক এবং কাপুরুষোচিত কাজ বলে অভিহিত করেছে এবং সতর্ক করেছে যে এই ধরনের আক্রমণ কাতারি নাগরিক এবং বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের ডায়াস্পোরা (অধিকৃত ফিলিস্তিনের বাইরে ইহুদি বিষয়ক) মন্ত্রী আমিচাই শিকলি তুরস্ক, কাতার এবং সিরিয়া এই তিনটি দেশকে মন্দের নতুন অক্ষ বলে অভিহিত করেছেন। এই ইহুদিবাদী কর্মকর্তা, যিনি তার চরমপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত, দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের আশঙ্কায় বলেছেন: "মন্দের নতুন অক্ষ হল তুরস্ক, সিরিয়া এবং কাতার। এটি একটি নতুন ইরান।"

যদিও আবু মুহাম্মদ আল-জুলানির নেতৃত্বে নতুন সিরিয় সরকারের আপোষমূলক অবস্থান, ইসরাইলের সাথে তুরস্কের অব্যাহত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক, গাজা যুদ্ধে মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কাতারের মধ্যস্থতাকারী অবস্থানের কারণে এই ইহুদিবাদী কর্মকর্তার দাবি প্রশ্নবিদ্ধ এবং সন্দেহজনক। কাতারে হামাস নেতাদের অবস্থান এবং গাজা যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে ওয়াশিংটনের প্রতারণামূলক পদক্ষেপের অজুহাতে, তারা দোহায় বিমান হামলার মাধ্যমে তাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে, যদিও তাদের ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

এখন মূল প্রশ্ন হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ট্রাম্পের সবুজ সংকেত ছাড়া কাতারের ওপর ইসরাইলি বিমান হামলা সম্ভব ছিল না। এই সুস্পষ্ট বাস্তবতা সত্ত্বেও, আমেরিকার কর্মকর্তারা, বিশেষ করে মার্কো রুবিও, এখনও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলোর নিরাপত্তার প্রতি আমেরিকার প্রতিশ্রুতি দাবি করেছেন কেন?

জবাবে, এটা বলা উচিত যে ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন নেতানিয়াহু-ট্রাম্প জোট, অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি জোট। ২০২৫ সালের শুরু থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী এবং উন্নয়ন বিবেচনা করে কার্যত প্রমাণ করেছে যে তারা এমন অভূতপূর্ব পদক্ষেপ এবং দুঃসাহসিক কাজ করতে সক্ষম। এই পদক্ষেপের উদাহরণ হল ইরানের ওপর আক্রমণ এবং এখন কাতারের ওপর বিমান হামলা, যারা এ অঞ্চলে ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান মিত্র এবং পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল-উদেইদ, এই কাতারেই অবস্থিত। মনে হচ্ছে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে এই অঞ্চলের দেশগুলির বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছেন যা তিনি দাবি করেন যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্বার্থ ও লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলি, বিশেষ করে কাতার এবং সৌদি আরবের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তি থাকা সত্ত্বেও, ওয়াশিংটন এই চুক্তিগুলো মেনে চলবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অবশ্যই, মার্কো রুবিওর কথার বিষয়বস্তু থেকে এটা স্পষ্ট যে তিনি যখন এই দেশগুলোর নিরাপত্তা মেনে চলার কথা বলেন, তখন তিনি ইরান-বিদ্বেষী প্রকল্পের আকারে ইরানের কাছ থেকে একটি কাল্পনিক এবং কথিত হুমকির কথাই বোঝাচ্ছেন।

যদিও সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করে এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য প্রধান হুমকি ইহুদিবাদী ইসরাইল থেকে এসেছে, যারা আন্তর্জাতিক নীতি ও আইনের সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে যখনই ইচ্ছা এই দেশগুলোতে আক্রমণ করেছে। ইহুদি বিশ্লেষকরা দাবি করেন যে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে অপারেশন আল-আকসা ঝড়ের পর থেকে, ইহুদিবাদী ইসরাইল তার প্রতিক্রিয়া স্থগিত করার পরিবর্তে জাতীয় নিরাপত্তা নীতি পরিবর্তন করে সমস্ত সম্ভাব্য হুমকিকে তাৎক্ষণিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে দুই বছরে, ইসরাইল প্রতিবেশী দেশগুলোতে অসংখ্য আক্রমণ চালিয়ে তাদের আচরণের ধরণ প্রদর্শন করেছে। দুই বছর ধরে গাজা যুদ্ধকালীন পশ্চিম এশিয়ার ছয়টি দেশ-ফিলিস্তিন (গাজা), লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরান এবং তারপর কাতারকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। প্রকৃতপক্ষে, কাতারের ওপর আক্রমণ এখন তুরস্কের মতো দেশগুলোর জন্যও অশনি সংকেত হয়ে পড়েছে।#

পার্সটুডে/এনএম/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।