যুক্তরাষ্ট্র কি চূড়ান্তভাবে আর্থিক অচলাবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i153316-যুক্তরাষ্ট্র_কি_চূড়ান্তভাবে_আর্থিক_অচলাবস্থার_দিকে_এগিয়ে_যাচ্ছে
পার্সটুডে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ঋণ ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে- এটি এক নজিরবিহীন স্তর, যা বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক সতর্কবার্তা।
(last modified 2025-10-27T13:35:51+00:00 )
অক্টোবর ২৩, ২০২৫ ১৫:৫২ Asia/Dhaka
  • যুক্তরাষ্ট্র কি চূড়ান্তভাবে আর্থিক অচলাবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

পার্সটুডে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ঋণ ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে- এটি এক নজিরবিহীন স্তর, যা বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক সতর্কবার্তা।

মার্কিন ফেডারেল সরকারের ঋণ এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর নাগাদ মোট ফেডারেল ঋণ ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটা দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের জিডিপির প্রায় ১২৩ শতাংশের সমান, যা আমেরিকার অর্থনীতির উপর এক বিশাল বোঝা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

এই ঋণের পরিমাণ কেবল ধারাবাহিক বাজেট ঘাটতির ফল নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য এক বিপদঘণ্টা।

মার্কিন ফেডারেল ঋণের এই বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কাঠামোগত ও নীতিগত কারণ এবং কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
প্রথমত, ধারাবাহিক বাজেট ঘাটতি। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পৌঁছেছে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে তা জিডিপি'র ৬.১ শতাংশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, বিস্তৃত আর্থিক নীতি বা ব্যয় বৃদ্ধি। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং পরবর্তীতে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অর্থনীতিতে ট্রিলিয়ন ডলার ইনজেক্ট করতে বাধ্য হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে কোভিড সহায়তা প্যাকেজগুলোর কারণে বাজেট ঘাটতি জিডিপি'র ১৬ শতাংশে পৌঁছায়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ।

এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কর হ্রাসের নীতিগুলো সরকারের রাজস্ব কমিয়ে দেয়। দ্বিদলীয় বাজেট কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কর ছাড় অব্যাহত থাকলে আগামী দশকে ঋণ আরও ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়তে পারে।

তৃতীয়ত, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে করা হলেও ঋণ গ্রহণের খরচ বাড়িয়েছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ গড় সুদের হার দাঁড়ায় ৩.৪ শতাংশে, যা ঋণের বোঝা আরও দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে।

এর পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো খরচ বৃদ্ধি। সাম্প্রতিক অবকাঠামোগত বিনিয়োগ ও ভূরাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যয় বেড়েছে। এটা ঋণের এই চক্রকে আরও তীব্র করেছে। এসব কারণে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঋণ ৩৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে অক্টোবরে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বর্তমানে ফেডারেল ঋণ যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি'র ১২০ শতাংশেরও বেশি, যা শুধু দেশের অর্থনীতিকেই নয়, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

অর্থনৈতিকভাবে এই বিপুল সরকারি ঋণ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর করে দেয়। ক্যাটো ইনস্টিটিউটের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪০টি একাডেমিক গবেষণার মধ্যে ৩৬টিতেই ঋণ ও প্রবৃদ্ধির মধ্যে একটি নেতিবাচক সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

ঋণ সংকটের ঝুঁকি

আরেকটি বড় ঝুঁকি হলো ঋণ সংকটের সম্ভাবনা। যদি বড় ঋণদাতা দেশগুলো যেমন চীন ও জাপান (যাদের হাতে ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি মার্কিন বন্ড আছে) আস্থা হারায়, তাহলে সুদের হার হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে এবং তা মন্দার সূচনা করতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত সরকারের ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার ক্ষমতা (যেমন মন্দা বা যুদ্ধের সময়) সীমিত হয়ে যায়, কারণ অতিরিক্ত ব্যয়ের সুযোগ থাকে না।

সামাজিক প্রভাব

বর্তমান ঋণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপরও চাপ সৃষ্টি করছে। ঋণের সুদ পরিশোধ এখন ফেডারেল বাজেটের তৃতীয় বৃহত্তম খাত। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো খাতে ব্যয় কমে যাচ্ছে।

এর ফলে সামাজিক বৈষম্য আরও বাড়ছে, কারণ ঋণ শোধের জন্য ভবিষ্যতে কর বাড়ানো হতে পারে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বেশি বোঝা চাপাবে। ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে বছরে ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে  অর্থাৎ দিনে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।

সিবিও'র হিসাবে, ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক নিট সুদ ব্যয় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং আগামী এক দশকে মোট ১৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার করদাতাদের পকেট থেকে যাবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেটের চেয়েও বেশি।

এই প্রবণতা বাজেটের উপর চাপ আরও বাড়াবে এবং নীতিনির্ধারকদেরকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে, এর মধ্যে রয়েছে কর বৃদ্ধি বা সামাজিক সেবা হ্রাস। এর ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনা তীব্রতর হতে পারে, এমনকি সরকারি কার্যক্রম স্থগিত (shutdown) বা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা (default) পর্যন্ত ঘটতে পারে।#

পার্সটুডে/এসএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।