ইরান ভ্রমণ : (পর্ব-১১৬)
রামিয়ান শহরের নয়নাভিরাম দৃশ্য
রমিয়ন শহর পূর্ব আলবোর্জের পাহাড়গুলোর মধ্যখানে অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক ঝরনা ও ফোয়ারাসহ অসংখ্য প্রবহমান ধারার পাশাপাশি রয়েছে সবুজ জঙ্গল আর বন-বনানী। বেশ পুরনো এই শহরের পাশ দিয়ে কেউ গেলে নয়নাভিরাম ওইসব দৃশ্য তার মন কেড়ে নেয় নিমেষেই।
বিশেষ করে 'পাশমাকি' অঞ্চলের দিকে একবার না গেলে সফরটাই অপূর্ণ থেকে যাবে। পাশমাকি হলো রমিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি গ্রীষ্মকালীন অঞ্চল যা প'কেল্লেহ গ্রাম থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। মিরান কেল্লা চূড়ার ঠিক নীচে অবস্থিত এই অঞ্চলটি। এখানে অনেকগুলো ঝরনা এবং জলপ্রপাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হল 'পাশমাকি শ্যাওলা জলপ্রপাত"। পাশমাকি জলপ্রপাতের বাইরেও এখানে রয়েছে পাশমাকি গুহার মতো ঐতিহাসিক এক প্রাকৃতিক নিদর্শন।
রমিয়নে রয়েছে বেশ কটি অবকাশ যাপনকেন্দ্র বা বিনোদনকেন্দ্র। তবে নীলবার্গ জঙ্গল ও ফোয়ারা অবকাশ যাপনকেন্দ্রটির নাম সবার আগে আসবে। রমিয়ন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে এই বিনোদন কেন্দ্রটি অবস্থিত। তবে কাঁচা মাটির রাস্তা মাড়িয়ে যেতে হবে ওই বিনোদনকেন্দ্রে। কেননা ওই রাস্তা কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। কৃষিকাজের প্রয়োজনীয় গাড়ি-ঘোড়া ওই পথে পরিচালিত হয়। এই চমৎকার এলাকার মাঝেই রয়েছে জঙ্গল এবং নীলবার্গ জলপ্রপাতসহ আরও বহু জলপ্রপাত ও ফোয়ারা। এখানকার ফোয়ারাগুলো থেকেই রমিয়ন এলাকার খাবার পানির চাহিদা মেটানো হয়।
নীলবার্গ জঙ্গলের কোনো কোনো অংশে এখানকার ঝর্ণাগুলোর বিভিন্ন শাখা পরস্পরে মিলিত হয়েছে। এভাবে উঁচু-নিচু জায়গা দিয়ে চলতে চলতে আবার অন্যান্য স্থানে বিভক্ত হয়ে গিয়ে ছোট ছোট দর্শনীয় জলপ্রপাত সৃষ্টি করেছে। নীলবার্গ বনানী ঋতুর বৈচিত্র্য অনুসারে তার পোশাক মানে রঙ পরিবর্তন করে। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রকমের পোশাক পরে সে। বসন্ত এবং গ্রীষ্মে তার নবজন্মঘটে। গাছের সবুজ আর ঝরনার শুভ্রতার ঐকতানে অনন্য সাধারণ এক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এই ঋতু নীলবার্গের নবজাগরণ ও ফুলের ঋতু। শরতের পাতা ঝরার সময় নীলবার্গ প্রাকৃতিক সোনালি রঙের লম্বা পোশাকটি পরে। এ সময় ভীষণ কমনীয় দেখায় তাকে। শীতকাল তো বরফের শুভ্রতার কাল। এ সময় সেই শুভ্রতার রঙে শ্বেত পোশাকে দারুণ শুভ্র হয়ে ওঠে সমগ্র বন। বনের রঙের সাথে তখন ঝরনার রঙও একাকার হয়ে যায়।
নীলবার্গ ঝরনার একটু উপরে দুটি পাহাড়ের মাঝখানে 'জোজাক' নামক একটি জলপ্রপাত রয়েছে। নয়নাভিরাম সবুজ শ্যামল বনানীর মাঝখানে প্রপাত অসম্ভব সুন্দর একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য তৈরি করেছে। এই জলপ্রপাত থেকে নীলবার্গ ঝরনার দূরত্ব পায়ে হেঁটে গেলে এক ঘন্টারও কম। পুরো পথটিই প্রবহমান সুন্দর নদী তীর দিয়ে গড়ে উঠেছে। ওই পথ ধরে চলতে চলতে আরও বহু জলপ্রপাতের দেখা মিলবে। রমিয়নের অবাক করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা আমরা যেটুকু বললাম সেটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। রমিয়নের পূর্বে ঘন বনের মাঝে আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জলপ্রপাত রয়েছে। এগুলো চমৎকার প্রাকৃতিক এক নিদর্শন সৃষ্টি করেছে।
এখানে 'সোরখেহ কেমার জলপ্রপাত' কমপ্লেক্স রয়েছে। এই কমপ্লেক্সটি রমিয়ন শহরের তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। কমপ্লেক্স এর সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটি আটাশ মিটার উঁচু। সোরখেহ কেমারের দিকে যেতে আটটিরও বেশি জলপ্রপাত পড়বে। প্রথম জলপ্রপাতটির উচ্চতা প্রায় তেইশ মিটার। আধা ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে আরও তিনটি সুন্দর জলপ্রপাত রয়েছে। এগুলো সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। গোলেস্তানের অনন্য সাধারণ বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রমিয়ন-শাহরুদ সড়কের কথা না বললেই নয়। এই রাস্তাটি ইরানের একটি সবুজ সড়ক এবং এটি রমিয়ন শহরের দক্ষিণে অবস্থিত।
রমিয়ন-শাহরুদ সড়কের কথা বলছিলাম। এই সড়কের দৈর্ঘ্য এক শ কিলোমিটার। সড়কের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য প্রত্যেক দর্শকের চোখকেই মুগ্ধ করে। এই রুটে গাড়ি চালানোর আনন্দই অন্যরকম। ভ্রমণের ক্লান্তি একেবারেই অনুভূত হয় না বরং ভ্রমণকারীকে খুবই প্রাণবন্ত করে তোলে। চলার পথে মাঝে মাঝেই পড়বে পরিষ্কার ঝর্ণা। বিশ্রামের জন্যও রয়েছে উপযুক্ত এলাকা। এসব সুযোগ-সুবিধা এই রাস্তাটিকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
রমিয়ন থেকে আটাশ কিলোমিটার দক্ষিণে রমিয়ন-শাহরুদ স্টেপ সড়কে জঙ্গল এবং তুষারাবৃত ঠাণ্ডা উচ্চতায় ওলাঙ পার্বত্য চূড়া অবস্থিত। উর্বর চারণভূমির এই অঞ্চলটি সবসময়ই ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। শীতল বাতাসের হিম হিম ছোঁয়া সকল পর্যটককে স্বাগত জানায়। ওলাং ফরেস্ট রমিয়নের স্থলভাগ থেকে দুই হাজার আট শ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই অঞ্চলটি বছরের অর্ধেকটা সময় তুষারে আবৃত থাকে। গ্রীষ্মকালেও আবহাওয়া শীতল থাকায় পর্যটকদের কাছে এটি অন্যতম প্রিয় একটি ভ্রমণের স্পট। ওলাঙ শীতকালে স্কী-সহ শীতের বিভিন্ন খেলার জন্য খুবই উপযোগী। তাখতে বদু নামে এখানে একটি প্রান্তর রয়েছে। বরফাচ্ছিত সর্পিল পথগুলোর সৌন্দর্য দূর থেকেও দর্শকদের আকৃষ্ট করে। #
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।