জুলাই ০৭, ২০২২ ২১:১৬ Asia/Dhaka

গত আসরেও আমরা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সময়ের অভাবে শহরটি ঘুরে ফিরে দেখার সুযোগ হয় নি। আজকের আসরে আমরা এই বজনুর্দ্ শহরটি দেখার মধ্য দিয়ে উত্তর খোরাসান প্রদেশের সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচিত হবার চেষ্টা করবো।

বজনুর্দ্ শহর উত্তর খোরাসান প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং এই শহরটিই কেন্দ্রিয় প্রাদেশিক শহর। শহরের আবহাওয়া মোটামুটি অর্ধ নাতিশীতোষ্ণ। শীতকালে বেশ ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে আবার গ্রীষ্মের সময় আবহাওয়া খুব বেশি গরম হয় না, ঠাণ্ডা এবং উপভোগ্য আবহাওয়া থাকে তখন। বজনুর্দ্ শহরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি এবং বরফের নিয়ামত বর্ষিত হয়। যেহেতু পার্বত্য এলাকা সে কারণে বজনুর্দের তাপমাত্রা সবসময়ই নীচে থাকে। এখানে বেশ কটি সুন্দর নদী রয়েছে। কয়েকটি নদীর নাম করা যেতে পারে যেমন:আতরাক নদী, আরকান নদী, ফিরোজে, শিরিন দাররে, ফারতুত, কোররে চয়ি, সোম্বর, সামালকন এবং দারবান্দ নদী। এই নদীগুলো নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা বজনুর্দ্ শহর সম্পর্কে আজকের আসরে কথা বলার সূচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

অসংখ্য নদীর উপস্থিতির ফলে বন-বনানী আর চারণভূমিগুলো উর্বর হয়ে উঠেছে। এগুলো শহরের সৌন্দর্য যার পর নাই বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এতোসব সৌন্দর্যের ভেতর উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো এখানকার মোফাখখাম প্রাসাদ। উত্তর খোরাসানের শাসক সর্দার মুফাখখামের নামে পরিচিত এই প্রাসাদটি কাজার শাসনামলে নির্মিত প্রদেশের সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় প্রাসাদ। শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই রাজকীয় প্রাসাদ। সর্দার মুফাখখামের নামে পরিচিত ইয়ার মোহাম্মদ খান শাদলুর আদেশে হিজরি তেরো শ শতকে প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল। তাঁর এবং তার পরিবারিক বাসভবন হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি। বিলাসবহুল এই ভবনটিতে দুটি বড় হল সহ চৌত্রিশটি কক্ষ রয়েছে। ভবনটির সম্মুখভাগ দক্ষিণমুখি। বিচিত্র মোজাইক, সাত রঙ টাইলস দিয়ে জ্যামিতিক নকশায় সুন্দরভাবে সজ্জিত করা হয়েছে প্রাসাদের ভেতর বাহির।

ইট এবং চকের কাজে সুসজ্জিত এই ভবনের প্রতিটি তলায় দুটি করে বারান্দা রয়েছে। বারান্দাগুলো ভবনের উত্তর এবং দক্ষিণদিকে।  পুরো বিল্ডিং জুড়ে ইট এবং সাত রঙের সুন্দর সুন্দর টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। ফিরোজা, হলুদ, গোলাপী, বেগুনি, সাদা, সবুজ, লাল এবং কালো ইত্যাদি রঙের টাইলসের কারুকাজ করা হয়েছে। প্রতিটি কলাম অনন্য সাধারণ নকশা এবং প্যাটার্নে সজ্জিত করা হয়েছে। বিল্ডিংয়ের বাইরের অংশে দুটি ডানাওয়ালা ফেরেশতার ছবি, মানুষের চেহারার পাশাপাশি ফুল, গাছপালা এবং পাখির চিত্র দিয়ে একটা প্রাকৃতিক আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ডিজাইন তেরো শতকের ডিজাইনের বৈশিষ্ট্য এবং জ্যামিতিক নকশার ঐতিহাসিক প্রামাণ্য তথ্য হয়ে রয়েছে। ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি ইরানের ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকার নয় শ বিরানব্বুই নম্বরে নিবন্ধিত হয়েছে। মোফাখখাম প্রাসাদ ভবনটি মেরামত ও সংস্কারের পর প্রদেশের বৃহৎ প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।

এই যাদুঘরে বেশ কয়েকটি আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে। এ অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন গোত্রের মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রীতি-প্রথা, পেশা, হস্তশিল্প ইত্যাদি প্রদর্শনীর জন্য একটা আলাদা বিভাগ রয়েছে। যাদুঘরের নৃতাত্ত্বিক বিভাগে তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণী ও গোত্র, বিভিন্ন পেশা এবং রীতি-নীতি-আচার-প্রথা। এছাড়া মূল যাদুঘরটিকে ইতিহাসের ভিত্তিতে পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটা হলো প্রাগৈতিহাসিক কাল বিভাগ, ঐতিহাসিক বিভাগ, ইসলামি যুগ বিভাগ, মুদ্রা ও কয়েন বিভাগ এবং মৃৎশিল্প বিভাগ। উত্তর খোরাসানের প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর মুফাখখাম প্রাসাদের উপরের তলায় অবস্থিত।

ঐতিহাসিক এই স্থাপনার দক্ষিণ অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। মোফাখখাম প্রাসাদের সবচেয়ে বড় অডিটোরিয়াম এটি। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন কালপর্বের ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো দেখলেই বোঝা যায় উত্তর খোরাসানের সংস্কৃতি ও সভ্যতা কতোটা প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ ছিল। আয়নাঘর নামে পরিচিত ভবনটি উত্তর খোরাসানের কাজার আমলের একটি বিশিষ্ট স্থাপনা। এই স্থাপনাটি এখন প্রাচীন নথিপত্র এবং পাণ্ডুলিপির জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কাজার শাসনামলে আয়নাঘর বিল্ডিংটি একটি বড় বাগানে অবস্থিত ছিল। এই ভবনটিতে কাজার আমলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে সর্দার মোফাখখামের অফিসিয়াল বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজাতির নেতাদের সাথে এবং কাজার আমলের অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে বৈঠক হতো। এর পাশাপাশি সামরিক, প্রশাসনিক এবং বিচার বিভাগীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপনের কাজে ব্যবহার করা হতো।

জানা যায় যে আয়না ঘরের স্থাপত্য ডিজাইন করেছিলেন মির্জা মেহেদি খানেশককি। তাঁর আরেক নাম হলো মুমতাহেনুদ দৌলা। তিনি ছিলেন প্রথম ইরানি স্থপতি যিনি প্যারিস স্কুল অফ আর্কিটেকচার থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ভবনের একটি হলের দেয়াল এবং ছাদ সুন্দরভাবে আয়নার কারুকাজ করা হয়েছে। এই কারণেই ভবনটিকে আয়নাঘর বলা হয়। আয়নাঘর ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছে। সময়ের স্বল্পতার কারণে আজ আর কথা বলার সুযোগ নেই। পরবর্তী আসরে আবারও কথা হবে ইনশাআল্লাহ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ