সেপ্টেম্বর ০১, ২০২২ ১৯:০৫ Asia/Dhaka

মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে।

মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই দুই নাম হল ওয়াআলি والّی এবং মুতাঅ'লি مُتَعَالِی

ওয়াআলি শব্দের অর্থ হল সাহায্যকারী ও অভিভাবক। আর মুতাঅ'লি শব্দের অর্থ হল উচ্চ, উচ্চতর বা ত্রুটিমুক্ত ইত্যাদি। মহান আল্লাহ সব উচ্চ বা উচ্চতর মর্যাদার অধিকারীরও উর্ধ্বে এবং তাদের সবার ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী।

ওয়াআলি শব্দের মূল বা উৎস হল ওয়ালি যার অর্থ যিনি ঘনিষ্ঠ বা খুবই কাছের কিংবা খুবই আপন। মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি খুবই ঘনিষ্ঠ। তিনি তাদের ভালোবাসেন, তাদের সাহায্য করেন। তিনি তাদের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের অভিভাবক, শাসক ও পৃষ্ঠপোষক। আসলে অস্তিত্ব জগতের সব নাম ও গুণ এই ওয়াআলি নামের আওতাভুক্ত।

পবিত্র কুরআনের ১৩ নম্বর সুরা তথা সুরা রাআদ-এর ১১ নম্বর আয়াতের শেষাংশে এই ওয়াআলি নাম ব্যবহার করে মহান আল্লাহ বলেছেন: এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

সুফিবাদী বিখ্যাত সুন্নি মনীষী মহিউদ্দিন আরাবির মতে ওয়াআলি ও ইমাম তাঁরাই যাদের ওপর নেতৃত্বের বা বেলায়াত-এর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। ইমামত ও বেলায়াত নিয়োগমূলক পদ। তাই বান্দাহদের মধ্যে ওয়াআলি ও অভিভাবক মহান আল্লাহরই নিয়োগকৃত। তাঁরা মহান আল্লাহর শাসন-ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করেন।

আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর (আ) মতে মুসলিম সমাজের ইমাম বা ওয়ালি হুকুমাত বা রাষ্ট্রীয় শাসন-ব্যবস্থার কর্ণধার তথা শীর্ষের ব্যক্তি এবং জনগণের বিষয়াদির দায়িত্বভার তার ওপর ন্যস্ত। ইমাম বা ওয়ালির অনুসারী হল জনগণ এবং তিনি জনগণের কর্মতৎপরতার নেতৃত্ব দানকারী। সমাজের সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ ঐশী বা খোদায়ি দায়িত্ব-কর্তব্য তিনি পালন করে থাকেন। বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো যাতে সম্মানিত থাকে তা দেখার দায়িত্ব ইমামের বা ওয়াআলির।  জনগণের ধর্মীয় ও পার্থিব সব কল্যাণের তদারক করাও তাঁর দায়িত্ব।

আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ. মুসলমানদের ইমাম বা নেতা হিসেবে তথা মহানবীর মনোনীত খলিফা হিসেবে বিশিষ্ট সাহাবিদের সমর্থন নিয়ে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি মিশরের গভর্নর হিসেবে মালিক আশতারকে নিয়োগ দিয়ে তাঁর প্রতি লিখেছিলেন: … আমি  তোমাকে মিশর অঞ্চলকে পরিচালনার জন্য পাঠাচ্ছি। উদ্যানপ্রেমিক মালিক যেমন তার বাগানের চারাগুলোর যত্ন নেয় তুমিও তেমনি এই দেশের মানুষকে জীবিত করবে এবং তাদের ব্যক্তিত্বকে দুনিয়া নামক করিডোরের মধ্যে সফল করবে, তাদেরকে নানা ধরনের দুর্গতি, অনৈতিক স্বভাব ও অপছন্দনীয় অবস্থা থেকে মুক্তি দেবে। তুমি তাদের ওপর সে রকম রক্তপিপাসু হিংস্র পশুর মত হয়ো না  যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে এবং জনগণের জীবন ও মৃত্যু নিয়ে খেলা করে ও নিজেদের প্রতিপত্তি বা মোড়লিপনার বিকাশ ঘটাতে  জনগণের জীবনকে লোভনীয় সুখাদ্য মনে করে! অথচ জনগণের জীবন এই পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নুরের একটি বিচ্ছুরণ। যারা ক্ষমতা হাতে পেয়ে মানুষকে নিজের খাদ্য ভাবে তাদের ওপর অতীন্দ্রিয় বা অদৃশ্য জগতের প্রতিশোধ নেমে আসার আগেই তারা শিগগিরই বা দুদিন পরে নিজেদের মতই অন্য নেকড়ে বাঘদের খাবারে পরিণত হবে।... হযরত আলী আরও লিখেছেন: ..

প্রজাদের প্রতি দয়া,মমতা ও সহৃদয়তা প্রদর্শন করার অভ্যাস করো। মনে রেখো,প্রজারা দু’প্রকারের-হয় তারা তোমার দ্বীনি ভাই,না হয় তারা তোমার মতোই সৃষ্ট বান্দা। তাই তাদের মাথার ওপর লোভাতুর পশুর মতো দাঁড়িয়ো না। পশুরা মনে করে গোগ্রাসে গিলে ফেলাই যথেষ্ট। প্রজাগণের পদস্খলন হতে পারে-তারা ভুল করতে পারে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অবহেলা বশে ভুল করতে পারে। তাই তাদের প্রতি ক্ষমা ও অনুকম্পা প্রদর্শনে কার্পণ্য করো না। কারণ তুমিও তো চাও আল্লাহ যেন তাঁর সর্বোচ্চ ক্ষমা তোমার প্রতি প্রদর্শন করেন। মনে রেখো,তুমি তাদের নেতা, আর তোমার ওপর হলেন দায়িত্বশীল ইমাম (ওআলী) এবং আল্লাহ হলেন তার ওপর যিনি তোমাকে নিয়োগদান করেছেন। আল্লাহ চান যে,তুমি তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থাপনা কর এবং এ দায়িত্বের মাঝেই তিনি তোমার বিচার করবেন।

মহান আল্লাহর নাম মুতাঅ'লি শব্দের অর্থ হল উচ্চ, উচ্চতর বা ত্রুটিমুক্ত ইত্যাদি। মহান আল্লাহ সব উচ্চ বা উচ্চতর মর্যাদার অধিকারীরও উর্ধ্বে এবং তাদের সবার ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী। সব ধরনের গুণ, মর্যাদা, ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি প্রযোজ্য। যেমন, যে যত বড় আলিম বা জ্ঞানীই হন না কেন মহান আল্লাহর অসীম জ্ঞানের তুলনায় তা তুচ্ছ। তদ্রূপ দয়ালুদের মধ্যেও মহান আল্লাহর দয়া ও করুণা এবং ক্ষমাশীলতা যে কত বেশি ব্যাপক বা উঁচু তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না কোনোকালেও। জানা ও অজানা সব ক্ষেত্রেই মহান আল্লাহর উচ্চতা ও শ্রেষ্ঠত্ব কত বেশি তা কেউ কল্পনাও করতে সক্ষম নয়। সুরা আসরার ৪৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ সুব্‌হানা ও তায়ালি শব্দ ব্যবহার করে  বলেছেন: কেউ আল্লাহর ওপর কর্তৃত্ব করতে পারে এমন কিছু থেকে পবিত্র মহান আল্লাহ এবং তার সম্পর্কে যা বলা হয় তার চেয়েও আল্লাহ অনেক অনেক বা কল্পনাতীত মাত্রায় উচ্চ বা বড়। মানুষের মধ্যে যারা উন্নত প্রকৃতির বা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী তারা আরও উচ্চতর আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত হতে পদক্ষেপ নেন। কারণ তারা জানেন যে আল্লাহর কাছে আরও অনেক অনেক উচ্চতর মর্যাদার অশেষ আসন রয়েছে।

আসলে উন্নতির সোপানের রয়েছে অসংখ্য সিঁড়ি। এইসব সিঁড়ি বেয়ে মানুষ অনেক উপরে উঠতে সক্ষম। এ জন্যই মহানবী-সা. মহান আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞানে অন্য সবার চেয়ে উপরে থাকা সত্ত্বেও  প্রায়ই সুরা ত্বাহার ১১৪নম্বর আয়াতের এ বক্তব্য দোয়া হিসেবে পাঠ করতেন যেখানে বলা হয়েছে: রাব্বি জিদনি ইলমান অর্থাৎ হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন! যারা মহান আল্লাহর মুতাঅ'লি নামের রঙ্গে রঙিন তারা অবশ্য আল্লাহর বান্দাহদের সঙ্গে আচরণে অত্যন্ত বিনম্র ও অহংকারবিহীন। মহানবী-সা. বলেছেন যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনম্র থাকে মহান আল্লাহ তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। আল্লাহ তাঁকে মানুষের চোখে বড় করেন আর সেই ব্যক্তি নিজেকে ছোট মনে করেন।#

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।