মার্চ ২৩, ২০২৩ ১৫:৫১ Asia/Dhaka

খোদায়ি রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের অশেষ ফল্গুধারায় অবগাহনের মাস পবিত্র রমজান। খোদায়ি নুরের দরিয়ায় সিনান করার এ মাস শুরু হওয়া উপলক্ষে মহান আল্লাহকে জানাচ্ছি অশেষ শুকরিয়া ও বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি আন্তরিক মুবারকবাদ। আমাদের জীবনে আবারও এমন একটি মাস উপহার দেয়ায় রাহমানুর রাহিম আল্লাহ'র অশেষ প্রশংসা জ্ঞাপন করছি।

আত্মশুদ্ধি, আত্ম-সংশোধন ও আত্ম-উন্নয়ন এবং ত্যাগ-তিতিক্ষার মহিমায় ভাস্বর পবিত্র এ মাসে আমরা সবাই মহান আল্লাহর বিশেষ মেহমান। আধ্যাত্মিক অজস্র খাদ্যের এই নুরানি ভোজসভার নানা কল্যাণ তুলে ধরে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও সর্বোত্তম আদর্শ এবং বিশ্ব-জগতের খোদায়ি রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন: 

“হে মানুষ! নিঃসন্দেহে তোমাদের সামনে রয়েছে আল্লাহর বরকতপূর্ণ মাস। এ মাস বরকত, রহমত বা অনুগ্রহ ও ক্ষমার মাস। এ মাস মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন, এর রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত এবং এর ঘন্টাগুলো শ্রেষ্ঠ ঘন্টা। এ মাস এমন এক মাস যে মাসে তোমরা আমন্ত্রিত হয়েছ আল্লাহর মেহমান হতে তথা রোজা রাখতে ও প্রার্থনা করতে। তিনি তোমাদেরকে এ মাসের  ভেতরে সম্মানিত করেছেন। এ মাসে তোমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস মহান আল্লাহর গুণগান বা প্রশংসা বা জিকরের সওয়াবের সমতুল্য; এ মাসে তোমাদের ঘুম প্রার্থনার সমতুল্য, এ মাসে তোমাদের সৎকাজ এবং প্রার্থনা বা দোয়াগুলো কবুল করা হবে। তাই মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক হৃদয়ে ও পাপ আর কলুষতা হতে মুক্ত পবিত্র চিত্তে প্রার্থনা করো যে তিনি যেন তোমাদেরকে রোজা রাখার এবং কোরআন তিলাওয়াতের তৌফিক দান করেন। নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি প্রকৃতই দূর্ভাগা বা হতভাগ্য যে রমজান মাস পেয়েও মহান আল্লাহর ক্ষমা হতে বঞ্চিত হয়। এ মাসে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাধ্যমে কিয়ামত বা শেষ বিচার দিবসের ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কথা স্মরণ কর। অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্রদেরকে সাহায্য কর ও সদকা দাও।’

মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল খোদায়ি আতিথ্যের মাসের তথা রমজানের রোজার গুরুত্ব  প্রসঙ্গে আরও বলেছেন:  ‘রমজান মাসে বয়স্ক ও বৃদ্ধদেরকে সম্মান কর এবং শিশু ও ছোটদেরকে আদর কর। রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা কর। তোমাদের জিহ্বাকে অন্যায্য বা অনুপযোগী কথা বলা থেকে সংযত রাখ, নিষিদ্ধ বা হারাম দৃশ্য দেখা থেকে চোখকে আবৃত রাখ, যেসব কথা শোনা ঠিক নয় সেসব শোনা থেকে কানকে নিবৃত রাখ। এতীমদেরকে দয়া কর যাতে তোমার সন্তানরা যদি এতীম হয় তাহলে তারাও যেন দয়া পায়। গোনাহর জন্যে অনুতপ্ত হও ও তওবা কর এবং নামাজের সময় মোনাজাতের জন্যে হাত উপরে তোলো, কারণ নামাজের সময় দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়, এ সময় মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান, এ সময় কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন, কেউ তাঁকে ডাকলে তিনি জবাব দেন, কেউ কাকতি-মিনতি করলে তার কাকতি মিনতি তিনি গ্রহণ করেন।’

খুতবায়ে শাবানিয়্যা নামে খ্যাত ভাষণে মহানবী (সা) আরও বলেছেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের বিবেককে নিজ কামনা-বাসনার দাসে পরিণত করেছো, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে একে মুক্ত করো। তোমাদের পিঠ গোনাহর ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে আছে, তাই সিজদাগুলোকে দীর্ঘায়িত করে পিঠকে হালকা করো। জেনে রাখ মহান আল্লাহ নিজ সম্মানের শপথ করে বলেছেন, রমজান মাসে নামাজ আদায়কারী ও সিজদাকারীদেরকে শাস্তি বা আজাব দিবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদেরকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।’
মহান আল্লাহ আমাদেরকে বিশ্বনবী (সা)’র এইসব উপদেশ মেনে চলার তৌফিক দান করুন। 

রমজানের রমজ শব্দটির অর্থ হল দহন। মানব জীবনে অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার, বদমেজাজ, পেটুকতা, হিংসা, লোভ, কার্পণ্য ও অলসতার মত কুপ্রবৃত্তিগুলোর বিনাশ বা দহন জরুরি। রোজা বা সওম-এর অর্থ হল সব কদাচার থেকে বিরত থাকার সংযম সাধনা। পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে রোজা সম্পর্কে বলা হয়েছে: 'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা খোদাভীতি বা তাকওয়া অর্জন করতে পার।' (২:১৮৩) 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ