মার্চ ২৪, ২০২৩ ১৫:৫৩ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা পবিত্র রমজানের রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.)'র একটি বিখ্যাত ভাষণের কিছু অংশ তুলে ধরেছিলাম।

ওই একই ভাষণে মহানবী (সা.) বলেছেন,হে মানুষেরা! এই মাসে সৎ আচরণের চর্চাকারী  তথা সুন্দর আচরণকারীরা কিয়ামতের দিন পুলসিরাত পার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে। আর যারা অসৎ তাদের পাগুলো সেদিন পিছলে যেতে চাইবে। যে কেউ এই মাসে তার অধীনস্থ কর্মীদের কাজের বোঝা কমিয়ে দেবে আল্লাহ পরকালে তার হিসাব-নিকাশ সহজ করবেন এবং যে কেউ এই মাসে অন্যকে বিরক্ত করবে না মহান আল্লাহ তাকে কিয়ামত বা বিচার-দিবসের দিন নিজের ক্রোধ হতে নিরাপদ রাখবেন। যে কেউ রমজান মাসে কোনো এক ইয়াতিমকে সম্মান করবে ও তার সঙ্গে দয়ার্দ্র আচরণ করবে মহান আল্লাহও বিচার-দিবসে তার প্রতি দয়ার দৃষ্টি দেবেন। যে এই মাসে নিজের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো আচরণ করবে, মহান আল্লাহও বিচার-দিবসে তার প্রতি দয়া করবেন, আর যে এই মাসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে আল্লাহও তাকে নিজ রহমত থেকে দূরে রাখবেন।'

বিশ্বনবী (সা.) রমজান প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, ''যে রমজানে এ মাসের জন্য নির্দেশিত বা নির্দিষ্ট ইবাদতগুলো করবে আল্লাহ তাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। যে এই মাসে ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত বা দায়িত্বগুলো পালন করবে তাকে অন্য মাসে ওই একই কাজের পুরস্কারের চেয়ে সাতগুণ বেশি পুরস্কার দেয়া হবে। যে রমজান মাসে আমার ওপর সালাওয়াত বা দরুদ পাঠাবে আল্লাহ বিচার দিবসে তার ভাল কাজের পাল্লা ভারী করে দেবেন, অথচ অন্যদের পাল্লা হাল্কা থাকবে।

যে এই মাসে পবিত্র কুরআনের মাত্র এক আয়াত তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে এত সওয়াব দেবেন যে তা অন্য মাসে পুরো কুরআন তিলাওয়াতের সমান হবে।

বিশ্বনবী (সা.) রমজান প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, হে মানুষেরা! বেহেশতের দরজাগুলো এই মাসে তোমাদের জন্য খোলা থাকবে। আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তা তোমার জন্য বন্ধ হয়ে না যায়। রমজান মাসে দোযখের দরজাগুলো বন্ধ রয়েছে, আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তা তোমার জন্য কখনও খুলে না যায়। এই মাসে শয়তানগুলোকে হাতকড়া পরিয়ে বন্দী রাখা হয়েছে, আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তারা তোমাদের ওপর কর্তৃত্ব করতে না পারে।"

বছরের বিভিন্ন সময়ে আমরা ব্যস্ত থেকেছি বস্তুগত নানা আয়োজনে এবং পার্থিব নানা ঝামেলা ও চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিয়ে।  ফলে আমাদের অসচেতন আত্মা খোদা-প্রেমের সড়ক থেকে বিচ্যুত হয়ে কেবলই নেমে গেছে নীচ থেকে নিচু পর্যায়ে। তাই দরকার ছিল এমন একটি সুযোগ আসার যেখানে আত্মাকে তুলে নেয়া যায় কেবলই উন্নতি আর উন্নয়নের দিকে তথা খোদার একান্ত সান্নিধ্য ও নৈকট্য অর্জনের দিকে এবং খোদার রঙ্গে আচার-আচরণ ও আত্মাকে রঙ্গিন করার দিকে। আর পবিত্র রমজান মাস আমাদের জন্য এনে দেয় সেই মহা-সুযোগ। মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের জন্য হৃদয় ও মনকে আল্লাহমুখী করে নামাজ আদায় করাও এক অতি বড় সুযোগ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্য ইবাদতগুলোতেও রয়েছে একই ধরনের সুযোগ। কিন্তু রমজানে খোদাপ্রেমের সুযোগগুলো অনেক বেশি প্রশস্ত এবং এ মাসে আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যমগুলোও খুব বেশি বৈচিত্র্যময়। যেমন, নফল নামাজ ছাড়াও প্রেমময় নানা মুনাজাত রমজানের বাড়তি কিছু আকর্ষণ।  খোদাপ্রেমের মোহনীয় সব সংলাপ শেখার এক দারুণ মাধ্যম এইসব দোয়া আর মুনাজাত যা মুসলমানদেরকে উপহার দিয়ে গেছেন বিশ্বনবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইত। এইসব দোয়ার মধ্যে রয়েছে দোয়ায়ে সাহার, দোয়ায়ে আবু হামজা সুমালি, দোয়ায়ে ইফতিতাহ, দোয়ায়ে জওশান কাবির ও দোয়ায়ে জওশান সাগির ইত্যাদি।

রোজার মাসে রোজা ও নামাজের মাধ্যমে বিশেষ নুরানিয়াত অর্জন ছাড়াও কুরআন তিলাওয়াতও এ মাসের নুরানি আকর্ষণের কিছু বাড়তি দিক।রমজানকে বলা হয় কুরআনের বসন্ত। আত্ম-গঠন ও চরিত্র সংশোধন এবং মনের ওপর জমে থাকা মরিচাগুলো অপসারণের মাধ্যমে নিজেকে আবারও পবিত্র করার ও সব জঞ্জাল আর পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করার মাধ্যম হল কুরআন অধ্যয়ন। পবিত্র রমজান মহান আল্লাহর দিকে সফর করার মাস।  তবে মনে রাখতে হবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সবচেয়ে বড় শর্ত হল গুনাহ-বর্জন। ফরজ ও নফলসহ আমরা যত বেশিই ইবাদত করি না কেন পাপ বর্জন করা না হলে কাঙ্ক্ষিত আত্ম-সংশোধন বা আত্মার উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ অসম্ভবই থেকে যাবে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আপনি যত ভালো ভালো ওষুধই খান না কেন পাশাপাশি যদি শরীরের রোগ-বর্ধক খাবার ও কাজগুলো আগের মতই করতে থাকেন তাহলে কোনো ওষুধেই আপনার রোগগুলো সারানো যাবে না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আশরাফুর রহমান/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ