মার্চ ২৮, ২০২৩ ১৯:৫৬ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ হলেন এমন এক সত্ত্বা যিনি ত্রুটিহীন, তুলনাহীন, শরিকহীন ও পবিত্র। মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব-অহংকার –এসবই নজিরবিহীন। মহান আল্লাহর সত্ত্বাকে বোঝা অসম্ভব তবে তাঁর গুণবাচক নামগুলো তাঁর মহত্ত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা বা পরিচিতি তুলে ধরে।

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরেকটি নাম ওয়ারিস وارث । ওয়ারিস অর্থ অন্য কারো সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়া আত্মীয়তা বা বংশের সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব থাকার কারণে। কিন্তু মহান আল্লাহ'র ক্ষেত্র ওয়ারিস অর্থ সব কিছু তাঁর দিকে ফিরে আসাকে তথা মালিকানাকে বোঝায়। মহান আল্লাহ বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন ও যাদেরকে তিনি অস্থায়ীভাবে সম্পদ ও সন্তান ইত্যাদি যা কিছু দিয়েছেন তার সবই মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে বলে তিনিই এসবের ওয়ারিস। পবিত্র কুরআনে এই শব্দ সরাসরি তিনবার এসেছে। তবে মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত করে এই শব্দের মূল অংশের প্রয়োগযুক্ত যৌগিক নানা শব্দ পবিত্র কুরআনে এসেছে ১৫ বার।মহান আল্লাহ সুরা হিজর-এর ২৩ নম্বর আয়াতে নিজেকে ওয়ারিস হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, আমিই জীবনদান করি, মৃত্যু দান করি এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। -

আমরা যে যত সম্পদ বা যা কিছুরই অধিকারীই হই না কেন প্রকৃত ও চূড়ান্ত মালিকানা বা নিরঙ্কুশ মালিকানার অধিকারী হলেন আল্লাহ। অন্যদের মালিকানা হচ্ছে নির্ভরশীল ও অস্থায়ী মালিকানা।  আমরা বা সৃষ্টিকুল জীবনযাপনের নানা সামগ্রী কিছুকালের জন্য ভোগ করলেও সব কিছুই শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে। এ জন্যই পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ বলেছেন: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ থেকে এসেছি তথা আমাদের প্রকৃত মালিক হলেন মহান আল্লাহ ও নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাব।-মহান আল্লাহ তাঁর  উত্তম প্রতিনিধি ও বন্ধু বা প্রিয় ব্যক্তি অর্থেও ওয়ারিস শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন, সুরা আরাফ-এর ১২৮ নম্বর আয়াতের একাংশে মহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বা ওয়ারিস বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। - এ ছাড়াও সুরা কাসাস এর পঞ্চম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: দেশে যাদেরকে দুর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার।

মহান আল্লাহ সুরা আ'রাফ-এর ১২৮ নম্বর আয়াতের প্রথমদিকে বলেছেন:  নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর।– এর অর্থ পৃথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হলেন আল্লাহ। এরপর বলা হয়েছে: তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বা ওয়ারিস বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।–এখানে এটাও স্পষ্ট করা হয়েছে যে যারা খোদাভীরু কেবল তারাই হবে পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতার অধিকারী। আর এটা তখনই বাস্তবায়ন হবে যখন পৃথিবীর মালিক বা ওয়ারিস কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে উত্তরাধিকার দান করবেন। অর্থাৎ এখানে খেলাফতের প্রশ্ন এসে যায়। অন্য কথায় যখন কেউ আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের তথা আল্লাহর খলিফার মর্যাদা অর্জন করবে তখন মহান আল্লাহর ক্ষমতার প্রকাশ হিসেবে তিনি পৃথিবীর উত্তরাধিকার লাভ করবেন।মহান আল্লাহ ভালো ও পছন্দনীয় কাজের জন্য উৎসাহ দিতে পবিত্র কুরআনে পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন যদিও সেই কাজে মানুষের নিজেরই কল্যাণ রয়েছে। অথচ দুনিয়ার রীতি হল মানুষ যখন অন্যের জন্য কাজ করে কেবল তখনই পারিশ্রমিক ও পুরস্কার বা প্রতিদান পায়।

 

সব সুন্দর নামই মহান আল্লাহর

 

মহান আল্লাহ সুরা মুমিনুনের ১১ নম্বর আয়াতে বলেছেন: তারা তথা (মুমিনরা তাদের নানা ভালো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কারণে) শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে।- এখানে এটা স্পষ্ট যে মানুষের ভালো কাজ ও ভালো গুণের কারণে আল্লাহর কোনো ধরনের কিছু লাভ হয় না কিংবা কিছু বাড়ে না বা কমে না। তাই মুমিন মানুষ বেহেশত অর্জন করার পর বলবে: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির উত্তরাধিকারী করেছেন। আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করার সুযোগ পাব। মেহনতকারীদের পুরস্কার কতই চমৎকার। (আযযুমার, ৭৪) -এ আয়াত থেকে বোঝা যায় মানুষের ভালো কাজ ও ভালো গুণ আল্লাহ ও তার দাসদের মধ্যে সম্পর্ক বা নৈকট্যের মাধ্যম মাত্র। তা না হলে বেহেশতবাসীরা বলতেন যে, আল্লাহ আমাদেরকে পারিশ্রমিক দিয়েছেন বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি! বেহেশত উত্তরাধিকার, এটি পারিশ্রমিক নয়।

যারা মহান আল্লাহর ওয়ারিস নাম সম্পর্কে সচেতন তারা এটা বোঝেন যে পার্থিব জীবন ও সম্পদ চিরস্থায়ী নয়। আমাদের কাছে যা আছে তার মূল মালিক বা ওয়ারিস হলেন আল্লাহ। তাই তারা আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলে ও আল্লাহকে খুশি রেখে আল্লাহর জিনিস আল্লাহকে ফেরত দিয়ে পার্থিব ও পারলৌকিক মহাপুরস্কার অর্জন করেন। ইমাম হুসাইন-আ.কে বলা হয় সব নবীদের উত্তরাধিকারী। হযরত আদম-আ.'র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার হল খলিফা হিসেবে সেইসব নামের জ্ঞান যা ফেরেশতারাও অর্জন করতে পারেনি। তাই সব নবীরা হলেন হেদায়াতের প্রদীপ যা তাঁরা পরস্পরের কাছ থেকে পেয়েছেন উত্তরাধিকার হিসেবে। ইমাম হুসাইন-আ.ও এই আধ্যাত্মিক মিরাস বা উত্তরাধিকার পেয়েছেন পিতামহ ও পিতা ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। তাই জিয়ারতে ওয়ারিস নামক বিখ্যাত জিয়ারতে ইমাম হুসাইন-আ.কে হযরত আদম, নুহ, ইব্রাহিম, মুসা, ঈসা ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল তথা মুহাম্মাদ (সা)'র মত মহান নবীর ওয়ারিস হিসেবে সম্বোধন করে সালাম জানানো হয়। #

পার্সটুডে/ এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।