মুসলমানদের পরোক্ষ গ্বাউস হলেন মহানবীর (আ.) আহলে বাইতের শেষ সদস্য ইমাম মাহদি-আ.
আসমাউল হুসনা-৯৫ ( গ্বিয়'স নামের তাৎপর্য)
মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও একটি নাম গ্বিয়'স। এর অর্থ যিনি বিপদ বা দুর্যোগ কবলিত ব্যক্তির ফরিয়াদে সাড়া দিয়ে তাকে উদ্ধার করেন তথা ত্রাণকর্তা।
গ্বিয়'স-এর মূল শব্দটি হল গ্বাইস্ যার অর্থ বৃষ্টি। আরবিতে মাতা'র«مَطَر» বলতেও বৃষ্টিকে বোঝায়। তবে মাতা'র বলতে প্লাবন সৃষ্টির মত প্রবল বর্ষণকে বোঝায় সাধারণ বৃষ্টি নয়। অন্যদিকে গ্বাইস্ হচ্ছে কল্যাণকর বা উপকারী বৃষ্টি। গ্বাইস্ শব্দের অর্থ বৃষ্টি হওয়ার কারণ হল খরা-পীড়িত অঞ্চলে মানুষ বৃষ্টির জন্য কান্নাকাটি করে মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বর্ষণের আকুল আবেদন জানিয়ে থাকে। মহান আল্লাহর কাছে আকুল ফরিয়াদ জানানো হলে মহান আল্লাহ রহমত নাজিল করেন। এ কারণেই মহান আল্লাহ হলেন গ্বিয়'স। তাই মহান আল্লাহয় বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি কখনও হতাশ হতে পারেন না।
মহানবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল ডুবে যাওয়ার আগে ফেরাউন মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং সাহায্য চেয়েছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে কেনো রক্ষা করেননি? এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম রেজা-আ. বলেছেন, ফেরাউন এমন সময় আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল যে সময়ে তার মৃত্যু ছিল অত্যাসন্ন! এ সময়ে ঈমান আনার কোনো মূল্য নেই! উপরন্তু সে যখন দেখলো যে ডুবে যাচ্ছে তখন সে হযরত মুসার কাছে সাহায্য চায় যাতে তিনি তাকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন! আর হযরত মুসা ফেরাউনের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দেননি। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মহান আল্লাহ হযরত মুসাকে বলেছিলেন: হে মুসা! তুমি তো ফেরাউনের আকুল আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে বাঁচালে না! এর কারণ, তুমি তো তাকে সৃষ্টি করনি! আমি আমার সম্মানের শপথ নিয়ে বলছি, সে যদি আমার কাছে ফরিয়াদ করতো তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম!
মানুষ জীবনে অনেক সংকট ও সমস্যার শিকার হয়। বিপদ ও সংকটের চাপ অনেক সময় সহ্যের সীমানা ছাড়িয়ে যায়। আর এমন সময়ই মানুষ অত্যন্ত বিনম্র চিত্তে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য ফরিয়াদ জানায়। তাই মহান আল্লাহ হলেন চরম সংকটে নিপতিত হওয়া মানুষের সংকট মোচনের আকুল আবেদনে সাড়া দানকারী।
সাগরে প্রচণ্ড ঝড়ের শিকার জাহাজের যাত্রীরা কিংবা ভূপাতিত বা ধ্বংস হতে যাওয়া বিমানের যাত্রীরা কিংবা কঠিন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যখন ওই ভয়ানক অবস্থায় উপায়হীন হয় তখন তারা এই বাস্তবতা বুঝতে পারে যে এমন এক শক্তি আছে যিনি এ অবস্থায়ও তাদেরকে রক্ষা করতে পারেন। আর এই শক্তিই হলেন মহান আল্লাহ। তাই এমন চরম বিপদে মানুষ সাধারণত কেবল সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চায়। অবশ্য অনেক ব্যক্তি মহান আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসুল বা ইমামদের কাছেও সাহায্য চায় তাঁরা পূর্ণ মানব বলেই। যেমন, সুরা কাসাস-এর ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ হযরত মুসার কাছে তার একজন অনুসারীর সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ওই আয়াতে গ্বিয়'স শব্দের একটি রূপ ব্যবহার করে বলা হয়েছে:
'তিনি তথা মুসা শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবর। তথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেন। এদের একজন ছিল মুসার নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে মুসার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল।'
ওয়াহাবিরা মনে করে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চাওয়া যায় না বা কারো ওয়াসিলা বা মাধ্যমেরও শরণাপন্ন হওয়া যাবে না সাহায্যের জন্য। এ কাজ এক ধরনের ইবাদাত বলে তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে করা হলেই তা হবে শির্ক! অথচ শিয়া ও সুন্নি আলেমগণ পবিত্র কুরআনের নানা আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে নবী-রাসুল, ইমাম ও আল্লাহর ওলিদের মাধ্যম ধরে সাহায্য প্রার্থনাকে সন্দেহাতীতভাবে বৈধ বলে মনে করেন। ওয়াহাবিরা এটা লক্ষ্য করছে না যে যাঁদেরকে মাধ্যম ধরে সাহায্য প্রার্থনা করছেন সাহায্যপ্রার্থীরা, তারা এসব ক্ষেত্রে তাঁদেরকে কখনও মহান আল্লাহর বিপরীতে স্বাধীন শক্তি বা স্বাধীনভাবে ওইসব সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত বলে মনে করছেন না। ওই ব্যক্তিরা বরং মহান আল্লাহর নৈকট্য-প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব হিসেবে মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমেই ওইসব ক্ষমতা অর্জন করেছেন বলে সাহায্যপ্রার্থীরা মনে করেন।
'বিপদ থেকে মুক্তি বা সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ওয়াসিলা হিসেবে ধরার বিষয়ে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ সুরা নিসার ৬৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, তারা যখন নিজেদের ওপর জুলুম তথা পাপ করে তখন যদি তারা তোমার কাছে তথা মহানবীর (সা) কাছে আসে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও নবী (সা) যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে মহান আল্লাহকে তারা অবশ্যই তওবা কবুলকারী ও দয়ালু হিসেবে পাবে।'– এখানে পাপী ব্যক্তিদেরকে রাসুলের কাছে এসে তার মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানোর বিষয়টি স্পষ্ট! তাই পরোক্ষভাবে নবী-রাসুল, ইমাম ও আল্লাহর অলিরাও হচ্ছেন গ্বিয়'স বা গ্বাউস। তাদের শরণাপন্ন হয়ে ক্ষমা চাইলে মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। আমরা এটাও দেখি যে কোনো ধর্মীয় সমাবেশে প্রার্থনার সময় বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তিরা বলে থাকেন, হে আল্লাহ! এখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যার হাত আপনি পছন্দ করেন তাঁর দোয়া বা হাত তোলার ওয়াসিলায় আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও দোয়া কবুল করুন!
মোটকথা মহান আল্লাহ নিজেই নবী-রাসুল, ইমাম ও আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তিদেরকে অসহায় মানুষকে সাহায্য করার ও তাদের আকুল আবেদনে সাড়া দিয়ে তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। সব যুগেই তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান যুগে মুসলমানদের পরোক্ষ গ্বাউস বা ত্রাণকর্তা হলেন মহানবীর আহলে বাইতের শেষ সদস্য হযরত ইমাম মাহদি-আ.। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।